ন্যায্যমূল্যে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের চাল by শরিফুজ্জামান

রাজধানীতে খাওয়ার অনুপযোগী চাল ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে নিম্নবিত্ত মানুষ এই চাল কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর প্রতিবাদে ‘ট্রাক সেল ফেয়ার প্রাইস এবং ওএমএস ডিলার সমিতি’ ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাক সেল ও ন্যায্যমূল্যের কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।


জানা গেছে, রাজধানীর তেজগাঁও কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার ও ঢাকা কেন্দ্রীয় গুদাম (সিএসডি) থেকে নিম্নমানের চাল ডিলারদের সরবরাহ করা হচ্ছে। এই চাল রাত ১১টা পর্যন্ত ঘনবসতি এলাকায় ঘুরেও বিক্রি করতে পারছেন না ট্রাক সেল ডিলাররা।
এসব ডিলার নির্দিষ্ট কেন্দ্রে চাল বিক্রি শেষে অবিক্রীত চাল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিক্রি করেন। কিন্তু নিম্নমানের হওয়ায় কেজিপ্রতি ২৪ টাকায় এই চাল নিম্নবিত্ত লোকজন কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর ফলে ফেয়ার প্রাইস ডিলারদের অনেকেই ইতিমধ্যে চাল উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন।
খাদ্য অধিদপ্তর ও ডিলারদের একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরে প্রায় ২৫০ জন ডিলার আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন ডিলার চাল নিচ্ছেন না। বাকিদের অনেকে মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে চাল নিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে একাধিক ডিলার জানান, নিম্নমানের চাল বিক্রি করতে গিয়ে সময় বেশি লাগছে, আবার কমিশনও কম। এ কারণে তাঁদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।
মন্ত্রণালয়ের খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গুদামে থাকা ১২ লাখ টন চালের মধ্যে অর্ধেক ছিল থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে আমদানি করা উন্নতমানের চাল। বাকি অর্ধেক চাল খাদ্য বিভাগ বেসরকারি চালকল মালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। ওই চালের বেশির ভাগই হাইব্রিড জাতের।
ডিলাররা জানিয়েছেন, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ন্যায্যমূল্যের চালের গুণগতমান ভালো এবং দেখতেও সুন্দর। এক বেলা রান্না করলে তিন বেলা খাওয়া যায় এবং ভাতে পানি ছাড়ে না বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ, দেশি হাইব্রিড ধানের চাল রান্না করলে দুর্গন্ধ বের হয়। ভাত দলা হয়ে যায় এবং পানি ছেড়ে দেওয়ায় তা দ্রুত পচে যায়। ডিলাররা জানিয়েছেন, ক্রেতারা এই চাল কিনতে চান না। ট্রাক সেলের একজন কর্মী জানান, গরিব ক্রেতারা ট্রাকের সামনে এসে থাইল্যান্ডের চাল কবে পাওয়া যাবে তা জানতে চান।
ডিলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-অর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও ডিলাররা ভালো চাল পাওয়ার দাবিতে ট্রাক সেলের কার্যক্রম এক দিন বন্ধ রেখেছিলেন। তখন ভালো চাল বিতরণের আশ্বাসের ভিত্তিতে ডিলাররা চাল উত্তোলন শুরু করেন। কিন্তু এখনো দুটি খাদ্যগুদামের কোনোটিতেই থাইল্যান্ডের চাল আনা হয়নি। এর প্রতিবাদে ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাক সেল বন্ধ রাখা হবে। এর পরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সবাই একমত হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারির পর অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ডিলার সমিতির একাধিক নেতা জানান, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট ও নারায়ণগঞ্জ সিএসডিতে এবং নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ খাদ্যগুদামে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা চালের মজুদ রয়েছে। রাজধানীর গরিব জনসাধারণের কথা বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে ডিলারদের মধ্যে থাইল্যান্ডের আমদানি করা সিদ্ধ চাল বিতরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
ঢাকা রেশনিংয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক সুকুমার রঞ্জন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এখন বিক্রি করা চালের মান কিছুটা খারাপ। আগে ভালো চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব সময় একই রকম চাল দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি জানান, ডিলার সমিতির কর্মসূচির কথা তিনি খাদ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.