ভাষা প্রতিযোগ-ভাষাকে সমৃদ্ধ করার তাগিদ by মুজিবুর রহমান খান

কবি নজরুলের পায়ের ছোঁয়া একবার পড়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ে। ১৯২৯ সালে ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বার্ষিক মিলাদ মাহফিলে আসেন তিনি। এই মাহফিলে বসেই নজরুল লেখেন একের পর এক কবিতা। নজরুলের পায়ের চিহ্ন মুছে গেছে সেই কবে। কিন্তু তাঁর সেই কবিতা-ছন্দ প্রবীণদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে আজও।


কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত সেই বিদ্যালয় চত্বর গতকাল শনিবার মুখরিত ছিল ভবিষ্যতের ভাষাবিদদের পদচারণে; বসেছিল বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভাষাবিদদের মিলনমেলা। এ আসর শুধু ভাষা নিয়ে, ভাষার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে।
এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগ ২০১২-এর ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের উৎসবে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার আট শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সকাল নয়টায় শিক্ষার্থীরা একে একে দাঁড়িয়ে যায় নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া, জসীমউদ্দীন, সুকান্ত, জীবনানন্দ ও মধুসূদনের ছবির পেছনে। এভাবে তৈরি হয় শিক্ষার্থীদের আটটি সারি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বন্ধুসভার পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আখতারুজ্জামান। ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হক। পরে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মো. আখতারুজ্জামান। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘মফস্বল শহর ঠাকুরগাঁওয়ে ভাষা প্রতিযোগের মতো অনুষ্ঠান পেয়ে আমরা গর্ববোধ করছি।’
উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠিত হয় ৩০ মিনিটের ভাষা পরীক্ষা। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান। এ পর্বের সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক জাফর আহমদ।
সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডব কাদের বলা হয়? যেসব বানান দ্বিধা সৃষ্টি করে সেসব বানান কবে দূর হবে? বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের কথা লেখা রয়েছে, পাকিস্তানের ইতিহাসেও কি তাদের নির্যাতনগুলো তুলে ধরা হয়েছে? শিক্ষার্থীদের মজার সব প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ও তারিক মনজুর এবং স্থানীয় শিক্ষকদের মধ্যে এ আই এম মুসা, রশিদা খাতুন ও এহতেশামুল হক।
অনুষ্ঠানে ঠাকুরগাঁওয়ের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরেন অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে। এইচএসবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা সেলিম চৌধুরী বলেন, ভাষা প্রতিযোগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আয়োজন করায় শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে। তারাই বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।
এরপর ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আখতারুজ্জামানের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেন অধ্যাপক মাহবুবুল হক। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা আমাদের শক্তি; এই শক্তির কারণেই আমরা একটি দেশ পেয়েছি। বিশ্বের সব ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষাকে যুক্ত করা তোমাদের দায়িত্ব।’
ভাষা প্রতিযোগ আয়োজনে সহযোগিতা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা। সব শেষে পুরস্কার বিতরণ পর্বে শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক কাজল রশীদ। চারটি বিভাগে ১৫ জন করে মোট ৬০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
প্রাথমিকে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার মোর্শেদ প্রথম, দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র জারিন তাহনিম দ্বিতীয় ও রংপুর জিলা স্কুলের ছাত্র আ ন ম তৌফিকুজ্জামান তৃতীয় হয়েছে।
নিম্নমাধ্যমিকে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ইমামুন নুর, সেন্ট ফিলিপস স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবু হাসান ওয়ালিদ ও পঞ্চগড় বি পি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র তানভীর ইবনে আজিজ যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়।
মাধ্যমিকে আমানত উল্লাহ ইসলামী একাডেমির ছাত্র শাহরিয়ার কবির প্রথম, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র কৌশিক আহমেদ দ্বিতীয় ও সৈয়দপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র মুনতাসির হাসান তৃতীয় হয়েছে।
উচ্চমাধ্যমিকে রংপুর সরকারি কলেজের ছাত্র রুমান হোসেন, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের ছাত্র মো. আফসান ও রংপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র শাখরুখ ইবনে আজাদ যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়।

No comments

Powered by Blogger.