অভিমত ভিন্নমত

সোনালি আঁশের দিনবদল হবে কি? সোনালি আঁশের দেশ বাংলাদেশ। অথচ সেই সোনালি আঁশ চলে গিয়েছিল বিলুপ্তির পথে—কিন্তু আমরা আবার স্বপ্ন দেখছি। বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম পাটের জিন-নকশা উন্মোচন করে উন্মুক্ত করেছেন স্বপ্নের দুয়ার। অর্জন করেছেন বিরাট সাফল্য।


তাঁর এই সাফল্য আজ পাটের সম্ভাবনা বিস্তৃতির মাধ্যমে হারানো গৌরব আবার ফিরে পাওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এ সবই আমাদের জন্য এক আনন্দ।
আমাদের দেশের জমি পাটের ফলনের উপযোগী। আর তাই পাটের ফলনের ওপর আমাদের অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পাটবিষয়ক যেকোনো উন্নয়নে তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিতান্ত জরুরি। কৃষিমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে মাকসুদুল আলমের গবেষণা এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছেন। আমরা এই প্রয়াস আর এই সাফল্যকে অভিবাদন জানাই।
পাটজাত পণ্য পরিবেশবান্ধব। পরিবেশ বিষয়ে যেখানে সারা বিশ্বের মানুষ সচেতন হচ্ছে, সেখানে পাট খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রচুর। এ জন্য পাটশিল্পের হূতগৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য এ শিল্প বিষয়ে সরকারের নীতির পরিবর্তন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
পণ্যের মোড়কে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক—এই উদ্যোগও অত্যন্ত কার্যকর ও প্রশংসনীয়। পাটজাত পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করবে নানাভাবে, বাড়াবে কৃষকের আয়, তৈরি হবে কর্মসংস্থান, আসবে বৈদেশিক মুদ্রা।
তাই শুধু পণ্যের মোড়কে নয়, অন্য যেসব ক্ষেত্রে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার সম্ভব তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব দায়িত্ব সরকারের একার নয়, আমাদের সবার। সবার মধ্যে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর আগ্রহ তৈরি করতে হবে। তবেই ঘটবে পাটবিষয়ক সত্যিকার দিনবদল।
বন্দনা আমীর, উত্তরা, ঢাকা।

২.
পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের যুগান্তকারী কাজ সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের অভিবাদন জানাই। কলাকৌশল, মেধায় আমরা এগিয়ে থাকলেও অর্থনৈতিক জোগান এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের মেধা কাজে লাগানোর সুযোগ তেমন ঘটে না। ঐকান্তিকভাবে মোবারকবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে। পত্রিকা মারফত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীকে খুঁজে দেশে ফিরিয়ে আনার যে তাগিদ মতিয়া চৌধুরী অনুভব করেছেন, সেখানেই তাঁর দেশপ্রেম এবং মূল্যবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীও যে ব্যাপারটি সঠিকভাবে অনুধাবন এবং মূল্যায়ন করেছেন সেটাও গভীরভাবে বিবেচনার দাবি রাখে। যুগপৎ এ ধরনের সহযোগিতা না পেলে বিজ্ঞানীদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো কতটা সম্ভব হতো তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আমাদের রাষ্ট্রপরিচালকেরা যদি সর্বদা এ পথে চলেন, আমার বিশ্বাস, মেধা বিকাশের পথ আরও প্রশস্ত হবে নিঃসন্দেহে। আমাদের দেশে আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, সেগুলোর ওপরেও এ ধরনের গবেষণা জরুরি।
স্বল্প কৃষিজমির ওপর অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজম্মের জন্য খাদ্য জোগান রীতিমতো চ্যালেঞ্জ রূপে আমাদের দ্বারে উপনীত। বর্তমানেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। আমাদের দেশে বর্তমানে উৎপাদিত ধানের প্রচলিত জাতগুলোর (উফশী বা স্থানীয়) জীবনচক্রের ব্যাপ্তি ১২০ থেকে ১৫০ দিন। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, কৃষকের সক্ষমতা, প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় উৎপাদন আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে রাস্তাঘাট, শিল্প-কারখানা আর অবকাঠামো নির্মাণে। এ অবস্থায় সত্যিই এক ভয়ঙ্কর খাদ্যসংকট অপেক্ষা করছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজম্মের জন্য।
তাই আমাদের অনুসন্ধান চালাতে হবে, উচ্চফলনশীল ধানগুলোর জীবনচক্রের ব্যাপ্তি ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে আনা যায় কি না! তাহলে দেশের বৃহত্তর এলাকায় বছরে একই জমিতে ধানের পর পর তিনটি ফসল করা সম্ভব হবে। এটা করা সম্ভব হলে দেশে খাদ্যের মোট উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
উদ্দীপ্ত তরুণ বিজ্ঞানীরা পাটের ক্ষেত্রে যেভাবে সফল হয়েছেন, ধানের ক্ষেত্রেও একইভাবে সফল হবেন নিঃসন্দেহে। পাট গবেষণায় আমাদের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা অন্য আরও বহু ক্ষেত্রে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, যেভাবে পাটের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের সংগঠিত করে অসাধ্য সাধ্য করতে সহায়তা করেছেন, তেমনিভাবে ধানের জীবনচক্রের ব্যাপ্তি কমিয়ে আনতেও বিজ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষকতা করবেন। এ লক্ষ্যে আমরা সফল হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তথা খাদ্য নিরাপত্তায় আর কোনো বাধাই থাকবে না।
মো. নজরুল ইসলাম খান
মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞানী।
nikhan5594@yahoo.com

মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধা!
২৬ জুন অনুষ্ঠেয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের আগে একটি বিষয়ের ফয়সালা হওয়া উচিত। সেটি হলো, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এই নির্বাচন হবে, না ভুয়া তালিকার ভিত্তিতে।
মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধা বাদ দেওয়ার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও তা কার্যকর হয়নি। জোট সরকারের আমলে প্রকাশিত গেজেটে ৫০ হাজার অমুক্তিযোদ্ধাকে তালিকায় ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার কিছু অনিয়মের কথা তুলে ধরছি। তালা উপজেলায় খসড়া তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৬৫ জন। এর মাঝে ১৩৫ জনই অমুক্তিযোদ্ধা। এদের মাঝে তিনজন রাজাকারও আছেন। আশাশুনি উপজেলায় ৩৪২ জন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যার মাঝে অমুক্তিযোদ্ধা ১৬৫। মুক্তিযোদ্ধা হাজি আবুল হোসেন গত নভেম্বরে উপজেলার অমুক্তিযোদ্ধার তালিকা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে জমা দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বাধীনতার পর এ উপজেলার কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৬৪ জন। এর মাঝে অমুক্তিযোদ্ধা ৫০ জন। তিনজন রাজাকারও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। শ্যামনগর থানায় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১৯৬ জন। এর মাঝে অমুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৫ জন। দেবহাটা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা ২৯৫ জন, যাঁর মাঝে অমুক্তিযোদ্ধা ৫০ জন। কলারোয়া থানায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকারও প্রায় অর্ধেক অমুক্তিযোদ্ধা। এসব তথ্য কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে জানানোর পরও ব্যবস্থা না নেওয়া দুঃখজনক। অমুক্তিযোদ্ধাদের ভোটে কোনো নির্বাচন হলে কি সেটি মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল হবে, না অন্য কিছু?
মো. খলিলুর রহমান
নৌ-কমান্ডো ও গবেষক, সাতক্ষীরা।

ঘটনা ক্ষুদ্র কিন্তু তুচ্ছ নয়
বিশ্বকাপ ফুটবলের জোয়ারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বন্যা বইছে। নিজেদের ফুটবল দল না থাকুক, ফেবারিট দলের স্বপক্ষে সমর্থকগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশে হয়তো একটিও গ্রাম পাওয়া যাবে না, যেখানে বিশ্বকাপ ফুটবলের সমর্থকগোষ্ঠীর দেশের পতাকা উড়ছে না।
বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা শুরুর পর আমাদের সমাজজীবনের অনেক চিত্রই বদলে গেছে। শিক্ষায়তনগুলোতে যে পাবলিক পরীক্ষা হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজ উদ্যোগে আয়োজিত পরীক্ষাগুলো খেলার আগে বা পরে নির্ধারণ করা হয়েছে। খানিকটা হলেও বাজার-হাটে এর প্রভাব পড়ছে। দোকানপাট খেলার সূচি অনুসরণে খোলা-বন্ধ রাখার একটা অলিখিত সংস্কৃতি অনুসরণ করছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে রিকশাওয়ালা পর্যন্ত এই সীমানার মধ্যে আটকে যাবে।
কেউ কেউ কদাচিৎ কী মনে করে ঢাউস আকারের (কোথাও কোথাও এর আকার ৫০ গজেরও অধিক) বিদেশি দলের পতাকার ওপর ব্যাকরণ-বিহীন মাপের ছোট্ট একটি বাংলাদেশের পতাকা বসিয়ে দিয়েছে। এটা বিসদৃশ এবং বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। বাংলাদেশের পতাকার এই দুরবস্থা দেখে একজন বিদেশি পর্যটক বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চাইলেন। জন পল নামের এই ভদ্রলোক জার্মানির বাসিন্দা। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কূটনৈতিক মিশন ছাড়া ভিন দেশের পতাকা ওড়ানো তোমার দেশে নিয়মসিদ্ধ কি না? সরকারের কি এতে সম্মতি আছে? আমি জানি না। এ আমার অজ্ঞতাই বলব। তবে আমি সাধারণভাবে যতটা বুঝি তাতে এটি গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ।
ভিন দেশের পতাকা ওড়ানোর এ সংস্কৃতি আমাদের পতাকার গৌরবকে যে ম্লান করছে, তা বলাই বাহুল্য। এ বছরের ২৩ মে মুসা ইব্রাহীমরা যখন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষদেশে লাল-সবুজের সমীকরণে তৈরি বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশকে খানিকটা হলেও গৌরবান্বিত করে তুলে ধরেছেন, সেই প্রিয় পতাকার এ ধরনের অমর্যাদা কারও কাছেই নিশ্চয় কোনো গ্রহণযোগ্য আবেদন নিয়ে আসবে না। নিজেদের স্বাতন্ত্র্য আর পরিচয়কে সমুন্নত করতে পারস্যের অ্যাকেনিয়ন শাসকেরা খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে এই পতাকা উড্ডীনের রীতি বিশ্বে সূচনা করে। এক টুকরো কাপড় দিয়ে তৈরি একটি জাতীয় পতাকা তো বস্ত্রখণ্ড মাত্র নয়। তা তো একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা আর অহংকারের প্রতীক। সবুজ জমিনের লাল সূর্যের ওই পতাকা দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দেশটির বড় পরিচয়ের স্মারক। গোটা জাতির এ তো পবিত্র আমানত। উত্তেজনাকর এই বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশও শরিক হোক। কিন্তু তাই বলে দেশের মানসম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে নয়।
স্বাধীনতার পর চার দশক সময় কেটে গেল। স্বাধীনতার অন্তর্নিহিত সত্যের কথা এখনো দেশের সাধারণ মানুষেরা জানে না, বোঝে না। দেশকে কী করে ভালোবাসা যায়, তা তাদের জানানো হয়নি। সে দায়িত্ব তো দেশের সমাজপতি, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, সরকার, সবার। আমরা সে দায়িত্ব কেউই পালন করিনি। করছি না বলেই এ ধরনের অজ্ঞতাপ্রসূত ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনা ক্ষুদ্র হলেও তুচ্ছ নয়। ভিনদেশি পতাকা ওড়ানোর নিয়মনীতি কী তা জনগণকে জানাতে হবে। সরকার ও তার প্রশাসনযন্ত্র কখনোই এই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।
ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী
গবেষক; অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
pr_saif@yahoo.com

দুগ্ধশিল্প বাঁচাতে চাই সঠিক নীতি
দুগ্ধশিল্প বাংলাদেশের কৃষির অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি উপখাত। কিন্তু বিগত বছরগুলোর মতোই ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে দুগ্ধশিল্প অবহেলিত রয়ে গেছে। ২০০৯ সালের এপ্রিল-মে মাসে দুধ না বিক্রি করতে পেরে রাগে-ক্ষোভে খামারিরা রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু গত এক বছরে দুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাঘাবাড়ী ঘাটের খামারিরা গড়ে সপ্তাহে অন্তত এক দিন দুধ বিক্রি করতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে বাজেটে গুঁড়োদুধ আমদানির ওপর কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফল হবে, দেশীয় কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে, তারা দুধ ক্রয় আরও কমিয়ে দেবে এবং উৎপাদনকারীরা দুধ বিক্রি করতে পারবেন না। অর্থাৎ ভ্রান্তনীতি আর শিল্পের অদক্ষতার দায় চিরায়ত নিয়মে বহন করতে হবে গরিব ক্ষুদ্র খামারিদের।
চাহিদার মাত্র এক-চতুর্থাংশ দুধ আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। অথচ এ দেশের খামারিদের দুধ বিক্রি না করতে পেরে তা রাস্তায় ঢেলে ক্ষোভ প্রকাশ করতে হচ্ছে। এ ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে। বিশেষ করে বর্তমান সরকার যেখানে দেশীয় শিল্প রক্ষার জন্য এবং কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ডেইরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদের পাঁচজন সদস্য দেশীয় দুগ্ধশিল্পের বিকাশকে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্ট খামারি, বিজ্ঞানী আর ব্যবসায়ী মহল আশা করেছিল, এবারের বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেট সবাইকে আশাহত করেছে।
চলতি বছরের ২৬-২৭ মে বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা ফোরামের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় সব বক্তাই এক সুরে বলেছেন, শুধু খাদ্যনিরাপত্তা নয়, সময় এসেছে পুষ্টিনিরাপত্তার পরিকল্পনা করার। পুষ্টিনিরাপত্তা মানেই হলো প্রাণিজ প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ। এর দুই সপ্তাহ পরই জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে বাজেট। দেশীয় দুগ্ধশিল্প বিকাশের কোনো প্রস্তাবনা আমরা তাতে দেখছি না।
প্রশ্ন হলো, গুঁড়োদুধ আমদানির ওপর কর হ্রাস করাই কি শিশুখাদ্য জোগানের একমাত্র পন্থা? আমদানিকৃত, অনেক ক্ষেত্রে বিষাক্ত মেলামিনযুক্ত গুঁড়োদুধ শিশুর পুষ্টি পূরণে কতটা সহায়ক হবে?
দেশকে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপিত বাংলাদেশ ডেইরি ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলকে কার্যকর করা জরুরি। এ জন্য বর্তমান বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত। ডেইরি ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল নিয়মিত আন্তর্জাতিক দুগ্ধবাজারের ওপর নজর রেখে তার ওপর পরিমিত কর ধার্য করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিতে পারবে। একই সঙ্গে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির একটি রোডম্যাপ তারা তৈরি করবে।
গোখাদ্যের ওপর ধার্যকৃত ৩৩ শতাংশ ট্যারিফ তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। দুগ্ধ খামারের মোট দৈনন্দিন ব্যয়ের শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ব্যয় হয় গোখাদ্যের পেছনে। দুধ উৎপাদন খরচ কমাতে হলে গোখাদ্য আমদানির ওপর কর হ্রাস করতে হবে। শস্যচাষিরা সারের ওপর ভর্তুকি পেয়েছেন, তাঁরা শস্য উৎপাদনে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। একই রূপ ভর্তুকি পেলে দুগ্ধখামারিরা দেশকে দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারবেন।
দুগ্ধশিল্পে ব্যবহূত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয় শিল্প খাত হিসেবে। এসব মূল্য কৃষি খাত হিসেবে নির্ধারণ করা উচিত। প্রক্রিয়াজাত শিল্পগুলো বর্তমানে মূলত তরল আর গুঁড়োদুধ বাজারজাত করছে। শিল্প বিকাশে গবেষণা ও দুগ্ধজাত পণ্য বহুমুখীকরণে তাদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো নয়। তা ছাড়া বাজারজাত করা দ্রব্যের ওপর তারা ভারতীয় দুগ্ধশিল্পের তুলনায় অনেক বেশি লাভ করে থাকে। এসবের ফলে বাংলাদেশে ভোক্তার দেওয়া অর্থের মাত্র শতকরা ৪৬ ভাগ যায় উৎপাদনকারীর হাতে। অথচ ভারতীয় দুগ্ধশিল্প ভোক্তামূল্যের শতকরা ৭৪ ভাগ পৌঁছে দেয় উৎপাদনকারীর হাতে। বাংলাদেশে একদিকে মূল্য বেশি থাকায় ভোক্তারা প্রয়োজনের তুলনায় কম দুধ ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে, অন্যদিকে খামারিরা উৎপাদিত দুধ না বিক্রি করতে পেরে বা সঠিক মূল্য না পেয়ে উৎপাদনবিমুখ হচ্ছেন। অর্থাৎ ভ্রান্তনীতির দুষ্টচক্রে আটকে যাচ্ছে উন্নয়ন।
নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে বাংলাদেশকে তারা দুধ আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে দেখতে চান, নাকি দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এক দেশে পরিণত করতে চান। খামারির উৎসাহ ও পরিশ্রমের কোনো ঘাটতি নেই। প্রয়োজন সঠিক নীতিনির্ধারণ আর শিল্পের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
মোহাম্মদ শামছুদ্দিন
চেয়ার, সিডিভিএফ।
m.shamsuddin@cdvf.org.bd

নির্বাচনী অঙ্গীকার থেকে সরকারের পিঠটান
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সাংসদদের সম্পদের বার্ষিক হিসাব গ্রহণ এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে সরকার। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদের এক নিয়মিত সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদদের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের লিপ্সা বাড়িয়ে দেবে। এর ফলে দেশে দুর্নীতির প্রবণতা বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নির্বাচনী অঙ্গীকার থেকে সরে যাওয়ায় সরকারের জনসমর্থন হ্রাস পাবে বলে আমি মনে করি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। দুর্নীতি রোধেও আওয়ামী লীগ কাজ করবে বলে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে উল্লেখ করে। অথচ সরকারের দেড় বছরের মাথায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার এই সিদ্ধান্ত হতাশাব্যঞ্জক।
সম্পদের বিবরণ ও উৎস প্রকাশ করার মাধ্যমে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব। ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতি উদ্ঘাটনে এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর উপাদান। অথচ নির্বাচনী অঙ্গীকার থেকে সরে আসার এমন ঘোষণা দুর্নীতি নির্মূলে সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে গাফিলতির মূল্য দিতে হতে পারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য সতর্কসংকেত বলা যেতে পারে। সরকারের হাতে এখনো সময় আছে। সরকারের উচিত নির্বাচনী অঙ্গীকার থেকে সরে আসার পরিবর্তে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে এবং টেকসই গণতন্ত্রের জন্য এটি জরুরি।
নূর-এ-জান্নাতুল ফেরদৌস
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
jannatulruhi@gmail.com

শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা চাই
শ্রম ও শিল্প আইন ২০০৬ প্রণীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়, যা সাতটি গ্রেড বা ধাপে ভাগ করা। সপ্তম গ্রেড হচ্ছে ১৬৬২.৫০ টাকা এবং প্রথম গ্রেড ৫,১৪০ টাকা। শ্রম ও শিল্প আইন অনুযায়ী তিন বছর পরপর তা পুনর্নির্ধারণ করার কথা। যতদূর জানি, আমাদের সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকের প্রতিনিধিরা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। অনেক বৈঠক করেছেন। আশা করি, খুব শিগগিরই একটি সমঝোতা হবে, নতুন নীতিমালা ঘোষণা করা হবে।
যদি সপ্তম গ্রেডের বর্তমান মজুরি ১,৬৬২.৫০ টাকার বদলে ২,৪০০ টাকা করা হয়, এভাবে ষষ্ঠ গ্রেডে ১,৮৫১ টাকার পরিবর্তে ২,৭০০ টাকা, পঞ্চম গ্রেডে ২,০৪৬ টাকার পরিবর্তে ৩,০০০ টাকা, চতুর্থ গ্রেডে ২,২৫০ টাকার পরিবর্তে ৩,৩০০ ও তৃতীয় গ্রেডে ২,৪৪৯ টাকার পরিবর্তে ৩,৬০০ টাকা করা হয়; তাতে ২৮৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন, এমন মাঝারি আকারের একটি কারখানায় শ্রমিকদের মজুরি বাবদ মাসে খরচ হবে প্রায় ৯০ লাখ টাকা। আর যদি দৈনিক দুই ঘণ্টা করে ওভারটাইম ধরা হয়, তবে ৩৫ শতাংশ হারে সাড়ে ৩১ লাখ টাকা খরচ হবে। বর্ধিত মজুরি ও ওভারটাইম মিলে দাঁড়ায় এক কোটি সাড়ে ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট মজুরি দাঁড়াবে বর্তমান ৯৯ লাখ ৫০ হাজারের পরিবর্তে এক কোটি সাড়ে ২১ লাখ টাকা। বর্ধিত অন্য আনুষঙ্গিক খরচ ধরলে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেশি। দেখা যাচ্ছে, আয়-ব্যয়ের হিসাবে কারখানার উৎপাদিত দ্রব্য ও প্রস্তাবিত ব্যয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
মজুরি বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের দ্বিমত নেই। তবে বাস্তবসম্মত হারে তা বাড়ানো উচিত। এতে মালিকদের যে লোকসান হবে, তা তিনভাবে পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে—এক. ক্রেতাদের প্রতি কারখানার পক্ষ থেকে প্রতি ইউনিট মূল্য বাড়ানোর চাপ প্রয়োগ করা। বিদেশি ক্রেতাদের বোঝাতে হবে মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে। পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিক দ্বারা পণ্য তৈরি করে পণ্যের মানও ধরে রাখতে হবে।
দুই. শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে, অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৮০ পিসের পরিবর্তে যদি আমরা আমাদের কার্যদক্ষতা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারি, তবে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সুতরাং, প্রতিটি শ্রমিক যদি কাজে যোগদানের আগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে যেতে পারে তবে দক্ষ শ্রমশক্তি কাজে লাগিয়ে একটি কারখানার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণশালা তৈরি করতে হবে বিভিন্ন জেলা শহরে। সঙ্গে সঙ্গে পোশাক তৈরি শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএকেও এগিয়ে আসতে হবে নতুন নতুন প্রশিক্ষণশালা স্থাপনে।
তিন. সরকারি ভর্তুকি। প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট তৈরিও এক ধরনের ভর্তুকি। তা ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদের হার কমাতে পারে সরকার। পারে বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাস বিলে ভর্তুকি দিতে বা পারে মোট রপ্তানির ওপর ইনসেনটিভ দিতে।
মজুরি বৃদ্ধি যেমন সময়ের দাবি, তেমনি কারখানা যেন রুগ্ণ না হয় সে দিকেও সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
বকুল আশরাফ, ঢাকা।
bakulashraf@yahoo.com

আপনি আছেন তো?
বিপাশা হায়াত
আমি শানু নামের এক অসহায় স্ত্রীকে ফোন করার জন্য মুঠোফোনটা হাতে নিলাম।
শানুর ফোন বাজল। ওদিকে শানুর গলার স্বর। শক্তিহীন। বিষাদময়। আর এদিকে আমি পুরোপুরি দিশেহারা। একজন মৃত্যুপথযাত্রীর স্ত্রীর সঙ্গে কী করে কথা বলব, জানি না। মাথার ভেতরে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
‘কেমন আছেন শানু?’
‘ভালো আছি, আপা।’ শানু কাঁদছে। ‘আপনি ফোন করেছেন, খুব খুশি হয়েছি।’ শানুর গলায় যেন একবিন্দু আশার ঝিলিক!
‘শানু, আপনার স্বামী কেমন আছেন?’
কথা আটকে যায় শানুর। স্বর যেন শোনাই যায় না। চার বছরের বিবাহিত সুন্দর স্বপ্নময় ছিল ওদের দুজনের জীবন। হঠাৎ ওর স্বামী মামুনের খুব ঘনঘন জ্বর শুরু হলো। তারপর শরীর ফ্যাকাশে হতে লাগল। যেন এক ফোঁটা রক্তও বইছে না শরীরে। সত্যিই তাই। শানুর জীবনের সবচেয়ে কাছের আর প্রিয়তম মানুষটির লিউকেমিয়া ধরা পড়েছে। অতি সাধারণ পরিবারের দুজন মানুষ। দুজনের ছোটখাটো চাকরিতে দিন চলে যায়। এত বড় অসুখ থেকে বেঁচে ওঠার খরচ বহন করা তো কল্পনাতীত। লিউকেমিয়ার একমাত্র চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন। আর সে জন্য মামুনকে বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের কথায় মামুনের চোখ ভেসে গিয়েছিল জলে। মাত্র ৩২ বছর তার জীবনকাল! আর কখনো তার এই অপরূপ পৃথিবীর ফুল, পাখি, নদী অথবা নক্ষত্র দেখা হবে না প্রিয়জনের হাত ধরে? অথবা সন্তানের স্পর্শ পাবে না কোনোদিন?
ছেড়ে কি যেতেই হবে এই দেহটাকে, কোটি কোটি জীবন্ত মানুষের ভিড়ে। কেউ কি তার পাশে এসে দাঁড়াবে না? এত বড় পৃথিবীতে এমন মানুষ কি নেই, যার মন অন্য এক অসহায় মানুষের বেদনায় হু হু করে ওঠে? এমন কেউ কি নেই, যে তার উদ্বৃত্ত থেকে কিছুটা দিয়ে মামুন ও তাঁর পরিবারকে এই অসহ্য যন্ত্রণায় একটু প্রশান্তির স্পর্শ দিতে পারে? তাঁকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে? আমার মনে হয় এমন মানুষের সংখ্যাই পৃথিবীতে বেশি। কারণ প্রতিটি মানুষের ভেতরেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে। তাই মানুষ অন্যের বেদনায় ব্যথিত হয়। অপরিচিতের যন্ত্রণায় সজল হয়। সাহায্যের হাত বাড়ায় তার দিকে।
মামুনকে শানু হঠাৎ করেই ফোনটা দিয়ে দেয়। আমি বললাম, ‘কেমন আছেন মামুন।’ আমার মন বলছে, মামুনকে পৃথিবী আটকে রাখবে। চলে যেতে দেবে না।
‘আপা, হায়াত আঙ্কেল, তৌকীর ভাই—আর সবাইকে বলবেন আমার জন্য দোয়া করতে। আমি ভালো আছি, আপা।’
এবার আমার চোখও ঝাপসা হয়ে উঠল। কী আশ্চর্য! ওরা কেউ একবারও বলল না, ওদের অনেক অনেক টাকার প্রয়োজন! হয়তো ওরা ধরেই নিয়েছে পৃথিবীর মানুষ এখন বদলে গেছে। কেউ কারও জন্য ব্যথিত হয় না! চিকিৎসার অভাবে মামুন চলে যাবে, তা কি হয়? আপনি আছেন তো ওর পাশে। আছেন না? আমিও আছি। আমরা সবাই অল্প অল্প করে পাশে থাকলেই মামুন জীবন ফিরে পাবে। ও আবার হয়তো কোনোদিন পূর্ণিমার রাতে শানুর হাত ধরে জোছনায় ভিজবে। হয়তো খুব বেশিক্ষণ ওদের জোছনা দেখা হবে না। কারণ ওদের ছোট্ট মেয়েটা হঠাৎ মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে বাবার কোলে ওঠার জন্য বায়না ধরেছে।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: মো. শাহীনুল ইসলাম
এসবি এ/সি নং-১১৩২১০৪০০১২৩২৫, প্রাইম ব্যাংক লিঃ, কারওয়ানবাজার শাখা।
বিপাশা হায়াত, নাট্যাভিনেত্রী।

No comments

Powered by Blogger.