পবিত্র কোরআনের আলো-জগদ্বাসীর জন্য হজরত ঈসা (আ.) মুক্তি কামনা করলেন যেভাবে

১১৭. মা ক্বুলতু লাহুম্ ইল্লা মা আমারতানী বিহী আনি'বুদুল্লাহা রাব্বী ওয়া রাব্বাকুম; ওয়া কুনতু আ'লাইহিম শাহীদাম্ মা দুমতু ফীহিম; ফালাম্মা তাওয়াফ্ফাইতানী কুনতা আনতার্ রাক্বীবা আ'লাইহিম; ওয়া আনতা আ'লা- কুলি্ল শাইয়িন শাহীদ। ১১৮. ইন তুআ'য্যিবহুম ফাইন্নাহুম ই'বা-দুক; ওয়া ইন তাগফির্ লাহুম ফাইন্নাকা আনতাল আ'যীযুল হাকীম।


১১৯. ক্বালাল্লাহু হা-যা ইয়ানফাউ'স্ সাদিক্বীনা সিদ্ক্বুহুম; লাহুম জান্নাতুন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু খালিদীনা ফীহা আবাদা; রাদ্বিইয়াল্লাহু আ'নহুম ওয়া রাদ্বূ আ'নহু; যালিকাল ফাওযুল আ'যীম।
১২০. লিল্লাহি মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়া মা ফীহিন্না; ওয়া হুয়া আ'লা কুলি্ল শাইয়িন ক্বাদীর। [সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ১১৭-১২০]
অনুবাদ : ১১৭. তুমি আমাকে যা কিছু বলতে নির্দেশ দিয়েছ, আমি তো সেগুলো ছাড়া আর কিছুই বলিনি। (আমি বলেছিলাম) তোমরা শুধু এক আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার এবং তোমাদের সবার প্রভু। আমি যত দিন তাদের মধ্যে ছিলাম, তত দিন তো আমি তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী ছিলাম। কিন্তু যখন তুমি আমাকে 'ওফাত' দান করলে, তখন তুমিই ছিলে তাদের তত্ত্বাবধানকারী। আর তুমিই তো সব বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী।
১১৮. ঈসা বললেন, তুমি যদি চাও তাদের শাস্তি দিতে পার, কারণ এরা তোমারই বান্দা। আর যদি তুমি এদের ক্ষমা করে দাও, তাও পার, তুমি তো মহা ক্ষমতাশালী ও প্রজ্ঞাময়।
১১৯. আল্লাহ বললেন, এ হচ্ছে সেই দিন_সত্যবাদীরা তাদের সত্যবাদিতার জন্য সুফল পাবে। আর তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে, যার তলদেশ দিয়ে নদী বয়ে গেছে। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন এবং তারা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকবে_এ হচ্ছে এক মহা সাফল্য।
১২০. আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং এর মধ্যবর্তী সব কিছু, জগতে যা কিছু আছে এ সব কিছুর মালিকানা তাঁর, আর তিনি সব কিছুতেই সক্ষম।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলো সুরা মায়িদার উপসংহার। এই সুরায় খ্রিস্টানদের ভ্রান্তিগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে খ্রিস্টানদের একত্ববাদ থেকে বিচ্যুত হওয়া এবং বিভ্রান্তিকর বিশ্বাস ও আকিদাগুলো সংশোধন করার অনেক দিকনির্দেশনা এই সুরায় দেওয়া হয়েছে। ১১৭ ও ১১৮ নম্বর আয়াতে ঈসা (আ.)-এর জবানিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে সেসব কথা, যেগুলো একত্ববাদের প্রতি একনিষ্ঠ থাকার জন্য তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কার্যত দেখা গেল, ঈসা (আ.)-এর সেই মহান শিক্ষা গ্রহণ করেছে খুব কম লোকই। ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইহুদি বংশে। কিন্তু ইহুদিরা নিজেদের আত্মম্ভরিতা ও মূর্খতার কারণে তাঁর নবুয়ত স্বীকার করতে চায়নি এবং তাঁর শিক্ষাও গ্রহণ করতে চায়নি। অপরদিকে ইহুদি সম্প্রদায়ের বাইরে যেসব লোক ঈসা (আ.)-এর শিক্ষা ও শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল, তারা খুব দ্রুতই একত্ববাদ থেকে সরে গিয়ে খোদ ঈসা (আ.)-কে এবং তাঁর মাকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করাতে শুরু করে। এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা যে তিনি করেছেন, এ কথা নিজের জবানিতেই তিনি বলছেন। এরপর তিনি বলছেন, যত দিন তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন, অর্থাৎ জীবিত ছিলেন তত দিন তো তিনি তাদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর ওফাতের পর তো আর তিনি কিছু জানেন না। তখন তারা কী করেছে তা তো একমাত্র আল্লাহই জানেন। এরপর ১১৯ নম্বর আয়াতে এসেছে ঈসা (আ.)-এর ক্ষমা প্রার্থনার প্রসঙ্গ। তাঁর নিজের ইহুদি বংশ এবং সমকালের সমাজ ঈসা (আ.)-এর সঙ্গে অত্যন্ত অবিচার ও নির্মম আচরণ করেছিল। তবে ঈসা (আ.) নিজে তাদের জন্য ও জগদ্বাসীর জন্য করেছেন ক্ষমা প্রার্থনা। নবী ঈসা (আ.)-এর মহান চরিত্রের কথাই এখানে উঠে এসেছে। এরপর ১১৯ ও ১২০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজের জবানিতে বলেছেন সত্যবাদী ও সৎ লোকদের জন্য তাঁর কাছে সংরক্ষিত পুরস্কার, নিয়ামতের কথা। ১২০ নম্বর আয়াতে রাজত্বের কথা বলা হয়েছে। রাজত্ব বা ক্ষমতা পরম অর্থে একমাত্র আল্লাহর হাতে। তবে পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে রাজত্ব দান করেন। খ্রিস্টান সম্প্রদায় ঈসা (আ.)-এর পর দীর্ঘদিন রাজত্বের বাইরে ছিল। ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর অন্তত ২০০ বছর পর খ্রিস্টানরা রাজত্বের অধিকারী হয়। এরপর তাদের রাজত্বের উত্থান-পতনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সুরার সর্বশেষ আয়াতটিতে এ বিষয়টির প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.