বাংলাদেশ-ভারত মানচিত্র-নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রয়োজন

পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে যে সমস্যাটি সাধারণত তীব্র আকার ধারণ করে, যে সমস্যায় দুই পক্ষের কোনো দেশই প্রাণ থাকতে ছাড় দিতে চায় না, সেটি হলো সীমান্তরেখাসংক্রান্ত সমস্যা। সীমান্তরেখা নিয়ে এ বিতর্ক দুটি দেশের মধ্যে ভয়ানক বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি যুদ্ধবিগ্রহের আশঙ্কাও প্রকট করে তোলে।


সীমান্ত নিয়ে বিশ্বে অনেক সংঘাতের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর সে কারণেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত নকশা স্বাক্ষরের বিষয়টি একটি আনন্দের সংবাদ। প্রায় ১১ হাজার নকশা স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সীমান্ত মানচিত্র নিয়ে দীর্ঘ ৫৪ বছর পর চূড়ান্ত মতৈক্য হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে। সেই সঙ্গে ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিও পেতে যাচ্ছে পূর্ণতা। শনিবার ঢাকায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে নকশা স্বাক্ষর শুরু করেছেন নয়াদিলি্লতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহমেদ করিম এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রজিত মিত্র। উল্লেখ্য, ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তাঁর সফরের আগেই নকশা স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শেষ হবে। ড. মনমোহনের সফরকালে দুই দেশের মধ্যে অচিহ্নিত সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমান্ত অপদখলীয় জমি বিনিময়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী আগামী বছরের জুন মাসে ওই সব এলাকার সীমানা চূড়ান্ত করা হবে।
দুই দশের মধ্যে এই ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণকে আমরা অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশে বর্তমান মহাজোট ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর, অতঃপর ভারতীয় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যে এক যুগান্তকারী সম্পর্কের সূচনা করেছে। শুধু সীমান্ত নয়, ছিটমহলের দীর্ঘকালের সমস্যাকে অভিশাপমুক্ত করা এবং তিস্তার পানি বণ্টনসহ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ছোটবড় সমস্যাগুলো প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের মধ্য দিয়ে সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। সেই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা ও চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে দফায় দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুখের বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত কোনো দেশের মধ্যেই কোনো ইস্যু নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ পায়নি।
তবে মনে রাখতে হবে, সীমান্তরেখা সুনির্দিষ্ট করলেই যে সব ধরনের সমস্যা মিটে যাবে, তা নয়। সেই সঙ্গে সীমান্ত শান্তিপূর্ণ করে তোলাও জরুরি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে সীমান্ত চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও মানসিকতা বজায় রাখাটাও অতি আবশ্যক। দুই দেশ নীতিগতভাবে সমঝোতার এবং শান্তির পথে এগোচ্ছে; কিন্তু এমন পরিবেশে যদি সীমান্তে নিরীহ মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, তাহলে সম্পর্কের এই নতুন মাত্রা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে মাঠপর্যায়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের বেশি বেশি বৈঠকের আয়োজন করা সংগত হবে। সার্বিক দিক দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতায় পেঁৗছানো গেলে সেটি অন্য দেশগুলোর জন্য একটি নতুন উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে আমরা মনে করি। ড. মনমোহন সিংয়ের আসন্ন সফর সফল হয়ে উঠবে বলে আমাদের শুভ কামনা রইল।

No comments

Powered by Blogger.