চাষিদের নিবৃত্ত করুন আর সরকার হয়ে উঠুক তৎপর-বিষাক্ত শুঁটকি

খাদ্যে ভেজাল আর কোনো বিরল ব্যাপার নয় বাংলাদেশে। অবিরলভাবেই সব ধরনের খাদ্যে, সব ধরনের ভেজাল ও বিষাক্ত দ্রব্য মেশানো চলছে। তবে, সবচেয়ে বেশি বিষক্রিয়ার শিকার সম্ভবত শুঁটকি বা শুকানো মাছ। ভেজাল নয়, শুঁটকি তৈরির সময় সরাসরি কীটনাশকই ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব শুঁটকি খেয়ে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, ধীর বিষক্রিয়ার কবলে পড়ে


বিভিন্ন রকম ব্যাধি শরীরে দানা বাঁধছে; এর মধ্যে ক্যানসার অন্যতম। তার পরও শুঁটকির মধ্যে বিষ আর বিষ মেশানো শুঁটকির কারবার থেমে নেই। দেখার কি তাহলে কেউ নেই?
দেশে প্রতিবছর প্রায় সোয়া এক লাখ মেট্রিক টন শুঁটকি তৈরি হয়। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিরাট এলাকাজুড়ে জেলেরা শুঁটকি তৈরি করেন। প্রায় সবাই রোদে শুকানোর সময় শুঁটকিতে যাতে পোকামাকড় না লাগে, সে জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ও বিষের ব্যবহার খোলাখুলিভাবেই হয়ে আসছে। এ রকম এক শুঁটকিচাষির ভাষ্য হলো, এসবে শরীরের তেমন ক্ষতি হয় না। অধিকাংশ জেলেই শুঁটকিতে বিষ মেশানোর পক্ষে এবং তাঁরা বলতে ভালোবাসেন যে রোদে শুকানোর পর কিংবা রান্নার পর এসব বিষের কোনো রেশ থাকে না। অথচ ব্যাপারটা একদম উল্টো।
ময়মনসিংহে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দেখিয়েছেন, শুঁটকি না খাওয়া মানুষের তুলনায় শুঁটকি খায়, এমন ধরনের ব্যক্তিদের শরীরে বিষাক্ত ডিডিটির পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব সহজেই নিরূপণ করা না গেলেও বলা যায়, দেশের লাখ লাখ মানুষ এই বিষাক্ত খাদ্য খেয়ে স্বাস্থ্য-বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। অথচ, সামান্য আয়াসেই কীটনাশক ছাড়াই শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা যায়। গত শনিবারের প্রথম আলোয় এ বিষয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
আমরা আশা করব, শুঁটকি ভক্ষণকারীরা যেন সচেতন হয়। কিন্তু মূল আশা শুঁটকিচাষিদের ব্যাপারে। তাঁদের এক্ষুনি এই ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এই বিরত রাখার ব্যাপারেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর জরুরি উদ্যোগ প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.