ভ্লাদিমির রেদিইউহিন-ইরানকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে কি রাশিয়া

নাটকীয়ভাবেই রাশিয়া ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো উন্নত করতে শুরু করেছে। আর সেই সম্পর্ক উন্নয়নের পেছনে মূল কারণ হিসেবে ইরানে পারমাণবিক শক্তির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ক্রেমলিনের নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলা পাত্রোশেভের তেহরান সফরের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর সালেহী মস্কো সফর করেছেন ১৬ ও ১৭ আগস্ট।


তাঁরা উভয়েই আলোচনা করেছেন ইরানের সঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের আলোচনার বিষয়টি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারজেই লেভরভ গত নভেম্বর মাসে একটি পরিকল্পনার বিষয় উপস্থাপন করেছিলেন। সে পরিকল্পনায় ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনার বিষয়টি ধাপে ধাপে সমাধানের একটি রূপরেখা দেওয়া ছিল। লেভরভের প্রস্তাবে ছিল, ইরান পারমাণবিক প্রকল্পের প্রতিটি ধাপ সম্পর্কেই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সিকে অবহিত করবে। 'আমরা প্রস্তাব করেছি একটি রোডম্যাপ তৈরি করার জন্য। যেখানে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির চাহিদা অনুযায়ী ইরান সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার সুযোগ পাবে। আর এতে কিছুটা সময় তো লাগতেই পারে।' তিনি গত জুলাই মাসে যখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, সেখানেও তিনি বলেন, 'আমরা ইরানের নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে ইতিবাচক বলে মনে করি।' শুধু তাই নয়, তিনি এও মনে করেন, ইরানকে সহযোগিতা দান বন্ধ কিংবা হ্রাসের নীতিতেও পরিবর্তন হওয়া উচিত।
তবে রাশিয়ার পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র দেশগুলো যেখানে ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুদের বিষয়টি নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে, সেখানে রাশিয়া এ বিষয়টিকে উহ্য রেখেছে। লেভরভের সঙ্গে সালেহীর বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালেহী বলেছেন, '১৬ আগস্ট বৈঠকের বিষয়গুলোকে ইরান অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে এবং রাশিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার নীতিকে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করে।' তিনি এই প্রস্তাবকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এবং এর মধ্যে ভালো কিছু দিক রয়েছে বলেও ধারণা করেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, লেভরভের প্রস্তাবটি তেহরান লুফে নিয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতিকে তা কিছুটা হলেও নমনীয় করতে সহযোগিতা করবে।
গত বছর ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব সমর্থন করেছিল। এতে করে ইরানের সঙ্গে তাদের যে মন্দাভাব বিরাজ করতে থাকে, সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সেই অচলাবস্থাকে কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
গত ১৬ আগস্ট মস্কো সফরকালে লেভরভের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানকালে সালেহী ঘোষণা করেছেন, আগামী মাসে রাশিয়ার জ্বালানিবিষয়কমন্ত্রী সার্জেই স্মার্টকো তেহরান সফর করবেন।
লেভরভ এবং সালেহী যৌথভাবে উল্লেখ করেছেন, আঞ্চলিক কিছু সমস্যার বিষয়ে তাঁরা অভিন্ন চিন্তা করে থাকেন। যেমন উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার অস্থিতিশীলতার কথা বলা যায়। বলা যায় আফগানিস্তানের সমস্যার বিষয়েও। ইরান এবং পি-ফাইভ গ্রুপের সঙ্গে আলোচনার সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। লেভরভ বলেন, 'মস্কো উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে। আর বৈঠকের ব্যাপারটি নির্ভর করে উভয় পক্ষ কখন আলোচনার সুযোগ পাবে, তার ওপর।' যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বৈঠকের ব্যাপারে ইতিবাচক বক্তব্য দেওয়ার পরও তা যে কখন হবে, তা কিন্তু স্পষ্ট হয়নি। এদিকে মস্কো খুব ভালো করেই জানে যে ইরানের ওপর এই মুহূর্তে হুমকিও আছে একটা। রাশিয়ার ন্যাটো বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি রগোজিন মনে করেন, ন্যাটো বাহিনী লিবিয়া এবং সিরিয়ার পরই ইরানে হামলা করার প্রস্তাব করেছিল। তবে দিমিত্রি মস্কোভিত্তিক দৈনিক পত্রিকা ইজভেস্তিয়ায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'ইরানে নাক গলানোটা একটু কঠিন বৈকি।'
তিনি বলেছেন, 'ওই অঞ্চলে বড় রকমের কোনো যুদ্ধ লাগুক, এটা আমরা চাই না।' আবার রাশিয়ার কূটনীতিকরা ইরান সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদীও নন। রাশিয়ার উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই রিয়াবকভ সংবাদ মাধ্যমে ১৫ আগস্ট বলেছেন, 'পশ্চিমা বিশ্ব চায়, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের পথ থেকে দূরে সরে যাক। কিন্তু ইরান চায়, সে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হোক।

লেখক : সাংবাদিক
দ্য হিন্দু থেকে ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.