এজলাসে হাতাহাতি-আদালতের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে

আবার হাতাহাতি আদালতকক্ষে। ধস্তাধস্তি ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আদালতের পবিত্র প্রাঙ্গণ দূষিত করার চেষ্টা। এর আগেও এমনটি হয়েছে। দলীয় রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী আইনজীবীরা আবার মারমুখী। আদালতের কার্যক্রম বিঘি্নত। এর আগে প্রধান বিচারপতির এজলাসে পর্যন্ত হামলার নজির রয়েছে। আদালতকে এভাবে দূষিত করার প্রবণতা কোনো শুভ লক্ষণ নয়। এর পেছনে যে একটি গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।


আদালতকে বিতর্কিত করার একটি অপচেষ্টা চলছে। বিচারালয়কে সব কিছুর ঊধর্ে্ব রাখা উচিত। কিন্তু দলীয় আদর্শ বিবেচনায় রেখে অনেকেই ভুলে যান আদালতের পবিত্রতার বিষয়টি। আদালতকে বিতর্কিত করে তার ভেতর দিয়ে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা তাই লক্ষ করা যায়।
সম্প্রতি আদালতে আবার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। কিছুদিন থেকেই সংবিধান 'ছুড়ে ফেলে দেওয়া' সংক্রান্ত একটি বক্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা কিছুদিন আগে সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নানা পক্ষ থেকে নানা কথা বলা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের পাশাপাশি ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতাও সংবিধান নিয়ে অনুরূপ মন্তব্য করেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন এক সংক্ষুব্ধ নাগরিক। যেকোনো বিষয় নিয়ে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। সংক্ষুব্ধ যে কারো আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। সংক্ষুব্ধ নাগরিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়াও আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও যেকোনো বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন। এটা আদালতের এখতিয়ার। আদালতের নির্দেশনা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, এমন কোনো কথা নেই। আদালতের নির্দেশনায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তাঁর উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। আবার প্রধান বিচারপতি বা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রকাশ্যে 'মানি না' বলে দেওয়া যায় না। ক্ষেত্রবিশেষে এটা আদালত অবমাননার শামিল হতে পারে। যেমন_উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে আদালতে বা আদালত প্রাঙ্গণে এ নিয়ে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি বা মিছিল, বিক্ষোভ, মারামারি করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায় না। এটাও এক অর্থে আদালত অবমাননার পর্যায়েই পড়ে। বিশেষ করে বিচারকদের দিকে কোনো কিছু ছুড়ে মারা, তাঁদের উদ্দেশে কটুবাক্য প্রয়োগ করা বিচারিক সৌজন্য ও শিষ্টাচারবর্জিত বলেই ধরে নিতে হবে। এমন ঘটনার নেপথ্যে যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করতে পারে এবং সে উদ্দেশ্য যে কেবলই রাজনৈতিক, সেটাও নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
আদালত একটি পবিত্র স্থান। আদালতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদেরই দায়িত্ব আদালতের পবিত্রতা রক্ষা করা। আইনজীবী থেকে শুরু করে সবাই আইনকেই ঊধর্ে্ব তুলে ধরবেন, আদালতের পবিত্রতা রক্ষা করবেন_এটাই আমাদের কাম্য। হীন রাজনৈতিক স্বার্থে আদালতের পবিত্রতা যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে সবাইকেই দৃষ্টি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.