চাল নিয়ে চালবাজিঃ সরকারকে সতর্ক হতে হবে এখনই


আমনের বাম্পার ফলন হলেও চালের দাম বাড়ছেই। বিভিন্ন মানের চালের কোনো কোনোটির দাম জরুরি সরকারের আমলকেও টপকে যাচ্ছে। বিশেষত মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন বিপাকের মুখোমুখি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী বোরো ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে চালের দর।
ভরা মৌসুমে এভাবে দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের তত্পরতা এবং মিল মালিক, মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুচরা ও পাইকারি বাজারে দামের অস্বাভাবিক ফারাক থেকে আঁচ করা যাচ্ছে, বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সরকারের কর্মকাণ্ড লাগসই হচ্ছে না। সিন্ডিকেট-চাঁদাবাজি বহাল রয়েছে আগের মতোই। কিন্তু এসব ব্যাপারে সরকারি তত্পরতা নেই বললেই চলে।

রাজধানীর পাইকারি বাজারে গত পনের দিনে চালের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ দু’শ’ টাকা প্রতি মণে। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ১১ জানুয়ারি ঢাকায় খুচরা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা। মোটা চালের প্রধান ক্রেতা হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ। এই দাম বৃদ্ধি তাদের জন্য বাড়তি চাপের সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে নাজির, মিনিকেট ইত্যাদির প্রধান ক্রেতা মধ্যবিত্তরা পড়েছে ফাঁপড়ে। এসব চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে। যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, মোটা চাল এখন ২৮ টাকা কেজি। হিসাবের এই গরমিল সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা অবগত নন। তাদের এককথা, চালের বাজারে স্থিতিশীলতা নেই, বাজার বাড়তির দিকে। পাইকারি বাজারে মোটা চাল ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা ৮০ পয়সা দরে। খুচরা বাজারে এসে এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ৩ থেকে ৪ টাকা। সরু চালের দাম কেজিতে ৯/১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা চালের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করারও দাবি করছেন। রাইস মিল মালিকদের অভিযোগ, রাজধানীতে চাল আনার সময় অনেক এলাকায় বস্তাপ্রতি ৫-১০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, মিলে ধান কেনার সময়ও চাঁদাবাজরা বস্তাপ্রতি বিভিন্নহারে টাকা নেয়। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যায় এবং স্বভাবতই তা বাজার বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও চালের বাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই অস্থিরতাকে কাজে লাগাতে এখন থেকেই তত্পর হয়ে উঠছে সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা বাজারে প্রত্যাশিত চাল ছাড়ছে না। অন্যদিকে সরকারের ধান সংগ্রহ অভিযানের দর মণপ্রতি ৫৬০ টাকার বিপরীতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে ধান কিনছে সিন্ডিকেট। এ অবস্থায় মজুতদারির খপ্পরে পড়েও চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেউ অহেতুক চালের দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি এও বলেছেন, আগামীতে আরও বাড়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে চালের বিকল্প সব ধরনের আটার দামও টিসিবির হিসাব অনুসারেই বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সরকার চালের সর্বনিম্ন দাম নিয়ে পূর্বাপর যা বলে এসেছে, বাজারে দেখা যাচ্ছে তার বিপরীত চিত্র। সিন্ডিকেট দমন হয়নি, সরকারি দলের নাম করে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। বাজার তদারকিও শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোতে। হালচাল দেখে সার্বিক অর্থে মনে হচ্ছে, চাল নিয়ে যে চালবাজি চলছে তা ক্রমাগত বাড়বে এবং তার নিরুপায় শিকার হবে সাধারণ মানুষ। কাজেই সরকারকে এখনই সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজদের রাশ টেনে ধরতে হবে। বন্ধ করতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের তত্পরতা। অর্থাত্ বাজার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।

No comments

Powered by Blogger.