আঁকবো আমরা দেখবে বিশ্ব-মানিক মিয়া এভিনিউতে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা by আশীষ-উর-রহমান

রং-নকশায় খানিকটা দখল থাকলেই চলবে। আর থাকতে হবে আগ্রহ। তাহলেই আপনি অংশ নিতে পারবেন এক অতি স্মরণীয় ঘটনায়। সেটি ঘটতে যাচ্ছে ৩০ চৈত্র অনুযায়ী ১৩ এপ্রিল রাতে। জাতীয় সংসদের সামনে, মানিক মিয়া এভিনিউতে। সড়কটির এমাথা-ওমাথাজুড়ে আঁকা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম আলপনা।


নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে এই আলপনা আঁকার উদ্যোগ নিয়েছে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারটেল ও প্রথম আলো যৌথভাবে। ‘আঁকব আমরা দেখবে বিশ্ব’ নামের এই অঙ্কন কর্মযজ্ঞ শুরু হবে রাত ১০টা থেকে। গিনেস বুকের লোকজনও উপস্থিত থাকবেন। পরিকল্পনামতো অঙ্কন সমাপ্ত হলে এর নাম উঠে যাবে গিনেস বুকের রেকর্ডে; পৃথিবীর দীর্ঘতম আলপনা হিসেবে।
প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে গেছে গতকাল বুধবার থেকেই। সকালে মানিক মিয়া এভিনিউতে আলপনা আঁকার প্রারম্ভিক পর্বে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, নিসার হোসেন ও মনিরুজ্জামান, এয়ারটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস টবিট এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ এই আয়োজনে সংশ্লিষ্টরা।
এই দীর্ঘ আলপনা আঁকার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিসার হোসেন ও মনিরুজ্জামান জানালেন, সড়কের মাঝখানের বিভক্তিসংলগ্ন অংশের উভয় পাশে আলপনা আঁকা হবে। দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে তিন লাখ বর্গফুট। তাঁদের চারজনের সঙ্গে আরও থাকবেন শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্য। এই পাঁচজনের তত্ত্বাবধানে অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত ২৫ জন শিল্পীর একটি করে দল থাকবে। এই দলের তত্ত্বাবধানে থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা), শান্ত-মারিয়ম ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের চারুকলার ২৫০ শিক্ষার্থী ও নবীন-প্রবীণ শিল্পী। তাঁরা সড়কের একেকটি অংশে অঙ্কন করবেন। তাঁদের সঙ্গে অঙ্কনে পারদর্শী যে কেউ অংশ নিতে পারবেন। আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত। আঁকার আনুমানিক সময় ধরা হয়েছে চার ঘণ্টা। গিনেস বুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন রেকর্ডসংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য।
এই আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বললেন, ‘আমাদের দেশের অসাম্প্রদায়িক উৎসবের মধ্যে বাংলা নববর্ষ অন্যতম। বছরের প্রথম দিনটি সুন্দর করে উদ্যাপনের জন্য নানা আয়োজন থাকে। জনজীবনে সুরুচির প্রসার ঘটানো এবং সৌন্দর্যবোধ জাগানোর জন্য এ ধরনের পথচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
শিল্পী রফিকুন নবীর মন্তব্যও অনুরূপ। তিনি বললেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবেই আমাদের যাবতীয় ব্যবহারিক জিনিসপত্রের সঙ্গেই দৃষ্টিনন্দন নকশার একটি সমন্বয় রয়েছে। তালপাতার পাখা, চাল ঝাড়ার কুলো, নকশিকাঁথা, মৃৎপাত্র—সবকিছুতেই দেখা যাবে বহুকালের অভিজ্ঞতা ও নান্দনিক বোধসঞ্জাত সুদৃশ্য নকশার উপস্থিতি। এবারের আলপনায় আমরা বিষয়বস্তু রেখেছি উন্মুক্ত। কেউ ঐতিহ্যবাহী নকশা আঁকতে পারেন। আবার কোনো শিল্পী যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু আঁকতে চান, তা-ও তিনি আঁকতে পারবেন। সব মিলিয়ে একটি সমন্বিত রূপ থাকবে। ফলে এটি একটি অভূতপূর্ব দর্শনীয় বিষয় হয়ে উঠবে বলেই আমরা আশা করছি।’
আঁকিয়েরা তো অংশ নেবেনই, যাঁরা আঁকতে পারেন না, আসতে বাধা নেই তাঁদেরও। দর্শক হিসেবে এই অভূতপূর্ব ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী হয়ে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁদের স্মৃতির ভান্ডারে উজ্জ্বল সম্পদ হয়ে থাকবে ভাবীকালে।

No comments

Powered by Blogger.