দুর্নীতির খেসারত কি ভোক্তারাই দেবে?-দুধের দাম বেড়েই চলেছে

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি প্যাকেটজাত দুধ মিল্ক ভিটার দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা বাড়িয়ে ৫৮ টাকা করেছে, তা নতুন খবর নয়। ২০০৯ সাল থেকে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ তাদের উৎপাদিত দুধের দাম ছয়-ছয়বার বাড়িয়েছে। তাদের এই দাম বাড়ানোর মাত্রাটি বেশ চমকপ্রদ।


দুধের প্যাকেট যত ছোট হবে, লিটারপ্রতি ভোক্তাদের বেশি হারে দাম গুনতে হবে। এক লিটারের প্যাকেট ৫৮ টাকায় বিক্রি হলেও আধা লিটারের জন্য দাম গুনতে হচ্ছে ৩২ টাকা। ২৫০ গ্রামের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ টাকা করে। তুলনামূলকভাবে গরিবেরাই ছোট প্যাকেট কেনে।
প্রশ্ন হলো, মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষের এই উপর্যুপরি দাম বাড়ানোর যুক্তিটা কী? প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, খামারি পর্যায়ে তাঁদের বেশি দাম দিতে হয়। সেই বেশি দামের পরিমাণটাই বা কত? গতকাল প্রথম আলোর খবরে বলা হয়েছে, খামারি পর্যায়ে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ প্রতি লিটার দুধ কেনে ৩৫-৩৬ টাকায়। সেখানে ভোক্তা পর্যায়ে ৫৮ টাকায় উন্নীত হওয়ার কোনো যুক্তি আছে কী?
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতিই ছিল দেশে প্যাকেটজাত দুধ উৎপাদনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান। ইদানীং বেসরকারি পর্যায়েও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত দুধ উৎপাদন করছে। এটি ভোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের মানোন্নয়নে সচেষ্ট না থেকে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় মেতেছে। কয়েক দিন আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ানোর পর এবার মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ বাড়াল। এরপর একই যুক্তিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়াবে। ভোক্তারা কোথায় যাবে?
যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় ও লাভের বিষয়টি দেখবে। মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ দাম বাড়ানোর পক্ষে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যাপক হারে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপচয় হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়েছে। তদুপরি প্রতিষ্ঠানটি খামারিদের স্বার্থ দেখে, সেই সুনামও নেই; বরং দুধের দাম পরিশোধ নিয়ে খামারিদের প্রচুর অভিযোগ আছে। এর প্রতিকারে তাঁরা আন্দোলনও করেছেন। আমরা মনে করি, খামারিদের কাছ থেকে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ যে দামে দুধ কিনে থাকে, এর প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় তার অর্ধেকের বেশি হওয়া উচিত নয়। প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি ও অপচয় কমানো গেলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি দামের বোঝা কমানো যেত।
বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অধিকাংশ মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশি গুঁড়া দুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে। কিন্তু মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর না দিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর ক্রেতা হিসেবে যারা অতিশয় দুর্বল, তাদের ওপরই খড়্গটি বেশি চেপে বসেছে। এর অবসান চাই।
যেখানে সরকারের দায়িত্ব বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবিড় তদারকি, সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে পারে না। মিল্ক ভিটার দুধের বর্ধিত দাম কমিয়ে যুক্তিসংগত পর্যায়ে আনা হোক।

No comments

Powered by Blogger.