মুরগির খামারগুলো রক্ষা করুন-আকাশচুম্বী ডিমের দাম

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তো বটেই, মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে ডিমের দাম। প্রথম আলোয় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে এখন এক হালি ডিমের দাম ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। পরদিন পাইকারি বাজারে ডিমের দাম আরও বেড়ে গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

এমনিতে সাধারণ আয়ের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যচাহিদা মেটানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। মাছ-মাংস-দুধ এমনই দুর্মূল্য হয়ে উঠেছে যে কেবল অবস্থাপন্ন পরিবারগুলোই নিয়মিত এসব আমিষ খাদ্য কেনার সামর্থ্য রাখে। সেদিক থেকে ডিম অপেক্ষাকৃত অধিকতর জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা মেটানোয় ভূমিকা রাখত। সেই ডিমের দামও যদি এমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, তাহলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর পুষ্টি পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে বাধ্য। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক বছরে ডিমের দাম বেড়েছে ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বলাবাহুল্য, ডিমের দাম এর আগে কখনোই ডজনপ্রতি ১০০ টাকায় ওঠেনি; এবার রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
এমন লাফিয়ে লাফিয়ে ডিমের দাম বাড়ার কারণ কী? খামারি ও পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা দেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রমণের কারণেই মূলত ডিম ও মুরগির মাংসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ব্যাপক হারে মুরগি মারা গেলে ডিমের সংকট হবে, আর সংকটের ফলে দাম বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে একই সঙ্গে এটাও দেখা দরকার, এই সংকটের সুযোগ নিয়ে ডিম ব্যবসায়ীদের একাংশ যেন অযৌক্তিকভাবে বেশি না বাড়াতে পারে। রাজধানীর বাজারগুলোতে দামের তারতম্য লক্ষ করা যায়, তারতম্য যত সামান্যই হোক, সেটার কারণ কী, তাও দেখার বিষয়। এলাকা ও বাজারভেদে ডজনপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা তারতম্য হলে এখানে অতিরিক্ত মুনাফালোভীদের কারসাজি থাকা অসম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নজরদারি দরকার।
তার চেয়েও জরুরি বিষয়, সারা দেশের মুরগির খামারগুলোতে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ যে আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং পোলট্রিশিল্পকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে তৎপর হওয়া। এক সরকারি হিসাব বলছে, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ৮৪ হাজার মুরগি নিধন করতে হয়েছে গত এক মাসে, বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। প্রতিবছরই মুরগির খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, গত দুই বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার খামার। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু খামারিরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলছেন, টাকা ছাড় করা যায়নি বলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হয়নি, আগামী মাস থেকে দেওয়া হবে। আমাদের মনে হয়, পোলট্রিশিল্পের এই গুরুতর সংকটের প্রতি সরকারের আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা যেন অর্থের অভাবে এই ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করে না দেন, সে জন্য তাঁদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করে সুলভে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.