দর্শকদের কাছে সংযত আচরণই প্রত্যাশিত-পরাজয়ের প্রতিক্রিয়া

শুক্রবার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয় যারপরনাই হতাশাব্যঞ্জক। কিন্তু এই হতাশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লজ্জা; খেলায় হেরে যাওয়ার জন্য যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি একদল উত্তেজিত দর্শকের দায়িত্বজ্ঞানহীন অদূরদর্শী আচরণে।


খেলা শেষে ক্রিকেটাররা যখন বাসযোগে হোটেলে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাসের জানালায় ঢিল পড়ে। জানালার কাচ ভেঙে গেছে। তবে স্বস্তির কথা, কারোর গায়ে কোনো আঘাত লাগেনি। কিন্তু আঘাত লেগেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের খেলোয়াড়দের মনে। তাঁরা একটু আতঙ্কও বোধ করেছেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিস গেইল নিজের মোবাইল ফোন থেকে ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট টুইটারে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন। যে দেশটি অতিথিবৎসল হিসেবে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে প্রশংসনীয়, সেই দেশে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে!
চলমান আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট উৎসবের অন্যতম স্বাগতিক দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে যেসব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেগুলোতে অংশ নিতে যেসব বিদেশি ক্রিকেট দল এসেছে, তারা আমাদের সম্মানিত অতিথি। আমাদের উচিত তাদের সর্বোচ্চ আতিথেয়তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্ত দর্শকদের এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়, যাতে আমাদের অতিথি খেলোয়াড়েরা অসম্মান বোধ করেন। শুক্রবারের ঢিল ছোড়ার ঘটনায় শুধু যে তাঁদের অসম্মান করা হয়েছে তা নয়, তাঁদের মনে নিরাপত্তাহীনতার ভয়ও সৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য আমরা মনে করি না, নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি রয়েছে। বিক্ষুব্ধ দর্শকদের যে অংশটি ক্রিকেটারদের বাসে ঢিল ছুড়েছে, তারা হয়তো তা করেছিল স্বদেশি ক্রিকেটারদের বাস ভেবে। অন্ধকারে তারা বুঝতে পারেনি যে বাসটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ক্রিকেটারদের। কিন্তু এটিও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মাগুরার বাড়িতেও ঢিল পড়েছে, এটা অন্যায়। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে একবার খেলার সময় দর্শকদের বোতল নিক্ষেপের জের ধরে ওই মাঠে কয়েক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ বন্ধ ছিল।
বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথমবারের মতো। ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি একটি চিরস্মরণীয় উৎসব হিসেবে থেকে যাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সবকিছুই অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুভাবে চলছে। এর মধ্যে গত শুক্রবারের ঢিল ছোড়ার ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। এ জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। বিসিবি ও এলওসির নেতারাও তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তাঁদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ও বিশ্বকাপের আয়োজক আন্তর্জাতিক মহল এই অনভিপ্রেত ঘটনাটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করবে; এটি যেন কোনোভাবেই চলমান বিশ্বকাপ উৎসবে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে।
কয়েক দিন আগে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে জেতার পর দেশজুড়ে যে বিজয়োল্লাস লক্ষ করা গেছে, তাতে কিছু বাড়াবাড়ি ছিল। এবং শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে হেরে যাওয়ার পরের বিক্ষোভ প্রকাশেও দেখা গেল বাড়াবাড়ি। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধির ক্ষতি করে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আনন্দ বা ক্ষোভ—যেকোনো অনুভূতি প্রকাশেই পরিমিতি থাকা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.