হোটেল থেকে সাংসদ তাপসের সচিবের লাশ উদ্ধার

রাজধানীর একটি হোটেল থেকে গতকাল শুক্রবার সাংসদ ফজলে নূর তাপসের প্রেস সচিব শাহেদ-উদ-দৌলার (৪০) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী শাহেদ-উদ-দৌলাকে সাংসদ তাপসের প্রেস সচিব বললেও পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তিনি রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন।


পরিবারের অভিযোগ, এ ঘটনায় পুলিশের আচরণ সন্দেহজনক। কারণ, পুলিশ তাঁদের কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের কাজ শেষ করেছে। তবে পুলিশ কোনো অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছে।
সাংসদ ফজলে নূর তাপস যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য জানা যায়নি।
রমনা থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, খবর পেয়ে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেগুনবাগিচার চট্টলা হোটেলের একটি কক্ষ থেকে শাহেদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কক্ষের দরজা ভেতর থেকে সিটকিনি দেওয়া ছিল। ভেন্টিলেটর ভেঙে হাত দিয়ে সিটকিনি খুলে ভেতরে ঢোকে পুলিশ।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, হোটেলের কর্মচারী অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেলে পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
ওসি বলেন, সারা কক্ষে ছড়ানো-ছিটানো ছিল আসবাব। খাটের পাশে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন শাহেদ। ঠোঁট, হাত, পিঠের বাঁ পাশসহ শরীরের কয়েকটি জায়গায় হালকা আঘাতের দাগ ছিল। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আগে এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এর আগে বেলা দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে দেখা যায় নিহতের স্বজন ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ভিড়। অনেকেই কাউকে না জানিয়ে মরদেহ মর্গে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সুরতহাল প্রতিবেদনে শরীরে আঘাত থাকার কথা উল্লেখ না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁরা। কিছুক্ষণ পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রউফ মর্গে এলে সবার প্রশ্নের মুখে পড়েন। পরে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।
জানতে চাইলে আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম সুরতহালে কালচে দাগের কথা লিখেছি। হয়তো ভাষাগত সমস্যা ছিল।’
নিহতের বোন শিরিন মহল ও ভাই আরিফ-উদ-দৌলা প্রথম আলোকে বলেছেন, শাহেদ সাংসদ ফজলে নূর তাপসের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। তবে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, তিনি ছিলেন সাংসদের প্রেস সচিব।
মর্গ প্রাঙ্গণে শিরিন মহল বলেন, শাহেদ অবিবাহিত ছিলেন। রামপুরার বনশ্রীতে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। তবে রাজনীতি করায় অনেক রাতে বাসায় ফিরতে হতো বলে মাঝেমধ্যে ওই হোটেলে থাকতেন তিনি।
শিরিন মহল বলেন, সবশেষ গত বুধবার সকালে এক আত্মীয়ের সঙ্গে শাহেদের কথা হয়। এরপর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মুঠোফোন ধরেননি। তাঁর অভিযোগ, শাহেদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শিরিন মহল বলেন, পুলিশ কাউকে কিছু না জানিয়ে মরদেহ মর্গে নিয়ে এসে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের কাজ শেষ করেছে। এ ব্যাপারে তাঁরা থানায় হত্যা মামলা করবেন।
হোটেলের মালিক আলী আজগর সাংবাদিকদের বলেন, এক বছর ধরে কিছুদিন পর পর শাহেদ-উদ-দৌলা ওই কক্ষে থাকতেন।
তবে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবারকে জানিয়েই সবকিছু করা হয়েছে। পরিবার লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ করলে পুলিশ তা মামলা হিসেবেই নেবে। এরপর ঘটনার তদন্ত করা হবে।
নিহত শাহেদ-উদ-দৌলাইত্তেফাক-এর সাবেক নির্বাহী সম্পাদক আসাফ-উদ-দৌলার ছেলে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে।

No comments

Powered by Blogger.