চরাচর-পাহাড়ে বৈসাবির আয়োজন by শতদল বড়ুয়া

'কাট্রোল পাঘোগ বিঝু এ ঝোক'- এটির বাংলা অর্থ হলো, কাঁঠাল পাকবে, চৈত্রসংক্রান্তি আসবে। উপজাতীয়দের ঐতিহ্যবাহী প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো- বিজু, সাংগ্রাই ও বৈসুক। তিন পার্বত্য জেলায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বাংলা নববর্ষের বিদায় অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তিকে ঘিরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এক সপ্তাহ ধরে পার্বত্য


চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনপদে আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিবছর চৈত্র মাস আসতেই পার্বত্য অঞ্চলে শুরু হয় 'বৈসাবি' উৎসবের আয়োজন। উপজাতীয়দের ধারণা অনুযায়ী চৈত্র মাসের শুরুতেই একটি পাখি এসে বিজু বলে ডাক দিয়ে যায়। চাকমা সম্প্রদায় এ পাখিকে বিজু পেইক (বিজু পাখি) বলে। এই পাখির সুমধুর কলতানে বিজু বা চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। কখন বিজু আসবে, উৎসব করবে- অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে পাহাড়িরা। পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে উপজাতীয়রা তিন দিনব্যাপী এই বর্ষবরণ উৎসব সেই প্রাচীনকাল থেকে পালন করে আসছে মহা ধুমধামে। জাতিগতভাবে থাকে না এদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়। কেউ কারো প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করে না, সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে না। এ কারণে বিজ্ঞজনরা বলেন, 'বৈসাবি অহিংসার প্রতীক, বন্ধুত্বের প্রতীক এবং মৈত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন।' এই বর্ষবরণ উৎসবকে চাকমারা 'বিজু', মারমারা 'সাংগ্রাই' এবং ত্রিপুরারা 'বৈসু' বলে অভিহিত করলেও পুরো পার্বত্য জেলায় তা 'বৈসাবি' নামেই পরিচিত। বছরের শেষ দুই দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন- মোট তিন দিনই মূলত বর্ষবরণ উৎসব 'বৈসাবি' পালিত হয় বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়। বৈসাবি- এটির প্রথম অক্ষর 'বৈ' দিয়ে, বৈশাখী বলা যেতে পারে। বৈ+সা+বি=বৈসাবি অর্থাৎ 'বৈ' মানে 'বৈসু'- এটি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ভাষা। 'সা' মানে 'সাংগ্রাই'- এটি মারমা সম্প্রদায়ের ভাষা। 'বি' মানে বিজু, এটি চাকমা সম্প্রদায়ের ভাষা। সুতরাং বছরের প্রথম দিনকে ত্রিপুরা সম্প্রদায় 'বৈস', মারমা সম্প্রদায় 'সাংগ্রাই' এবং চাকমা সম্প্রদায় 'বিজু' নামে অভিহিত করে থাকে। তিন সম্প্রদায়ের উৎসবের আদ্য অক্ষর দিয়ে গঠিত হয়েছে 'বৈসাবি'। বৈসাবি উৎসব পালনে উপজাতীয়রা একটু ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করায় খাগড়াছড়িতে বৈসাবি উৎসব পালনে স্থানীয়রা ব্যস্ত দিন অতিবাহিত করছে। কিছু কিছু চাকমা গ্রামে চারণ কবিদের (গেংগুলীদের) দিয়ে পালা গানেরও আয়োজন করেছে। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ও তাদের গ্রামে আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্যের। পরিশেষে তারা দেশের জনগণের সুখ-শান্তি ও দেশ সমৃদ্ধি লাভ করুক- এই বিশেষ প্রার্থনায় দিনের কার্যাদির পরিসমাপ্তি ঘটায়।
শতদল বড়ুয়া

No comments

Powered by Blogger.