আইনের যথাযথ প্রয়োগ হোক-বাড়িভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি

দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতির কারণে এবং পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য আবশ্যিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে ঢাকা মহানগরের নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস অবস্থা। জীবনযাত্রার মান নিয়ে ভাবা তো দূরের কথা, জীবনের ভার বহন করে যাওয়াই এখন বড় প্রশ্ন।


এই অবস্থায়ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে বাড়িভাড়া নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা। হুটহাট বাড়িভাড়া বাড়ানো, যখন-তখন বাড়ি ছাড়ার নোটিশ কিংবা নানা অজুহাতে পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতা ভাড়াটেমাত্রেরই হয়েছে বা হচ্ছে।
অথচ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক জরিপমতে, নগরের প্রায় ৮৩ শতাংশ বাসিন্দাই ভাড়াটে। নিজের বাড়ি নেই, তাই ভাড়া করা বাড়িই আশ্রয়। সেই সুযোগে ভাড়া বাড়ানো এবং ভাড়াটে উচ্ছেদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা বাড়িওয়ালার হাতে। তিনি খেয়ালখুশিমতো ভাড়া হাঁকবেন আর তা মুখ বুজে সহ্য করে যেতে হবে। ভাড়াটেদের প্রতি এই স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের কি কোনো প্রতিকার থাকবে না?
ওই জরিপ অনুযায়ী, বাড়িভাড়ার পেছনে নগরবাসীর রোজগারের ৬০ শতাংশ চলে যাচ্ছে। তবু এ সমস্যা দেখার কেউ নেই। আইন থাকলেও তা শুধু কাগজেই। সাধারণত কেউই আইনের ধার ধারেন না। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণহীন। সিটি করপোরেশনের বাড়িভাড়ার তালিকা কার্যত মেনে চলার ঘটনা বিরল। ভাড়া নেওয়ার সময় লিখিত চুক্তি সম্পাদিত হতেও তেমন দেখা যায় না। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাড়িওয়ালা সচরাচর বিদ্যমান আইনে তাঁর পক্ষের বিধানগুলোই কার্যকর করেন। নিয়মিত ভাড়া নিয়েও ঘর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব নেন না। তবে কিছু কিছু ভাড়াটে যে অসততা করেন না, তা নয়। বাড়িওয়ালা কিংবা ভাড়াটে আইন না মেনে চললে আইন অনুযায়ী তাঁর শাস্তির বিধান আছে, অথচ এর কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায় না।
নাগরিকের জীবনে শান্তি ও স্বস্তি নিয়ে আসার জন্য অনতিবিলম্বে প্রয়োজন বাড়িভাড়া আইন পুরোপুরি কার্যকর করার কর্তৃপক্ষীয় ব্যবস্থা। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ভাড়ার তালিকা স্থাপন এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নিয়োগের দাবি ন্যায্য এবং তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা দরকার। বিদ্যমান আইনের অসম্পূর্ণতা দূর করে সংস্কার করা কিংবা নতুন আইন প্রণয়নের কথাও ভাবা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.