সংঘবদ্ধ সহিংসতার ব্যাধির প্রতিকার প্রয়োজন-ছাত্রলীগের ক্রোধ ও একটি জীবন

ছাত্রলীগের ক্রোধের মূল্য একটি জীবন, ১৫ জনের জখম হওয়া, সম্পদ ধ্বংস ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কার্যদিবস। সামান্য চশমা কেনাকে কেন্দ্র করে এত কিছু ঘটতে পারা প্রমাণ করে, সহনশীলতা ও শুভবুদ্ধির কত অভাব আমাদের?

পুরান ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা পাটুয়াটুলী। সেখানে চশমা কিনতে গিয়ে বচসা হয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর। কর্মীরা ২৫০ টাকার চশমা ১০০ টাকায় কিনতে চান। দোকানকর্মীর ‘অপরাধ’ তিনি ওই দামে বিক্রি করতে চাননি। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে এটা ঔদ্ধত্য মনে হয়েছে, তাই শাস্তি দিতে দলবল নিয়ে চড়াও হলেন তাঁরা। দোকানকর্মী ইমরানকে তাঁরা ছুরিকাঘাত করে চলে যান। এরপর ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ হয়ে গুটিকতেক ছাত্রলীগের কর্মীকে শাস্তি দিতে সড়ক বন্ধ করলেন, হামলা করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনে, ভাঙলেন বাস। এবার পাল্টা হামলায় যোগ দিলেন জগন্নাথের সাধারণ ছাত্ররাও। একেই বলে শঠে শাঠ্যাং। এক অন্যায়ের প্রতিকারে আরও অন্যায় ঘটানো হলো। ফলে গোলমালের মধ্যে পড়ে আতঙ্কে প্রাণ হারালেন এক বৃদ্ধ পথচারী। অবশেষে পুলিশের লাঠিপেটা ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের মাধ্যমে দাঙ্গাবাজদের নিরস্ত্র করা সম্ভব হয়।
ঘটনাটা নতুন নয়। বিভিন্ন এলাকার মধ্যে ছাত্র বনাম বাসশ্রমিক কিংবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে, মহল্লার সঙ্গে মহল্লার মধ্যে এ রকম মারামারি প্রায়ই ঘটছে। এসব ঘটনায় মানুষের ভেতরকার সুপ্ত হিংসা ও সহিংস মনোভাব অবাধে প্রকাশিত হয়। তুচ্ছ ঘটনা থেকে এ রকম রক্তপাত ও প্রাণহানির ঘটনায় আমাদের তাই লজ্জিত ও মর্মাহত হওয়া ছাড়া উপায় কী? ঘটনার শাস্তি হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছয় ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। আশা করব, যাঁরা গোলমালের সূত্রপাত করেছেন, যাঁরা সাধারণ ছাত্রদের উসকানি দিয়েছেন, ছাত্রলীগের সেসব কর্মী উপযুক্ত শাস্তি পাবেন।
কিন্তু ব্যবসায়ীরা কি পারতেন না থানার মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার চাইতে? আইনের মাধ্যমে পুলিশের মাধ্যমে এসব ঘটনা থামানো বা শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এ রকম সহিংস মনোভাব দূর করা না গেলে, বারবার এমন পরিস্থিতি ঘটতেই থাকবে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা-বর্গের মানুষের জোটবদ্ধ ক্ষমতা যেন উত্তেজনা ও সহিংসতাকে এভাবে অবলম্বন না করে, তার জন্য সবারই হুঁশিয়ার হওয়া দরকার।

No comments

Powered by Blogger.