ভুয়া চালক-দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

অপরাধীরা জোটবদ্ধ হয়ে ত্রাস সৃষ্টি করবে, এমনও কি হতে দেওয়া যায়? দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আমাদের এখানে তা-ই হতে দেখা গেছে। তাদের জোটবদ্ধ আন্দোলন ও বেপরোয়া আচরণ দেখে মনে হতে পারে, অপরাধ করতে দেওয়াটাই যেন আইনগত অধিকার হওয়া উচিত। গত রবিবার ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় কিছু বাস-শ্রমিকের আচরণ দেখে তা-ই মনে হয়।

বেআইনি কাজ করতে দেখে সেদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত হাতেনাতে কিছু গাড়িচালককে ধরে ফেলেন। তাদের কারো কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স ত্রুটিপূর্ণ ছিল, দিনের বেলায় মাল বোঝাই করে রাজধানীর ভেতর ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছিল, একজন আবার গাড়িচালকের আসনে বসেই মোবাইল ফোনে কথা বলছিল কারো সঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে আদালত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেন। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ সেসব চালককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আশা করা গিয়েছিল, সেসব অপরাধী কারাভোগ করবে। কিংবা অন্য যে শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল, তা-ও ভোগ করবে। পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায় এবং সেখানে শ্রমিকরা দারুসসালাম পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি এলোমেলো করে রেখে দিয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। হাজার হাজার যাত্রীর জন্য এই কার্যক্রম খড়গের মতো হয়ে দাঁড়ায়। একবার অন্যায় করে যেন তাদের তৃপ্তি হয়নি। সেই অপরাধের দায়মুক্তির দাবিতে তারা আরো বড় ধরনের অপরাধ করে বসে; যে অপরাধের কারণে গোটা ঢাকা শহরে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়। আর এই রমজানে মানুষকে প্রচণ্ড দুর্ভোগে পড়তে হয় এই যানজটের কারণে।
অন্যদিকে বিচারাধীন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে জামির হোসেন নামের আরেক ড্রাইভার, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদসহ পাঁচজনকে চাপা দিয়ে হত্যা করার। পুলিশ রিমান্ডেও তাকে আনা হয়েছে। জামির হোসেন ওই দুর্ঘটনার জন্য কতটা দায়ী কিংবা সে আদৌ মুক্তি পাবে কি না এটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। তবে সাধারণ মানুষ চায়, জামির যদি দোষী হয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সেই ড্রাইভারকে যাতে শাস্তি প্রদান না করা হয়, তাকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়, তেমন দাবি উত্থাপিত হয়েছে বাসচালকসহ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গায় বাস ধর্মঘটও পালিত হয়েছে। ঈদের প্রাক্কালে এভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর পেছনে কোনো অশুভ শক্তির ইন্ধন আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত।
মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ নিহত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচার-প্রত্যাশা জেগে ওঠে তীব্রভাবে। এর আগে যেসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে, তাদের পরিবার-পরিজনকেও তাই রাজপথে নেমে আসতে দেখা গেছে। প্রত্যেকের একই কথা, চালকের দোষে যদি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রাণহানি ঘটে, তাহলে তার বিচার হতে হবে অবশ্যই। এই দাবি অবশ্যই যে কেউ করতে পারে। এটা নাগরিকের অধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্যও বটে। কিন্তু গাবতলীতে শ্রমিকদের মুখ থেকে উচ্চারিত স্লোগানগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শ্রমিকরা যেন কোনো আইনই মানতে চায় না। তারা সেখানে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয় বলে জানা গেছে। কারণ ইলিয়াস কাঞ্চন এই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো কোনো জনপ্রতিনিধির কথা সংবাদে প্রকাশ হয়েছে, যাঁদের আন্দোলনে উসকানিদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গাবতলীর ঘটনায় স্থানীয় এমপির নামও উচ্চারিত হয়েছে। এই অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে তা হবে অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবে না। মানুষেরও নিরাপত্তা বিঘি্নত হবে। জননিরাপত্তার প্রয়োজনে আইনকে ঊধর্ে্ব স্থান দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি নাগরিকই যাতে আইন মেনে চলে, সেই পরিবেশও সৃষ্টি করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.