কুমিল্লায় ট্রেন লাইনচ্যুত-১৬ ঘণ্টা পর রেল চালু ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে

দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা পর ঢাকা ও সিলেটের সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে কুমিল্লায় কনটেইনারবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর এই অচলাবস্থা নেমে আসে। বাতিল করা হয় ১২টি ট্রেনের শিডিউল। বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে কয়েক হাজার যাত্রী।


গন্তব্যস্থলে যেতে না পারার পাশাপাশি টিকিট ফেরত দিতে গিয়েও যাত্রীদের পড়তে হয় অশেষ ভোগান্তিতে। অবশেষে লাইনচ্যুত কনটেইনার উদ্ধারের পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ের বিভাগীয় সিগন্যাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার সুশীল কুমার হালদারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কুমিল্লার ময়নামতি ও লালমাই স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে সোমবার রাতে কনটেইনারবাহী চারটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় রাত ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এদিকে এর আগে গতকাল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধূলি এবং সিলেটের উদ্দেশে মহানগর পাহাড়িকা ট্রেন। এসব ট্রেনের শিডিউল বাতিল করে রেল কর্তৃপক্ষ। সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা চট্টগ্রাম ছাড়ে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে। একইভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে মহানগর প্রভাতী ও মহানগর গোধূলী ছেড়ে আসার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয় এবং সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাতিল করে রেল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার শামসুল আলম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দুর্ঘটনার কারণে ট্রেনের শিডিউল রক্ষা করা যাবে না বলে এসব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। লাকসাম ও আখাউড়া থেকে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন লাইন সচলে কাজ করছে।'
এ ছাড়া সোমবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তূর্ণা নিশীথা, চট্টগ্রাম মেইল ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কারণে একপাশে আটকা পড়ে। অপর পাশে আটকা পড়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া তূর্ণা নিশীথা ও ঢাকা মেইল এবং সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া উদয়ন এক্সপ্রেস। এসব ট্রেনের যাত্রীদের আধা কিলোমিটার এলাকা হাঁটিয়ে গতকাল সকালে অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে তোলা হয়। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়।
এদিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রাম স্টেশনে এসেও ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনে বসে থাকার পরও ট্রেন না ছাড়ায় ৯টার পর জানতে পারে শিডিউল বাতিল করা হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, সোমবার রাতে দুর্ঘটনা ঘটলেও সকাল ৭টায় ট্রেন ছাড়ার সময় জানানো হয়নি। এ ছাড়া ঘোষণা অনুযায়ী ট্রেনের টিকিট ফেরত দিতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কাউন্টারে টাকা না থাকায় টিকিটের টাকা ফেরত পেতে বিলম্ব হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্টেশন ম্যানেজার শামসুল আলম বলেন, 'একসঙ্গে অনেক যাত্রী ট্রেনের টিকিট ফেরত দেওয়ায় সাময়িক কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে সব যাত্রীকে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ পরবর্তী তারিখের টিকিট নিয়েছেন।'
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে প্রাথমিকভাবে কিছু বলতে পারেননি তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) শাহ ছুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, 'অতিরিক্ত তাপমাত্রা বা অতিরিক্ত লোডের (ওজন) কারণে রেললাইন বেঁকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ তদন্তে বেরিয়ে আসবে।'

No comments

Powered by Blogger.