অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত

আবার একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। অকালে ঝরে গেল একটি সম্ভাবনাময় জীবন। যে মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল একটি পরিবার, অনেক স্বপ্ন ছিল যাঁকে নিয়ে, তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না কোথাও। সেদিনও ক্যাম্পাসে শোনা গেছে তাঁর কণ্ঠস্বর। সহপাঠীদের সঙ্গে আনন্দ-কোলাহলে মেতে উঠতে দেখা গেছে তাঁকেও।


রাত পোহানোর আগেই তিনি পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। এই ছেলেটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁর মা-বাবা। মেধাবী সেই সন্তান আর কোনো দিন ফিরবেন না তাঁর মায়ের কোলে। তাঁর মরদেহ ফিরেছে সেই গ্রামে, যে গ্রাম থেকে একদিন অনেক স্বপ্ন নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষা অর্জনের জন্য রাজধানীতে পাড়ি জমিয়েছিলেন এক তরুণ। গত শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ছাত্র রেদোয়ান আহত হয়েছিলেন বাস শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে। শনিবার রাতেই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর এই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে। তারপর শুরু হয় গাড়ি ভাঙচুর। আগুন দেওয়া হয় বাসে। গাড়ি এবং বাসযাত্রীদের অসহায়ভাবে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা একেবারেই অনভিপ্রেত। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হামলার শিকার হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসও। শনিবারের ঘটনার সূত্রপাত ঢাকার অদূরে সোনারগাঁয়ে। সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের কয়েকজন ছাত্র। ফেরার পথে একটি বাস কম্পানির শ্রমিকদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয় তাঁদের। ঢাকায় পেঁৗছে ঘটনা গড়ায় সংঘর্ষে। ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সোনারগাঁ-ফেরত ছাত্রদের সমর্থনে মতিঝিলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কয়েকজন ছাত্র। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রেদোয়ানের মৃত্যুর প্রতিবাদে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলোতে অতিরিক্ত ব্যারিকেড গড়ে তুলে যানবাহন চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসে। এরপর রড ও গজারির লাঠি নিয়ে শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়কে এলোপাতাড়ি গাড়ি ভাঙচুর করে। আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাঙচুর চলার পর পুলিশ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী পরে নীলক্ষেতে গিয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পুলিশ সেখানেও তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। প্রায় আধঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। ছাত্ররা ইট ছুড়লে পুলিশও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। এতে ওই এলাকায়ও যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে পিছু হটে কলাভবনে প্রক্টরের কার্যালয় ভাঙচুর করে। অন্য একটি খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে বাস ভাঙচুর এবং অগি্নসংযোগ ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। সহিংসতার পেছনে কাজ করেছে রাজনৈতিক ইন্ধন_এমন অভিযোগও আছে। সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে এভাবে পরিকল্পিতভাবে গাড়ি ভাঙচুর করা সম্ভব নয়।
গত শনিবার রাতে এবং রবিবার যে ঘটনা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এভাবে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু যেমন কাঙ্ক্ষিত নয়, তেমনি এ ঘটনার পর যেভাবে গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে, সেটাও অনভিপ্রেত। যেকোনো মৃত্যুই বেদনার। আমরা নিহত রেদোয়ানের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। যে ক্ষতি তাঁর পরিবারের হয়েছে, তা কোনো দিন পূরণ হওয়ার নয়। ভবিষ্যতে যেন এমন ক্ষতি আর কোনো পরিবারের না হয়, সেদিকে আমাদের সবারই দৃষ্টি রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.