মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তাঃ বিদেশযাত্রায় জটিলতা দেখা দেবে

আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থার তত্ত্বাবধানে ১৯০টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশেও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) চালু করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কিন্তু এই বাধ্যবাধকতা পূরণে বাংলাদেশ সফল হবে, তেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা অতি আশাবাদীর পক্ষেও সম্ভব নয়। কারণ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্প চালু হতে এখনও ঢের দেরি। অন্তত এপ্রিলের আগে যে এই প্রকল্প চালু হচ্ছে না তা এখনই বলে দেয়া যায়। আমাদের দেশে আর্থিক সংশ্লিষ্টতার বিচারে যে কোনো বড় ধরনের প্রকল্প নিয়ে টানাহেঁচড়া নতুন নয়। এসব প্রকল্পে মোটা অংকের টাকা জড়িত থাকে বিধায় এর একটা ভাগ পাওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর মহলের অনেকে উদগ্রীব হয়ে থাকেন। কাকে কাজ দিলে বেশি বখরা মিলবে, বখরার টাকা কীভাবে ভাগাভাগি হবে, এসব ঠিক করতে গিয়ে গড়িয়ে যায় সময়। নইলে আলোচ্য প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল বিগত জোট সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে। সে আমল গেছে, সেনাসমর্থিত জরুরি সরকারের দু’বছর পার হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের এক বছর শেষ হতে চলল, এখনও কোন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এমআরপি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে সে সিদ্ধান্তই নেয়া গেল না! এ ধরনের ‘অগ্রগতি’ সম্ভবত কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। তাই, সকালের নাস্তা সন্ধ্যায় পরিবেশিত হলে স্বাস্থ্যের এবং পারিবারিক কাজকর্মের যে অবস্থা হওয়ার কথা, জাতি হিসেবে আমাদের দশা অনেকটা সে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। একুশ শতকের তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে আমরা ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছি। কিন্তু আমাদের হর্তাকর্তাদের সেই এক কথা—যে কোনো কাজে বখরা চাই। নইলে কাজ জাহান্নামে যাক। সর্বশেষ খবর হচ্ছে, এ সংক্রান্ত একটা ফাইল এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রয়েছে। তার অনুমোদন পাওয়া গেলে এমআরপি প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। সব রকমের খুঁটিনাটি প্রস্তুতি শেষে কাজ শুরু হবে। সব মিলিয়ে ২০১০ সালের শেষ নাগাদ বিদেশ গমনেচ্ছু বাংলাদেশীরা যদি এমআরপি হাতে পায় তবে সেটা হবে ভাগ্যের ব্যাপার।
অথচ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের ব্যাপারটা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশসহ ১৯০টি দেশ এ ব্যাপারে একমত হয়ে চুক্তি করেছে। চুক্তিতে যথেষ্ট সময় হাতে রেখে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে আর ম্যানুয়েল পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনো দেশের নাগরিক অন্য কোনো দেশের ভিসার জন্য আবেদন করলে তার অবশ্যই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থাকতে হবে। পাসপোর্ট জালিয়াতি ঠেকাতেই নেয়া হয়েছে এই সর্বসম্মত উদ্যোগ। এখন আমরা যদি এদেশের নাগরিকদের এমআরপি যথাসময়ে না দিতে পারি তখন কী হবে? চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তারা ভিসা পাবে না; বিমান সংস্থাগুলো তাদের বহন করতে অস্বীকৃতি জানাবে। দেখা দেবে পুরোপুরি অচলাবস্থা। সে পরিস্থিতিতে হয় অন্তত কয়েক মাসের জন্য বাংলাদেশীদের বিদেশে যাওয়া বন্ধ থাকবে; নতুবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে-পায়ে ধরে এমআরপির জন্য কিছু সময় বাড়িয়ে নিতে হবে। দুটিই জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অবমাননাকর। তবে যে কোনো কাজে বখরা পেতেই হবে—এ ব্যাপারে যে দেশে জাতীয় ঐকমত্য দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সে দেশের কপালে এ ধরনের অপমান অবধারিত।

No comments

Powered by Blogger.