দাম বাড়ানোর আগে সেবার মান বাড়ান-ওয়াসার পানি

গত দুই বছরে তিন দফায় বাড়ানোর পর ঢাকা ওয়াসা চতুর্থবারের মতো পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। সংস্থাটির ১৭৪তম বোর্ড সভার সুপারিশের ভিত্তিতে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য পানির দাম ইউনিটপ্রতি ছয় টাকা ৩৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আট টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ সিদ্ধান্ত


বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে প্রতিবছর ইউনিটপ্রতি এক টাকা করে পানির দাম বাড়ানো এবং তা পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে অব্যাহত রাখার সুপারিশও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া অবশ্যই নেতিবাচক। কেননা ওয়াসার পানির প্রাপ্যতা ও গুণগত মান নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। শুকনো মৌসুমে নগরের অনেক এলাকায় পানি দুষ্প্রাপ্য, কোথাও কোথাও আংশিকভাবে অপ্রাপ্য হয়ে ওঠে। আর সারা বছরই পানি থাকে কমবেশি দূষিত, ময়লা-আবর্জনাযুক্ত এবং কখনো কখনো দুর্গন্ধময়। ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পান করা দূরে থাক, কখনো কখনো গোসল করারও উপযোগী থাকে না। ময়লা-আবর্জনাই শুধু নয়, পোকামাকড়, কেঁচো ইত্যাদিরও দেখা মেলে ওয়াসার পানিতে। আরও গুরুতর কথা এই যে কখনো কখনো ওয়াসার পানিতে পাওয়া যায় পয়োবর্জ্যের দুর্গন্ধ। প্রথম আলো খবর নিয়ে জানতে পেরেছে, গত দুই সপ্তাহে মহানগরের অন্তত ২০টি এলাকায় ওয়াসার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ বেড়েছে। সেসব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সায়েদাবাদ শোধনাগার থেকে সরবরাহ করা এই পানি পান করার অযোগ্য তো বটেই, গোসল করা ও থালাবাসন ধোয়ার কাজ করাও নিরাপদ নয়।
এই যখন ওয়াসার পানিসেবার মান, তখন দফায় দফায় পানির দাম বাড়ানো গ্রাহকদের ওপর জবরদস্তি বলেই মনে হবে। দাম বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেছেন, ওয়াসা বর্তমানে গ্রাহকদের কাছ থেকে ইউনিটপ্রতি যে দাম নিচ্ছে, তা ইউনিটপ্রতি পানির পেছনে ওয়াসার খরচের চেয়ে কম। অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেন, ওয়াসার লোকসান হচ্ছে। সুতরাং দাম বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। তিনি আরও বলেছেন, ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থিত পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাই আরও কতকগুলো শোধনাগার নির্মাণ করতে হবে। এ জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু পানির দাম বাড়িয়ে এই অর্থ জোগানোর ভাবনা বাস্তবসম্মত কি না, তা একটি প্রশ্ন।
বিদ্যুতের দাম বাড়লে পানির দামও বাড়বে, এটা গ্রাহকেরা বোঝেন। কিন্তু গ্রাহকসেবার মান না বাড়িয়ে পানির দাম বাড়ানো গ্রহণযোগ্য নয়। চুরি, সিস্টেম লস, সরবরাহ লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাব—সবকিছু মিলিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা এককথায় হতাশাব্যঞ্জক। পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত, তারা কী মানের পানি সরবরাহ করছে, গ্রাহকেরা সেই পানি পাচ্ছেন কি না। গ্রাহক দাম দিয়েই পানি কিনছেন, যুক্তিসংগত কারণে দাম কিছু বাড়ানোও যেতে পারে হয়তো, কিন্তু যে পানি ময়লা-আবর্জনাযুক্ত দুর্গন্ধময়, এমনকি স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক, তার দাম দফায় দফায় বাড়ালে গ্রাহক তা মানবেন কেন?

No comments

Powered by Blogger.