আমাদের টুর্নামেন্ট! by সাকিব আল হাসান

বলতে পারেন, এশিয়া কাপটা হবে আমাদেরই। আমাদের মানে অলরাউন্ডারদের। আবার বলতে পারেন, সম্ভাবনা নয়, এ তো আশঙ্কা! যে টুর্নামেন্টে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা আছে, সেটি অলরাউন্ডার-নিয়ন্ত্রিত হলে তো বাংলাদেশের স্বপ্নটা আরও ফিকে হয়ে যায়!


হ্যাঁ, বাংলাদেশের কন্ডিশনে এশিয়া কাপ এবার অলরাউন্ডারদেরই টুর্নামেন্ট হবে বোধ হয়। দলগুলোর খেলোয়াড় তালিকার দিকে তাকান। প্রতি দলে তিন-চারজন করে অলরাউন্ডার। সবাই যেন ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। কেউ বোলারদের সাবাড় করতে চায় তো কারও রুচি ব্যাটসম্যানে।
টুর্নামেন্টটা বাংলাদেশে। আমি ওয়ানডেতে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার এবং আমিই বলছি, এটা হয়তো অলরাউন্ডারদের টুর্নামেন্টই হবে। এ ক্ষেত্রে আমার সঙ্গে এশিয়া কাপের অন্য অলরাউন্ডারদের একটা তুলনা হতেই পারে। আমি কি পারব শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে? নাকি অন্তত এশিয়া কাপে আমার চেয়ে এগিয়ে থাকবে অন্য কেউ? সাধারণ্যে এসব আলোচনা হয়তো রোমাঞ্চ ছড়ায়। কিন্তু বিশ্বাস করুন, কারও সঙ্গেই নিজের তুলনায় আমি বিশ্বাসী নই। আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারও সঙ্গেই নয়। আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমার সঙ্গে। আমি কতটা ভালো খেলতে পারি, দলের জন্য কতটা অবদান রাখতে পারি, সেটাই আসল কথা।
এশিয়া কাপে সেরা অলরাউন্ডারদেরই দেখবেন আপনারা। বাংলাদেশে শহীদ আফ্রিদির বিরাট ক্রেজ। খেলোয়াড় বটে একটা! বাংলাদেশ দলের জন্য তার নামটাই বিরাট এক ব্যাপার। তবে আফ্রিদির ব্যাটিং যতটা না চিন্তার, তার চেয়ে বেশি চিন্তার কারণ তার বোলিং। বলছি না যে ব্যাটিংয়ে আফ্রিদি কিছুই করবে না। ব্যাট হাতেও দানব হতে পারে সে। তবে আমাদের জন্য বোধ হয় তার বোলিংটাই বড় সমস্যা হবে।
পাকিস্তানেই আছে মোহাম্মদ হাফিজ। খুবই কার্যকর ক্রিকেটার। গত এক বছর খুব ভালো খেলছে। টেস্ট বলেন, ওয়ানডে বলেন...উইকেট নেওয়া বলেন, রান করা বলেন—সব দিক থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে। হাফিজের ব্যাপারে সতর্ক থাকতেই হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন খুব বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠতে না পারে। এই দুই খেলোয়াড় পাকিস্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদের কারণে টিম কম্বিনেশন অনেক ভালো হয়ে যায় তাদের। এ রকম দুজন অলরাউন্ডার থাকলে একটা দলের জন্য কোনো কাজই আর কঠিন থাকে না।
শ্রীলঙ্কা দলে তিলকরত্নে দিলশান আছে, থিসারা পেরেরাও ভালো করছে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস তো আছেই। ওপেনিংয়ে দিলশান সেট হয়ে গেলে প্রতিপক্ষের ম্যাচে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। সঙ্গে বোলিংটাও ভালো করে। অনিয়মিত বোলার মনে হতে পারে, কিন্তু দিলশান কখনোই খুব বেশি রান দেয় না। এটা ওর ভালো গুণ, আর উইকেটও নিতে পারে।
পেরেরা সম্প্রতি খুবই ভালো করছে। ওর ব্যাটিংয়ের ওপরও ভরসা রাখে শ্রীলঙ্কা। বোলিংটাও করে জোরে। শ্রীলঙ্কা দলে কুমার সাঙ্গাকারাও তো অলরাউন্ডার—কিপার কাম ব্যাটসম্যান। বেশি অলরাউন্ডার থাকার সুবিধা পাবে দলটা। অলরাউন্ডারদের সমন্বয়ে খুব ব্যালান্সড শ্রীলঙ্কা।
পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার মতো ভারতীয় দলে সে রকম অলরাউন্ডার নেই। হ্যাঁ, রবীন্দ্র জাদেজা ও ইউসুফ পাঠান আছে। সুরেশ রায়নার কথাও বলতে পারেন। তবে আবারও বলি, ভারতীয় দলে আমি আসলেই সত্যিকারের কোনো অলরাউন্ডার দেখি না। যারা আছে, তারা অবশ্য প্রত্যেকেই কার্যকর। এক দিন মাত্র ৪-৫ ওভার বল করলেও রান করে দেবে। আরেক দিন রান করতে না পারলে হয়তো ১০ ওভারই বল করে দেবে।
অলরাউন্ডার নয়, ভারত মূলত নির্ভর করে ওদের বোলার আর ব্যাটসম্যানদের ওপর। সাতজন ব্যাটসম্যান, চার স্পেশালিস্ট বোলার। একজন অলরাউন্ডারই হয়তো থাকে দলে। তবে মান যে রকমই হোক, বাংলাদেশের কন্ডিশনে ভারতীয় অলরাউন্ডাররাই বেশি কার্যকর হতে পারে। জাদেজা, রায়না, ইউসুফ, রোহিত—সবাই তো স্পিন বলই করে।
অলরাউন্ডার-বিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশকে পিছিয়ে রাখা মানে অকারণে বিনয়ী হওয়া। ভালো অলরাউন্ডার আমাদেরও আছে। রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ), নাসির, আমি...। সেরাটা দিতে পারলে আমাদের পক্ষেও ভালো কিছু করা সম্ভব এশিয়া কাপে। তবে ভালো করতে আমাদের একটু বেশিই পরিশ্রম করতে হবে।
অন্য অলরাউন্ডারদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য, ওদের পরিচিতি আছে। অনেক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এদিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে। সঙ্গে ধারাবাহিকতার অভাবও একটা মাইনাস পয়েন্ট। এ ছাড়া আর কোথাও আমরা পিছিয়ে নেই। কোনো না কোনো সময় আমরা সবাই খুব ভালো পারফর্ম করেছি।
অলরাউন্ডারদের টুর্নামেন্ট হতে পারে, তবে আগাগোড়া এশিয়া কাপের গতি তারাই ঠিক করে দেবে, সেটা বোধ হয় হবে না। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব বিভাগেই তাদের কিছু না কিছু করার থাকে বলে অলরাউন্ডারদের বড় ভূমিকা হয়তো থাকবে। কিন্তু দিন শেষে দলগত পারফরম্যান্সই হবে আসল।
অলরাউন্ডারদের বাইরেও একজন কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে দাঁড়াতে পারে এশিয়া কাপে—সাঈদ আজমল। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর বোলার তো ও আর এমনিতেই হয়নি। যদিও আমাদের দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ওকে নিয়ে অত বেশি চিন্তা করি না আমি। আজমল অলরাউন্ডার নয়, তবে বোলার হিসেবে ওর সঙ্গে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো থাকবেই। আসলেই থাকবে? আমি আবারও বলি, আমি ক্রিকেটটাকে এভাবে দেখি না।
তিন প্রতিপক্ষই বর্তমান বা সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এশিয়া কাপে ভালো কিছু পেতে হলে আমাদের অনেক ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। সেরা ক্রিকেট খেলার বিকল্প নেই। আর সেটা পারলে তিন ম্যাচে একটা জয় আমরা পেতেই পারি। তবে কাদের বিপক্ষে বলা কঠিন। তিন দলকেই আমরা কখনো না কখনো হারিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে শুধু পাকিস্তানকেই হারাইনি। এ ছাড়া অন্য দুই দলের বিপক্ষে জেতার স্বাদ অন্তত আমি পেয়েছি। দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই পেয়েছে। এটা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সেরা খেলা খেলতে পারলে একটা ম্যাচ অবশ্যই জেতা সম্ভব। কাদের বিপক্ষে তাতে কীই-বা আসে যায়!

No comments

Powered by Blogger.