বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়-বিধিমালা প্রণয়ন হোক যুগোপযোগী

বাংলাদেশে বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রসারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সুবাদে বিদেশি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাও এখানে কাজ করতে শুরু করেছে। এগুলো বিভিন্ন নামে থাকলেও সরকারের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ এদের ওপর এযাবৎ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।


এই আলোকে দেশে কার্যরত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই সূত্রেই সরকার নতুন একটি বিধিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের আদলে তৈরি করা এই বিধিমালাটি এখন সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বিধিমালার ভিত্তিতে এখন থেকে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাগুলোকে টিউটোরিয়াল হোমস নামে আখ্যায়িত করতে বলা হয়েছে।
তবে বিদেশি এসব বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সরকারের তেমন কোনো নজরদারি আছে বলে মনে হয় না। এর প্রমাণ পাওয়া যায় রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে এগুলো সম্পর্কে তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পরও দীর্ঘদিন গত হয়ে গেছে, কিন্তু তেমন কোনো তথ্য সরকারের কাছেও আছে কি না সন্দেহ। তা না হলে বঙ্গভবন থেকে চাওয়া এসব তথ্য তারা দিতে এত গড়িমসি করত না। এ ব্যাপারে আদালতেরও নির্দেশনা রয়েছে। সেখানেও বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা প্রকাশের জন্য।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন হয়েছে ২০১০ সালে। আর ক্রসবর্ডার হায়ার এডুকেশন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে সম্প্রতি। এই বিধিমালা করতে সরকার ১৪ মাস সময় ব্যয় করেছে। এতেও বোঝা যায়, বিষয়টির ওপর সরকার কতটা গুরুত্ব প্রদান করছে। অথচ প্রতারণা বন্ধসহ গুণগতমানের প্রয়োজনে এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই বিধিমালা অপরিহার্য।
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করলে দেশের জন্য ভালোই হবে। কিন্তু নিয়মকানুন মেনে চলার বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। তা না হলে শিক্ষার্থীদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। বিদেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও এ দেশের শিক্ষা সম্প্রসারণে কাজ করতে পারে। এটা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজনীয় হওয়ার পরও নিয়ন্ত্রণহীন হওয়াটাকে সমর্থন করা যায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের ইতিহাস আছে। আজকের প্রযুক্তির যুগে এসে আমরা তার ব্যবহার করতে পারি। তবে সে ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক স্বার্থ ও উদ্দেশ্যটাই যেন বড় না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। বিদেশি উদ্যোগকে বাধা দেওয়ার কথা ভাবা যায় না। সেদিক থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগটি ভালো। তবে আইন করে পদ্ধতির নাম পরিবর্তন করলেই যথেষ্ট হবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়নেও সরকারকে ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়েও প্রায়ই পত্রিকান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার।


No comments

Powered by Blogger.