সংসদীয় কমিটির বৈঠকে 'টাকার বস্তা' নিয়ে উত্তেজনা

রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনা তদন্তে মন্ত্রণালয় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধী দল। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়।


একই সঙ্গে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে কমিটির একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য রেহানা আক্তার রানু সাংবাদিকদের বলেন, 'দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় মন্ত্রীর এপিএসের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তে হাইকোর্টের বিচারকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছি।' তিনি বলেন, 'সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রী হওয়ার পরে বলেছিলেন রেলওয়ের কালো বিড়াল খুঁজে বের করবেন। সেই কালো বিড়াল তাঁর এপিএসের গাড়িতে পাওয়া গেছে। এখন মন্ত্রী ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ শেয়ারবাজার কেলেংকারির পর সালমান এফ রহমানকে দায়িত্ব দেওয়ায় এই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তই জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, শুঁটকির বাজার পাহারায় বিড়ালকে দায়িত্ব দিলে লাভ হবে না। তাঁর সেদিনের কথা ধরেই বলছি, টাকা পাওয়ার ঘটনা তদন্তেও রেলের লোকজনকে দায়িত্ব দিয়ে লাভ হবে না।' তিনি আরো বলেন, 'সুরঞ্জিত বাবু তো সব সময় বড় বড় কথা বলেন। সাহস থাকলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে নিজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রমাণ করুক'।
বৈঠকে রানুর দাবি সম্পর্কে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। নির্বাহী বিভাগের কাজে বিচার বিভাগকে জড়ানো যায় না। ঘটনাটিকে অনভিপ্রেত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এপিএস ফারুককে অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। দুই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। আর ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হলে রেলমন্ত্রীর এপিএসের গাড়িতে ঘুষের টাকা পাওয়ার ঘটনাটি নিয়ে বক্তব্য উত্থাপন করেন রেহানা আক্তার রানু। তিনি এই ৭০ লাখ টাকা রেলওয়ের নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা কি না তা-ও জানতে চান। এপিএসের গাড়িতে জাতীয় সংসদের স্টিকার কেন ছিল, বৈঠকে সে প্রশ্নও উত্থাপন করেন তিনি। এ সময় মন্ত্রীও এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। ফলে অনির্ধারিত এই আলোচনায় বৈঠক কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বৈঠকে বিগত তিন অর্থবছরে রেল মন্ত্রণালয়ের আহ্বান করা দরপত্র মূল্যায়ন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলমকে আহ্বায়ক এবং কর্নেল (অব.) এ এ মারুফ সাকলান, আ ক ম বাহাউদ্দিন, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স ও রেহানা আক্তার রানুকে সদস্য করে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.