মত ও মন্তব্য-সাংবাদিকতার অধিকার, মর্যাদা এবং 'দি ইকোনমিস্ট by হারুন হাবীব

যা ঘটে, যা সত্য-তা জানার অধিকার রাখে মানুষ। পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আবহে অধিকারটি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে না হলেও মাঝেমধ্যে সেখানেও ঝড়তোলা বিতর্ক ঘটে। তবে অনেক উন্নয়নশীল দেশে বিষয়টি এখনো দাবির।


দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে পাশ্চাত্য দেশেও নামিদামি সংবাদমাধ্যমের কিছু কার্যকলাপে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার গর্ব প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ ওঠে। উদাহরণ অনেক। অতিসম্প্রতি মার্ডক সাম্রাজ্যের পতন, 'নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড'-এর বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ নানা দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যেতে পারে এসব অনৈতিকতার। বলতে দ্বিধা নেই, পুরনো গণতান্ত্রিক, অর্থনীতিতে শক্তিশালী এবং জ্ঞানবিজ্ঞানে অগ্রসর হওয়ার কারণে পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলো একসময় প্রাচ্যের উপনিবেশমুক্ত দেশগুলোতে নানা বিষয়েই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে তাদের সব কিছুকে ভালো দৃষ্টান্ত বলে গ্রহণ করার আর কারণ থাকছে না। এর পরও আমি পাশ্চাত্যের সাংবাদিকতাকে সার্বিক অর্থে প্রশ্নবিদ্ধ করার পক্ষপাতী নই। সবাই এক মানসিকতার, এক দৃষ্টিভঙ্গির হবেন_তা ভাববার কারণ নেই।
আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের মূলধারার সাংবাদিকতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে স্বাধীন এবং প্রগতিশীল, যা নাগরিককে সত্য ও সঠিক তথ্য পরিবেশন করতে সক্ষম। দলীয় বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থ প্রচারে যাঁরা নানা সময়ে মনোনিবেশ করেন, তাঁরা অবশ্যই ব্যতিক্রম। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমাদের সাংবাদিকতা, দুঃখজনক কিছু ব্যতিক্রম বাদে, বস্তুনিষ্ঠতার দাবিদার। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বস্তুনিষ্ঠতার অভাবে এককালে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক কদর ছিল এ দেশে। সে অবস্থার গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। এর একটি বড় কারণ দেশীয় গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক আবহে দৃঢ় পদচারণায় এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারাকে থামিয়ে দেওয়া সহজ হবে না।
তবে যুগের ঘূর্ণাবর্তে মুক্ত-স্বাধীন সাংবাদিকতার নতুন কিছু নিয়ন্ত্রক বা প্রতিপক্ষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, যা বেশ আতঙ্কের। আগে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রধান বা প্রায় একচ্ছত্র প্রতিপক্ষ ছিল সরকার বা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। এখন সে প্রতিপক্ষ ক্রমান্বয়েই বেড়ে চলেছে। করপোরেট পুঁজি, বিগ বিজনেস, ধর্মীয় মৌলবাদ, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি, সংঘবদ্ধ চোরাচালানি চক্র, মালিক-সম্পাদকের জবরদস্তি অধিষ্ঠান থেকে শুরু করে সংবাদকর্মীদের তীব্র রাজনৈতিক বিভাজন_এসব নতুন প্রতিপক্ষের কয়েকটি, যা অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়।
তবে আমার আজকের বিষয় দেশীয় সাংবাদিকতার হালচাল নয়, বরং পাশ্চাত্য দেশের এমন একটি পত্রিকার সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন, যে পত্রিকাটি আবার বহুকাল ধরেই আমার নিজের প্রিয়। বলতে দ্বিধা নেই, লন্ডনের 'দি ইকোনমিস্ট' একটি প্রিয় পত্রিকা আমার, যার প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ বিশ্বনন্দিত হয়ে আসছে বস্তুনিষ্ঠতার কারণে। এই পত্রিকাটির অতিসাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন পড়ে আমার মতো গুণগ্রাহীরও মনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে কি 'দি ইকোনমিস্ট'ও গুণগত বা তথ্যগত বস্তুনিষ্ঠতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে? কেন? এই কেনর উত্তর আমার কাছে নেই। তবে যেহেতু 'দি ইকোনমিস্ট' আমার দেশের ঘটনাবলি নিয়ে ইচ্ছামাফিক মন্তব্য করেছে, যেহেতু পত্রিকাটি বাংলাদেশের নির্বাচনী ফলাফল এবং বাংলাদেশের সঙ্গে পড়শি দেশ ভারতের নতুন আশা জাগানিয়া সম্পর্ক নিয়ে বিদ্রূপ করতেও ছাড়েনি, যেহেতু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও সে অবমূল্যায়ন করতে ছাড়েনি; সেহেতু বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে সে ভ্রান্তি ও বিদ্রূপের প্রতিবাদ করার ন্যায্য অধিকার আমার আছে। সে অধিকারবোধ থেকেই এ লেখাটি লিখছি। আজকের দিনের যেকোনো পত্রিকা বা গণমাধ্যম শুধু দেশীয় নয়, সব অর্থেই আন্তর্জাতিক। ইংরেজি ভাষায় হলে তো কথাই নেই; সবাই পড়বে এবং প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া জানাবে। 'দি ইকোনমিস্ট'-এর সাম্প্রতিক দুটি প্রতিবেদন নিয়ে আমি যে প্রতিক্রিয়াটি লিখছি, তা মুখ্যত গণমাধ্যমের আন্তর্জাতিকতার সুবাদেই নয়, প্রবল বিতর্কিত মন্তব্যগুলো আন্তর্জাতিক এই প্রকাশনার মর্যাদার পরিপন্থী বলে।
পরপর দুটি বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে 'দি ইকোনমিস্ট'। একটি জুলাই ৩০ এবং অন্যটি আগস্টের ১৩ তারিখে। প্রথম প্রতিবেদনে পত্রিকাটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে সে প্রকাশ্য বিদ্রূপ করেছে, প্রায় তিন বছর পর এটিও 'আবিষ্কার' করেছে যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট তিন-চতুর্থাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিল শুধুই 'ভারতের ব্যাগভর্তি টাকা ও উপদেশ' নিয়ে! ভাবতে অবাক লাগে, 'দি ইকোনমিস্ট'-এর মতো একটি স্বনামধন্য পত্রিকা বিশেষ মহল দ্বারা কতটা প্রভাবিত হলে এমন লাগামহীন মন্তব্য এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের মর্যাদাপরিপন্থী বক্তব্য ছাপতে পারে! আরো বিস্ময়কর, তার বক্তব্যের সমর্থনে পত্রিকাটি একটিও দলিল বা প্রমাণ উপস্থাপন করেনি, যা সুস্থ সাংবাদিকতার সম্পূর্ণ নীতিবিরুদ্ধ। না, 'দি ইকোনমিস্ট' এখানেই থামেনি, তারা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চলতি প্রক্রিয়ার বিষয়েও বিস্তর বিদ্রূপ করেছে, নানা মত ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ঠিক যেমনটা দেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও তাঁদের ধর্মীয় উগ্রবাদী সহযোগীরা করে আসছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও এমন কিছু মন্তব্য করেছে পত্রিকাটি_যা অজ্ঞানতাপ্রসূত বলেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না, বরং পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ বলেও ভাবতে বাধ্য হবেন যেকোনো ইতিহাসবিশ্বাসী মানুষ। বাংলাদেশের সরকার প্রথাগতভাবে এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে। প্রতিবাদে সরকার যা লিখেছে, যেভাবে লিখেছে, সে তার কর্মকর্তাদের নিজস্ব ব্যাপার। সে প্রতিবাদের কিছুটা অংশ ছাপিয়েছেও পত্রিকাটি। কিন্তু পরের সংখ্যায়ই দেখলাম, 'দি ইকোনমিস্ট' বাংলাদেশ নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটির দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এতটা গুরুত্ব পাচ্ছে দেখে অবশ্যই উৎফুলি্লত আমরা। কিন্তু এ প্রশ্নও রাখার অধিকার রাখেন অনেকে যে এত আগ্রহের মূল কারণ কী?
দ্বিতীয় প্রতিবেদনে 'দি ইকোনমিস্ট' বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সাফল্যের মুখ দেখেছে, বেশ 'স্বাস্থ্যবান' হয়েছে, কিন্তু দেশটির রাজনীতি ঠিক বিপরীত ধারায় 'বিষাক্ত' হয়ে উঠছে, অন্ধ গলির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ রকম মন্তব্য যদি তথ্যানুসন্ধানে সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে যেকোনো স্বাধীন পত্রিকা তা নিশ্চয়ই করতে পারে। এ মতের বিপরীতে যাঁরা আছেন, তাঁদেরও অধিকার আছে কথা বলার। কিন্তু 'দি ইকোনমিস্ট' দ্বিতীয় প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে ২০০৮-এর নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে তার আগের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে, লিখেছে-The election of December 2008 seemed to mark a watershed for Bangladesh. In the fairest poll in the country's four-decade history, the Awami League, led by Sheikh Hasina (pictured), swept to power in a landslide, on a wave of national optimism. কী দাঁড়াল শেষ পর্যন্ত? সরকার কতটা যোগ্যতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছে, রাজনৈতিক সংকট কতটা ঘনীভূত হচ্ছে এবং কোন কারণে হচ্ছে ইত্যাদি অবশ্যই আলোচনা বা বিতর্কের বিষয়। এ নিয়ে মত ও দ্বিমত প্রকাশের অধিকার রাখবেন যে কেউই। কিছু মন্ত্রণালয়ের অযোগ্যতা, অদক্ষতা এরই মধ্যে বিস্তর আলোচনার বিষয় হয়েছে। প্রশ্ন সেখানে নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, 'দি ইকোনমিস্ট' প্রথম প্রতিবেদনে যেখানে 'ভারতীয় ব্যাগভর্তি টাকা ও পরামর্শ' দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছিল, সেখানে পরের সংখ্যায়ই জানাল, ২০০৮-এর নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের চার দশকের মধ্যে 'সবচেয়ে সুষ্ঠুতম নির্বাচন'! একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এই নাটকীয় মত পরিবর্তনের অর্থ খুঁজে পাওয়া সত্যই কষ্টকর! ভুল হতেই পারে এবং তা শোধরানোর মধ্যে অগৌরবের কিছু নেই। এর পরও আশা করব, 'দি ইকোনমিস্ট' যেন নিজ উদ্যোগেই প্রকাশ করে, কেন এবং কোন বিশেষ কারণে বাংলাদেশের মানুষের নাগরিক অধিকার নিয়ে অপমান করার ভুলটি তার আগে হয়েছিল। দুঃখ হয়, যখন দেখি, একটি বিশ্বমানের মর্যাদাসম্পন্ন পত্রিকাও এতটা অসতর্ক হয় এবং দৈন্যে ভোগে।
বাংলাদেশের অনেক বিষয় নিয়েই পত্রিকাটি তার মন্তব্য উপস্থাপন করেছে। কিছু বিষয়ে ন্যায্য সতর্কতাও আছে। সব কয়টির উল্লেখ বা সমর্থন-অসমর্থনের সুযোগ সংক্ষিপ্ত এ লেখায় নেই। প্রয়োজনও নেই। তবে পত্রিকাটি যখন বলে, শেখ হাসিনা 'তাঁর বাবার' 'পারসোনালিটি কাল্ট' প্রতিষ্ঠা এবং নিজের ইমেজ বাড়াতেই কেবল সচেষ্ট, আর কিছু নয়, তখন বলতেই হয় যে 'দি ইকোনমিস্ট' রীতিমতো যেন আমাদের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদের কণ্ঠস্বর হওয়ার মতোই ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে! এ রকম অতি-সরল মন্তব্য 'দি ইকোনমিস্ট'-এর মতো পত্রিকার জন্য অবশ্যই বেমানান। শুধু তা-ই নয়, চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়েও পত্রিকাটি নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নিয়ে যত্রতত্র বাড়াবাড়ি হোক, তা কোনো সুবিবেচক মানুষই চাইতে পারেন না। যদি তা করা হয়, তা হবে রাষ্ট্রপিতার অবমূল্যায়ন। কিন্তু 'দি ইকোনমিস্ট'-এর অবশ্যই জানা উচিত, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক এবং যেভাবে তাঁকে হত্যা করে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, সে চেষ্টাকে প্রতিহত করে তাঁকে ইতিহাসের ন্যায্য সম্মানে পুনরাধিষ্ঠিত করাকে 'পারসোনালিটি কাল্ট' তৈরি বলা যাবে কোন যুক্তিতে? বাইরের কোনো দেশের বা গোষ্ঠীর প্রয়োজন না থাকুক, বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধীনতাকামী ও সুনাগরিকের জন্য ইতিহাসের এ পুনরাধিষ্ঠান একটি জরুরি কাজ।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের মতো একটি দেশের বিশ্বসম্মান বহনকারী ব্যক্তিত্ব_এতে সন্দেহ নেই। তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরাতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কতটা রাজনীতিতাড়িত হয়েছে, নাকি দেশের আইন বা নিয়মনীতির বাইরে গেছে, তার বিচার করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনূসকে 'দি ইকোনমিস্ট' বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এটি কোন ধরনের বাংলাদেশ অধ্যয়ন, বা রাজনীতি সমীক্ষা, তা বোঝা কষ্টকর আমাদের পক্ষে। এমন একটি বিশ্বমানের পত্রিকার কাছ থেকে আমরা এমন উদ্ভট যুক্তি আশা করিনি। ভারতের মহাত্মা গান্ধী নোবেল পাননি, পেয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, অমর্ত্য সেন এবং আরো কয়েকজন। তাতে কি ভারতের রাষ্ট্রপিতা হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর ঐতিহাসিক ও বর্তমান অবস্থানের বিন্দুমাত্র নড়চড় হয়েছে? পাকিস্তানের ড. আবদুস সালাম নোবেল পেয়েছেন, কিন্তু তাতে কি পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সম্মান কমেছে? নাকি তাঁর ঐতিহাসিক অবদান ক্ষুণ্ন হয়েছে? কাজেই পরিশেষে এটুকুই বলতে পারি, এ ধরনের অবিবেচক মন্তব্য 'দি ইকোনমিস্ট'-এর মতো পত্রিকার মর্যাদা রক্ষা করেনি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.