কতিপয় শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ by রণজিৎ বিশ্বাস

কিছু কিছু শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ পুছিব, কিছু বস্তুর ব্যবহার জানিব। : পুছিতে পারেন। : তাহা হইলে উদ্ভাবন দিয়াই শুরু করিব। : উদ্ভাবন শব্দের অর্থ কী? : আমার বিবেচনায় উদ্ভাবন শব্দের অর্থ হইল, যে সকল ভাবন-ভাবনা মানুষের মাথার তালু, বিশেষ করিয়া ব্রহ্মতালু ফুঁড়িয়া উদ্গত হয়, উহার নাম উদ্ভাবন কিংবা উদ্ভাবনা।


: আপনি আপনার প্রথম কথাতেই দুইটি জিজ্ঞাসার উদ্ভাবন ঘটাইলেন।
: বুঝিলাম না। বুঝাইয়া বলুন।
: ভাবন ও ভাবনা এবং উদ্ভাবন ও উদ্ভাবনার মধ্যে তফাত কী?
: প্রথমটি কাজ করার নাম, দ্বিতীয়টি কাজের নাম। প্রথমটি ক্রিয়াপদ, ইন ফ্যাক্ট ক্রিয়ামূল; দ্বিতীয়টি বিশেষ্য, গুণবাচক বিশেষ্য, ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য।
: দ্বিতীয়, আপনি শব্দ লইয়া বিভিন্নভাবে নাড়াচাড়া করিবার দুঃসাহস দেখাইবার পরও 'মাথার তালু'র মতো একটি ভুল কথা কেন বলিলেন? মানবদেহের অন্য কোনো প্রত্যঙ্গের কি তালু আছে? হাঁটুতে কি তালু আছে? কনুইয়ে কিংবা নাকের ডগায় কি তালু আছে?
: কনুইয়ে, নাকের ডগায় কিংবা হাঁটুতে তালু নাই, ঠিক আছে। তবে, মানবদেহের অন্য কোনো প্রত্যঙ্গে তালু নাই_ ইহা ঠিক নহে। মানুষের পায়ে তালু আছে। এই জন্যই পায়ের তালুর কথা আমরা শুনিতে পাই। ইহা ছাড়া মানুষের মুখবিবরের ভেতরে একটি তালু আছে, যাহা জিহ্বার ডগা দিয়া আমরা স্পর্শ করিতে পারি। যে বর্ণসমূহ উচ্চারণের সময় জিহ্বা ও তালুর স্পর্শসংযোগ ঘটে, সেগুলোর নাম তালব্য বর্ণ।
:পৃথিবীতে যত রকমের অমিল আছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অমিলের দুইটি বিষয় বলুন।
: মাছ ও গাছ। এ দুটিকে মিলের বিচারে কাছাকাছি এনে আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি_ দুুটোই বস্তু। আমি আর কোনো মিল দেখি না। তবে, এই সেদিনও কিছু মানুষ_ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি বুঝতেই চায় না, যারা মহান স্বাধীনতার বিষয়ে আদৌ শ্রদ্ধাশীল নয় এবং দেশপ্রেমের বিষয়টি খাওয়ার, না গায়ে জড়াবার, না প্রাণে পোষার বোঝে না_ তারা তাদের অন্ধতা ও কুশিক্ষার কারণে অনেক মাছকে গাছ ও অনেক গাছকে মাছ বানিয়েছে।
; ফুল ও পাখির মধ্যে আপনি কোন মিল খুঁজে পান?
: পাই। দুটোই ভালো জিনিস, দুটোই সুন্দর। ভালো মানুষ ফুলের মতো হতে চায়, মানুষ পাখির মতো হতে চায়। কিন্তু সবাই পারে না। সবাই তা হতে চায়ও না।
: সবাই তা হতে চায় না কেন?
: চায় না, কারণ সবার আকাঙ্ক্ষা কখনও এক রকম হয় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, একই উৎসব থেকে সবাই একই জিনিস আমরা গ্রহণ করি না। যেমন, ফুল থেকে ভ্রমর আহরণ করে মধু, মাকড়সা আহরণ করে বিষ। আমার কথা আরও বাড়াবার আগে একটি উপস্থাপনাগত বিচ্যুতির দিকে আপনার দৃষ্টি টানব। যে ভাষায় আপনি কথা শুরু করেছিলেন, তাতে কিন্তু আপনি এখন নেই।
: বুঝলাম না!
: সাধুরীতিতে আপনি প্রশ্ন শুরু করেছিলেন, এখন চলে গেছেন চলিত রীতিতে। আমি এখন কোন রীতিতে থাকব?
: আপনি চলিত রীতিতেই থাকুন।
: তাহলে গুরুচাঁড়ালি যে হয়ে গেল, তার কী হবে?
: তার যা হবে, হোক। আপনি বরং বলুন, গুরুচাঁড়ালি ব্যাপারটি কেমন?
:এটি শুধু সাধুচলিত ভাষারীতির মিশ্রণ নয়। উত্তমের সঙ্গে অধমের, ভালোর সঙ্গে মন্দের, মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীর যদি মিলমিশ ও দহরম-মহরম হয়, তার নামও গুরুচাঁড়ালি, তার নামও গুরুচণ্ডালী। তবে একটা বিষয় আপনাকে বলে রাখি। মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীর মিল কখনও হয় না।
: হয় না তো অবশ্যই! কিন্তু, আমরা তো দেখি এখন কিছু মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধাপরাধীর কোলে বসছে ও বসে আনন্দ পাচ্ছে।
: পাচ্ছে। তবে, ওরা মুক্তিযোদ্ধা নয়, মুক্তিযোদ্ধা নামের কলঙ্ক। সত্যিকার কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর প্রাণী যুদ্ধাপরাধীর সমর্থনে দাঁড়াতে পারে না। যারা দাঁড়ায়, তারা হয় বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা অথবা মুক্তিযোদ্ধার খোলসের ভেতর একেকজন যুদ্ধাপরাধী, মানবতার একেকজন শত্রু।

No comments

Powered by Blogger.