বলিউড-কাজলের দিনরাত্রি

কাজল নাকি অভিনয়ে ফিরছেন? সত্যি? প্রশ্নটা কাজলকে করতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন, ‘আরে বাবা, আমি তো আট বছর ধরেই ফিরছি। বিয়ের পর বলা হলো, আমি প্রত্যাবর্তন করছি। নাইসা জন্ম নেওয়ার পর বলা হলো, প্রত্যাবর্তন করছি।


এখন যুগ জন্ম নেওয়ার পর বলা হচ্ছে প্রত্যাবর্তন করছি। একটা মানুষ কতবার প্রত্যাবর্তন করতে পারে?’
কাজলকে সর্বশেষ বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল দুই বছর আগে। অথচ সম্প্রতি ফিল্মফেয়ারের এক জরিপে ‘সর্বকালের সেরা মুভি আইকন’ হিসেবে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন কাজল। রহস্যটা কী? ‘কিছুই না। এটা সত্যি, আমি কোনো ছবিতেই খারাপ অভিনয় করিনি। তবে আমার সাফল্যের বেশির ভাগ কৃতিত্ব দেব আমার ছবি এবং চরিত্রকে। কুচ খাট্টা কুচ মিঠা, দিল কেয়া কারে, রাজু চাচা, হামেশা ছবিগুলো ভালো ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই ওই ছবিগুলোতে আমার চরিত্রের কথা কেউ মনে রাখেনি।’ কাজলের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি।
কাজল ছাড়াও তো আরও অনেক ভালো অভিনেত্রী আছেন। তাঁরা তো এমন ‘সেরা মুভি আইকন’-এর খেতাব পান না। ‘আমি শুধু ভাবতে চাই—আমি সৌভাগ্যবতী। আমার ছবি নির্বাচন বেশির ভাগ সময় আমাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। কারণ, আমি সব সময় সেসব বিনোদনমূলক ছবিই করেছি, যেসব ছবি আমি নিজে দেখতে পছন্দ করব। কান্নাকাটি-অন্ধকার ছবি থেকে শত হাত দূরে থাকতে চেয়েছি। এ জন্য অবশ্য অনেক আঁতেলের কথার মুখে পড়েছিলাম।’
কাজলের কি মনে হয় না, এখন সময় হয়েছে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার? ‘আমি প্রতিটি ছবিতেই নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করি। ১০ বছর আগে যেভাবে অভিনয় করতাম, এখন তো সেভাবে করি না। আগে মায়ের চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে অভিনেত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করলে আর থামার নাম নিতেন না। তবে এখনকার দর্শক জানে, এ সবকিছুই নকল, অভিনয়। উই আর ফ্যামিলি, মাই নেম ইজ খান করার সময় আমি এ ব্যাপারে সচেতন ছিলাম। আমি সব সময়ই মাথায় রাখি, আমার সব দর্শক আমার-আপনার চেয়েও বেশি জ্ঞানী। স্মার্ট।’
কাজল কি এখন যেকোনো পরিচালকের ছবি করার জন্য প্রস্তুত? ‘আমি কখনোই মুখের ওপর কাউকে না বলিনি। গল্প, চরিত্র, পরিচালক, প্রযোজক, সহশিল্পী, পারিশ্রমিক, আমার সময়—সবকিছু মিলে গেলে আমি যে কারও ছবি করার জন্য সব সময় প্রস্তুত।’ কাজলকে ইদানীং যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা অনেকেই বিস্মিত, কাজলের সাজসজ্জা, পোশাকের প্রতি আগ্রহ দেখে। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে কাজলকে সব সময়ই বলা হতো ‘কেয়ারলেস বিউটি’। হঠাৎ এতটা পরিবর্তনের রহস্য কী? ‘বিয়ের আগে তো কুকুরের মতো ব্যস্ত ছিলাম। রাত-দিন শুটিং। সারাক্ষণ শুধু অভিনয় নিয়েই ভাবতাম। আর বিয়ের পর, বাচ্চা হওয়ার পর জীবনকে অন্যভাবে সাজিয়েছি। মেয়ে এখন বড় হয়েছে। ছেলেটাও বড় হচ্ছে। তাই নিজের জন্য সময় বের করতে পারছি। হয়তো এ কারণেই পরিবর্তন।’
প্রথম সন্তান নেওয়া কঠিন না দ্বিতীয়টি? ‘অবশ্যই প্রথমবার মা হওয়া বেশ কঠিন। তখন সবকিছুতেই অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা পেয়ে বসে। রাতে বাচ্চা কাঁদলে মনে হয় সূর্য বুঝি আজ উঠবে না, রাত বুঝি ভোর হবে না। দ্বিতীয় বাচ্চার সময় ব্যাপারগুলো অনেক সহজ। এখন আমি বুঝি, বাচ্চা দুপুরে না খেলে রাতে খাবে। আমার ছেলে এমনিতেও অনেক শান্ত। নাইসা অবশ্য পুরোপুরি ওর বাবার মতো হয়েছে। আশা করি, ছেলে অন্তত কিছুটা হলেও আমার মতো হবে।’ সন্তানদের সঙ্গে কে বেশি সময় কাটায়? ‘অবশ্যই আমি।’ কাজল কোনো রাখঢাক না করেই বলেন, ‘অজয়ের জন্য খারাপই লাগে, বেচারা জানতেই পারেনি যুগ কবে হাঁটতে শিখেছে। কবে আধো আধো কথা বলতে শিখেছে। ওর প্রত্যেকটি ছবির প্রতিটি লটেরই শুটিং হয় টানা ৪০ দিন, দেশের বাইরে। দুটি ছবিতে কাজ করা মানে বছরের বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে থাকা। এখন তো অজয়ই একমাত্র অভিনেতা, যে বছরে অন্তত চারটি ছবি করে। মাঝে আমি বলছিলাম, এত ছবি না করে বছরে অন্তত একটি ছবি করতে। অজয় কী বলেছে জানেন? বেশি বুঝো না, চুপ থাকো। হা হা হা!’
স্বামী-সন্তান-সংসার, এই জীবন নিয়ে কি কাজল সন্তুষ্ট? ‘অবশ্যই। সব সময়ই চেয়েছি সংসারী হতে। ১৭ বছরে অভিনয় শুরু করেছিলাম। ২৪-এ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। মা তখন বলেছিলেন, “বেটি, এত কম বয়সে অবসর নিতে হয় না।” অভিনয় থেকে ছুটি নিতে চাইছিলাম। তাই চটজলদি বিয়ে করে ফেললাম। বিয়ের ১৩ বছর পার করে এতটুকু বলতে পারি, আমি সুখী। আমি পরিপূর্ণ। আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা অন্যদের থেকে আলাদা। আমি কখনো পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী কিংবা কিংবদন্তি অভিনেত্রী হতে চাইনি। আমার আকাঙ্ক্ষা ১০ বছর পর যেন আমি আরও ভালো মানুষ হতে পারি। আমার ছেলেমেয়েরা যেন আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। ছোটবেলায় মা প্রায়ই একটি গল্প শোনাতেন। একটি লোক সব সময় অ্যাম্বাসেডর গাড়ির স্বপ্ন দেখতেন। রীতিমতো ঈশ্বরের কাছে সকাল-বিকেল প্রার্থনা করতেন, যেন ঈশ্বর তাঁকে গাড়িটি হাতে তুলে দেন। এই গাড়ি পেলে তাঁর জীবনে আর অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর একদিন লোকটার আকুতি-মিনতি শুনে গাড়িটি উপহার দেন। কিন্তু সঙ্গে এটাও বলে দেন, “আমি তোমার ভাগ্যে আরও ভালো কিছু রেখেছিলাম। তুমি যদি এতটা অধৈর্য না হতে তাহলে হয়তো মার্সিডিস গাড়িটিই পেতে।” আমিও তাই কখনো অধৈর্য হই না। ঈশ্বর আমার জন্য যা লিখে রেখেছেন, সেটা অবধারিতভাবে মেনে নিই। জীবন একটাই। তাই প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করাই আমার মূলমন্ত্র।’
রুম্মান রশীদ খান
[ফিল্মফেয়ার অবলম্বনে]

No comments

Powered by Blogger.