দায়িত্বহীন কথাবার্তা না বলাই ভালো-খালেদা জিয়া এসব কী বলেন!

এটা বেশ অদ্ভুত যে, সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী, দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের একটির সর্বোচ্চ নেতা এবং দুবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গুজবের প্রতিধ্বনি করবেন। কিন্তু সেই কাজটি করেছেন বেগম খালেদা জিয়া।


বিডিআর বিদ্রোহের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীতে পিলখানা বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর প্রচ্ছন্ন হুমকির কথাও শোনা যাচ্ছে।’
এত গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজনৈতিক নেতার মুখে এমন গুরুতর কথা শুনে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রশ্ন জাগবে: ‘এমন প্রচ্ছন্ন হুমকির কথা’ কোথায় শোনা যাচ্ছে? কারা সশস্ত্র বাহিনীতে পিলখানা বিপর্যয়ের ‘পুনরাবৃত্তি ঘটানোর প্রচ্ছন্ন হুমকি’ দিচ্ছে? কাকে হুমকি দিচ্ছে? খালেদা জিয়ার বর্ণিত সেই হুমকির উৎস কী?
পিলখানা হত্যাকাণ্ড এক মর্মান্তিক জাতীয় বিপর্যয়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর কখনোই কেউ ভাবতেও পারে না। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া যখন পুনরাবৃত্তির হুমকির কথা উচ্চারণ করেন, তখন সশস্ত্র বাহিনী, তাঁদের পরিবার-পরিজনসহ গোটা দেশের মানুষের মনে বিরাট উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। খালেদা জিয়া কিসের ভিত্তিতে এমন কথা বললেন, তা পরিষ্কার করা জরুরি। দেখা যাচ্ছে, দলের অন্য নেতারাও প্রায় একই সুরে, একই ধরনের কথাবার্তা বলেছেন। কেউ বা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করেছেন। কিন্তু কেউই তাঁদের বক্তব্য বা অভিযোগের সত্যতা প্রতিপাদনের পক্ষে কোনো তথ্য হাজির করছেন না।
আমরা মনে করি, সশস্ত্র বাহিনীর শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি; সে জন্য পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মতো বিপর্যয় যেন আর কখনোই না ঘটতে পারে, তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ তাঁর দলের অন্য যেসব নেতা সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে আশঙ্কাজনক কথাবার্তা বলছেন, তাঁদের কাছে যদি কোনো গোপন তথ্য থেকে থাকে, তবে তা নির্দিষ্ট করে সরকারকে জানানো উচিত, যেন সরকার যেকোনো ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা প্রতিরোধ করতে আগাম পদক্ষেপ নিতে পারে। আর যদি কোনো তথ্যই তাঁদের জানা না থাকে, তাহলে স্রেফ গুজব রটানো থেকে বিরত হওয়া উচিত। সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে অবশ্যই রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও অপ্রাসঙ্গিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে টেনে আনার কোনোই প্রয়োজন নেই।

No comments

Powered by Blogger.