দেশ তাঁকে স্মরণে রাখবে

যা কিছু মোর সঞ্চিত ধন/এত দিনের সব আয়োজন/চরম দিনে সাজিয়ে দিব উহারে_মরণ যেদিন আসবে আমার দুয়ারে। রবীন্দ্রনাথের এই পঙ্ক্তিমালা সত্যে পরিণত করে বুধবার পড়ন্ত বিকেলে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন।


এ বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা মরণকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। বর্ণাঢ্য জীবন সাজিয়ে তা মরণের হাতে তুলে দিয়েছেন। দীর্ঘ ৭৮ বছরের জীবনে মানিকগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতিতে তিনি নিজেকে করে তুলেছিলেন অপরিহার্য। সাংসারিক জীবনে স্ত্রী, চার ছেলে এবং দুই মেয়ে রেখে গেছেন, কিন্তু সংসার জীবনের বাইরে রেখে গেছেন অসংখ্য গুণগ্রাহী, শুভাকাঙ্ক্ষী, সমর্থক ও সহকর্মী। তাই তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং দেশবাসীর মধ্যে নেমেছে শোকের ছায়া। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, কিন্তু অনাড়ম্বর ব্যক্তিজীবনে তিনি শত্রুতার মুখোমুখি ছিলেন না। একজন রাজনীতিবিদের জীবনে এমন অর্জন কম কথা নয়।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার খিরাই পাঁচুরিয়া গ্রামে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৩ সালে মাস্টার্স পাস করেন। ছাত্রজীবনে তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজনীতিতে থেকেছেন সচেতন ও সক্রিয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের গৌরব রয়েছে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের। তিনি তখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে থাকতেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হলেও পরবর্তীকালে ১৯৫৭ সাল থেকে দীর্ঘকাল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। জিয়াউর রহমানের সময় ১৯৭৮ সালে বিএনপি দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতি করেছেন। তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে খোন্দকার দেলোয়ার দলের মহাসচিব নিযুক্ত হন। তখন থেকে আমৃত্যু তিনি যোগ্যতার প্রমাণ রেখে বর্তমান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পঞ্চাশের দশক থেকে তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ তিনি একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শুধু তাই নয়, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন তাঁর গণতান্ত্রিক চেতনা দিয়ে দেশের রাজনীতিকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। দেশ বহুকাল তাঁর অভাব বোধ করবে বলে আমরা মনে করি। বিএনপির এ নেতা কিছুকাল অধ্যাপনাও করেছেন। তিনি সিলেটের মুরারী চাঁদ কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন। তিনি মানিকগঞ্জের খোন্দকার নুরুল হোসেন ল' একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। অর্থাৎ রাজনীতির পাশাপাশি তাঁর শিক্ষা সম্পৃক্ততা ছিল বরাবরই। খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সংসদের স্পিকার তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোক জানিয়েছেন। আমরা কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং গভীর শোক নিবেদন করছি।

No comments

Powered by Blogger.