বিএনপির অভিযোগ-সরকার 'অঘোষিত' যুদ্ধে নেমেছে

রাজধানীতে চার দলের মহাসমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে সরকার গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'সারা দেশে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও তল্লাশি চলছে।


মহাসমাবেশ বানচাল করতে সরকার সব ধরনের অপকৌশল নিয়েছে।' বিষয়টিকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে, সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে।'
গতকাল শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফখরুল। ১২ মার্চ 'চলো চলো ঢাকা চলো' (মহাসমাবেশ) কর্মসূচির সর্বশেষ ও সার্বিক প্রস্তুতি এবং সরকারের পক্ষ থেকে বাধাবিঘ্ন সৃষ্টির বিভিন্ন দিক গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গতকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপির অন্য নেতারাও অভিযোগ করে বলেছেন, সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসতে সরকার বাধা দিচ্ছে। তাঁরা যেকোনো মূল্যে ১২ মার্চের মহাসমাবেশ সফল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মহাসমাবেশ সামনে রেখে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান 'বেআইনি' উল্লেখ করে তা বন্ধের দাবি জানান ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিটি জেলা ও থানা থেকে কেউ যাতে মহাসমাবেশে আসতে না পারে, সেজন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লার সব যানবাহনও পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভাড়া করা লঞ্চ আসতে দিচ্ছে না। রাজধানীর সব হোটেল চার দিনের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'যদি মহাসমাবেশ করতে দিতে না চান, তবে সরাসরি বলুন, আমাদের অনেক কাজ আছে, শেষ করতে হবে। বাধা দিলে কোন আইনে দিচ্ছেন, তা-ও জানান।'
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান পটল, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রিজভী আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান মিলন, মশিউর রহমান, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলমসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
এ পর্যন্ত সারা দেশে তিন হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, খাগড়াছড়ি, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, গাজীপুর, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তারের তালিকা পড়ে শোনান।
সমাবেশ বন্ধ করার আহ্বান জানানোয় মাহবুব-উল-আলম হানিফের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, তাঁর এই আবদার রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। নয়া পল্টনে মহাসমাবেশের মঞ্চ নির্মাণে পুলিশ বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, 'গতকাল আমরা নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে মঞ্চ তৈরি শুরু করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। তারা জানিয়েছে, এখনো তাদের (পুলিশ) কাছে অনুমতি আসেনি। মাইকও লাগাতে দিচ্ছে না পুলিশ। বারবার টেলিফোন করেও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সরকারকে বলব, মহাসমাবেশ করার অনুমতি না দিলে আইন দেখিয়ে বলে দিন। শনিবার রাত থেকে মঞ্চ নির্মাণকাজ শুরু হবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, এতে বাধা দেওয়া হলে দায় সরকারকেই নিতে হবে।' মহাসমাবেশে কত লোক হবে বলে আশা করছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা কোনো টার্গেট নিয়ে কাজ করছি না।'
বাধা দিলে অভ্যুত্থান- মওদুদ : গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক অধিকার ফোরাম আয়োজিত 'সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যমুক্ত সুষম সমাজ গঠনের ১৬ দফা' বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বাধা দিলে মহাসমাবেশকে জনগণ গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করবে। সংগঠনের সভাপতি ব্যারিস্টার এম হায়দার আলীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লে. জে. (অব.) ফরিদুল আকবর পিএসসি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ ইসহাক হোসেন, চুয়াডাঙ্গা নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।
আ. লীগেরই খবর আছে- আনোয়ার : গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা চলো কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এম কে আনোয়ার প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, 'আপনি আমাদের খবর আছে বলে আর কী করবেন। বরং ভবিষ্যতে আপনাদেরই (আওয়ামী লীগের) খবর আছে। তখন আর পালানোর জায়গা খুঁজে পাবেন না।' লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, লেবার পার্টির মহাসচিব এআরএম জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
বিজয়, না হয় মৃত্যু- হান্নান শাহ : শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাগপা আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ বলেন, 'এখন আমাদের একটাই স্লোগান : বিজয়, না হয় মৃত্যু।' জনতা তাদের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবে না। গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং সৌদি কূটনীতিক ও সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
আইনি সহায়তার আশ্বাস : ১২ মার্চের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন 'জাতীয় লিগ্যাল এইড কমিটি।'গতকাল সকালে রাজধানীর ভাসানী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, মহাসমাবেশকে বানচাল করতে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর থেকে প্রায় দুই হাজার ৬০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগকেই ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
এদিকে গতকাল সকালে মহাসমাবেশের প্রচারে আয়োজিত এক শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক অভিযোগ করেন, 'আমরা জানতে পেরেছি, ঢাকার প্রবেশপথ থেকে পুলিশ মানুষজনকে ঢাকায় ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। সরকারকে বলব, দয়া করে মহাসমাবেশে বাধা দিয়ে গণতন্ত্রের পথ রোধ করবেন না।' স্বাধীনতা ফোরাম জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এই শোভাযাত্রা বের করে। স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, নাগরিক সংসদের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন প্রমুখ প্রচার শোভাযাত্রায় বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া গতকাল বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত '১২ মার্চের কর্মসূচি সফল কর' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় ৫০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলোতে ছাত্রসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। তাঁরা যদি ১২ মার্চ একযোগে মাঠে থাকে, তবে নিঃসন্দেহে কর্মসূচি সফল হবে।'

No comments

Powered by Blogger.