আইনজীবীর দাবি-‘পাকিস্তানের অখণ্ডতা চেয়ে অপরাধ করেননি মুজাহিদ’

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের আইনজীবীর দাবি, পাকিস্তানের অখণ্ডতা চেয়ে মুজাহিদ কোনো অপরাধ করেননি। একাত্তরে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভারতের আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষার জন্য বক্তব্য দিয়েছেন। সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ হতে পারে না।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামির আইনজীবী তাজুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার এ দাবি করেন। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনালে (এক সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন) মুজাহিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনকালে তিনি আরও বলেন, একাত্তরে মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘ করতেন। জামায়াত ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ আলাদা। কিন্তু তিনি কখনো বলেননি ‘যাও, হত্যা করে এসো’। তাঁর প্রশ্ন, ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান কেন অপরাধ হবে? এ সময় মুজাহিদ আসামির কাঠগড়ায় চেয়ারে বসে ছিলেন।
মুজাহিদের আরেক আইনজীবী মুন্সী আহসান কবীর অভিযোগের বিষয়ে শুনানিতে আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন মুলতবির আরজি জানান। তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন লেখা এখনো শেষ হয়নি। এ জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য শুনানি মুলতবি প্রয়োজন। ট্রাইব্যুনাল আবেদন ছাড়াই শুনানি শুরু করতে বলেন।
আহসান কবীর বলেন, আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ৩২টি অভিযোগের ২৪টিতে তাঁর বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া বক্তব্যের উল্লেখ আছে। তিনি দাবি করেন, এতে কীভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে তা বোঝাতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আলবদর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। আইনজীবী জানান, একাত্তরের জানুয়ারিতে মুজাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ওই সময় ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় কমান্ডে ১২৫-১৩০ জন ছাত্র ছিলেন। আইনজীবী বলেন, সংগঠনের অবস্থা কতটা খারাপ হলে একজন (মুজাহিদ) জানুয়ারিতে ঢাকা জেলার সভাপতি, জুলাইতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেক্রেটারি ও অক্টোবরে সভাপতি হতে পারেন। উনি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, কিন্তু কোনো অপরাধের সঙ্গে নয়।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, সংগঠন ছোট কি বড় ছিল, এটা বিষয় নয়। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়েছে এবং আসামি ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আসামিপক্ষের বক্তব্য জানতে চান।
এ সময় তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বলতে চায় জামায়াত ও ছাত্রসংঘ পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী বাহিনী ছিল। তিনি যুক্তি দেখান, আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ৪(২) ধারায় ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়ে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ দেশের নির্বাহী প্রধান, তাহলে দেশে যত অপরাধ ঘটবে সবকিছুর জন্য কি তিনি দায়ী থাকবেন? তাহলে দেশে যত মামলা হয়, সব মামলার প্রধান আসামি হবেন প্রধানমন্ত্রী। নির্মূল কমিটি জামায়াতকে নির্মূল করতে বলছে। জামায়াতকে নির্মূল করার দায়িত্ব তাদের কে দিয়েছে?
ট্রাইব্যুনাল বলেন, তারা জামায়াত নির্মূল কমিটি নয়, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তাজুল ইসলাম বলেন, তাঁরাই তো জামায়াতকে নির্মূল করতে বলছেন, মাঠের মধ্যে ফাঁসি দিয়ে ফেলেছেন।
শুনানির এ পর্যায়ে যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় আসামিপক্ষ কার্যক্রম মুলতবির আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের অসমাপ্ত শুনানির জন্য ২৮ মার্চ দিন ধার্য করেন।
আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে আদেশ ২৭ মার্চ: বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি না—এ বিষয়ে ২৭ মার্চ আদেশ দেবেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল গতকাল এ বিষয়ে দেওয়া আদেশে বলেন, কার্যপ্রণালি বিধিমালার ২৬(১) বিধি অনুসারে, অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে আদেশের সময় ট্রাইব্যুনালের সব সদস্যকে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু আজ (গতকাল) একজন সদস্য অনুপস্থিত আছেন। এ জন্য ২৭ মার্চ এ আদেশ দেওয়া হবে। ওই দিন পর্যন্ত আসামি জামিনে থাকবেন।
গতকাল আদেশের দিন ধার্য থাকায় আলীম ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। আবদুল আলীমের জামিনের মেয়াদ ছিল গতকাল পর্যন্ত। ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুসারে ২৭ মার্চ তাঁকে হাজির হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.