দুর্বৃত্তদের পাকড়াও করুন, শাস্তি দিন-ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। গত সোমবার তিনি লক্ষ্মীপুরে গিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম হত্যার আসামি এইচ এম বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ড মওকুফের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সভায় যোগ দিতে।


প্রতিবাদ সভা শেষে দলীয় সাংসদ শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর বাসায় যাওয়ার পথে পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতা আবু তাহেরের বাসভবনের সামনে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে দুটি গাড়ি ভাঙচুর ও সাংবাদিকসহ কয়েকজনকে আহত করে। বিএনপি নেতাদের দাবি, আবু তাহেরের লোকজনই গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আবু তাহের বলেছেন, তিনি ওই সময় ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় ছিলেন।
ঢাকায় তাঁর অবস্থান প্রমাণ করে না যে, তিনি বা তাঁর লোকজন হামলার সঙ্গে জড়িত নন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের গাড়িবহরের ওপর হামলা হয় আবু তাহেরের বাড়ির সামনে। তিনি ওই দিন ঢাকায় থাকলেও তাঁর সমর্থক-সহযোগীরা লক্ষ্মীপুরেই ছিলেন। পৌর মেয়রের বাড়ির সামনে অন্য পক্ষের লোক এসে হামলা চালাবে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও রহস্যজনক। বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশটি পূর্বনির্ধারিত এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যে সেখানে যাবেন, তা নিশ্চয়ই পুলিশের অজানা ছিল না। কেন তারা বিএনপি নেতাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিল না? গাড়িবহরে হামলার সময় পুলিশের দেখা না মিললেও হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেছেন, কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। জনজীবনে শান্তি রক্ষা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী ঘটনার হোতাদের ধরতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হবে কেন?
লক্ষ্মীপুরে সব সন্ত্রাসের মূলে রয়েছে বিচারহীনতা। ২০০০ সালে বিএনপি নেতা ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। ওই হত্যার বিচারও হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ওই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। এটি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। নুরুল ইসলাম হত্যা ছাড়াও বিপ্লব একাধিক মামলায় দণ্ডিত আসামি। এই দণ্ড মওকুফের ঘটনা দেশকে বিচারহীনতা ও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেবে।
মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলার হোতাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বুঝতে হবে, এর পেছনে কোনো রহস্য আছে। আমরা আশা করব, লিখিত অভিযোগ না পাওয়ার হাস্যকর অজুহাত না দেখিয়ে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ গাড়িবহরে হামলাকারীদের পাকড়াও করে বিচারে সোপর্দ করবে। অপরাধী যেই দলের হোক—তার বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.