রাজনীতিতে অ্যাসাঞ্জ by একরামুল হক শামীম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি প্রকাশ করে দিয়ে সারাবিশ্বেই আলোচনায় উঠে এসেছে উইকিলিকস। গত কয়েক বছর ধরে উইকিলিকস ও এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। একদল বলছে, গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে উইকিলিকস বিকল্পধারার সাংবাদিকতার সূচনা করেছেন।

অন্যদিকে আরেক দল বলছে, উইকিলিকস যেভাবে গোপন নথি প্রকাশ করেছে তা নীতিবহির্ভূত। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানাবিধ চাপের মুখে পড়েছে উইকিলিকস। উইকিলিকস মূলত চলে অর্থনৈতিক সহায়তার ওপর। কিন্তু উইকিলিকসের তথ্যমতে, ৭ ডিসেম্বর ২০১০ থেকে উইকিলিকসের প্রতি বেআইনি অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপিত হয়েছে। ফলে একটা পর্যায়ে উইকিলিকস তাদের নিয়মিত প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। পরে অবশ্য মাত্র কয়েক মাস নতুন করে অল্প পরিসরে নথি প্রকাশ শুরু করেছে উইকিলিকস। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। সুইডেনে সংঘটিত যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যে গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন। তাকে বর্তমানে সুইডেনে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চলছে। অবশ্য অ্যাসাঞ্জ আদালতের প্রত্যর্পণ আদেশের বিরুদ্ধে লড়ছেন। এই আদেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে তিনি আপিল করেছেন। এখন চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছেন।
উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ নতুন পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়েছেন। রাজনীতিতে নামতে যাচ্ছেন সাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। উইকিলিকসের নথি প্রকাশকে কেন্দ্র করে রাজনীতিকদের সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন অ্যাসাঞ্জ ও উইকিলিকস। ফলে অ্যাসাঞ্জ হয়তো ভেবেছেন রাজনীতির মাধ্যমেই তার শক্ত জবাব দেওয়া সম্ভব হবে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ার আগামী সিনেট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিকল্পনা করছেন। উইকিলিকসের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জানা গেছে, অ্যাসাঞ্জ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের আসনে প্রার্থিতা জমা দেবেন। এতে করে প্রধানমন্ত্রীকে মোক্ষম জবাব দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, জুলিয়া গিলার্ড উইকিলিকসের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন।
অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সিনেট নির্বাচনে অংশগ্রহণে অ্যাসাঞ্জের কোনো আইনি বাধা থাকবে কি-না তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব কি-না তাই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ার আইনে কোনোরকম ফৌজদারি বিচার কার্যক্রমের মুখোমুখি হননি তাই তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশও জানিয়েছে, গোপন নথি প্রকাশ করে অ্যাসাঞ্জ কিংবা উইকিলিকস অস্ট্রেলিয়ার কোনো আইন ভঙ্গ করেননি। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারলেও অ্যাসাঞ্জের জন্য বড় বাধা হবে কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন না পাওয়া। অস্ট্রেলিয়ার সিনেট নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়া জয়লাভ প্রায় অসম্ভব। বর্তমান পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ দেয়। ৭৬ জন সিনেটরের মধ্যে মাত্র একজন কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। অবশ্য জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বড় পুঁজি তার ও উইকিলিকসের জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে জিতে গেলে হয়তো উইকিলিকস ঘুরে দাঁড়াবে। উইকিলিকসের স্বার্থেই অ্যাসাঞ্জের নির্বাচন জয় জরুরি বলে মনে
করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.