দুই বাজারে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে

দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম দিনটি ভালো কেটেছে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে বেড়েছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে সামান্য হলেও বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
তবে বাজার বাড়লেও বিনিয়োগকারীরা গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিনিয়োগকারীরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় তাঁরা বাজারের সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দায়ী করে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করেন। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তাঁরা।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মিজান উর রশিদ চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, সদস্য-সচিব জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও অনেকে। তাঁরা জানান, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা না ফেরা পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলবে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে গতকাল শেয়ারবাজারে দিনের লেনদেন শুরু হয়। লেনদেন শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৮০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ার গতি কিছুটা কমলেও তার পর থেকে সূচক আবার বাড়তে শুরু করে। বেলা একটার দিকে সূচক প্রায় ১১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর কিছুটা কমলেও দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৯২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৪৯০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ২৫৬ পয়েন্ট বেড়ে হয় ১৫ হাজার ৩৩০ পয়েন্ট।
সিএসইতে গতকাল মোট ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭৩টির, কমেছে ১৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। সিএসইতে এদিন ৪৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে এ সময় মোট ২৬১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বেড়েছে ২৩৪টির, কমেছে ২৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে গতকাল মোট ৩৩০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা গত বৃহস্পতিবারের লেনদেনের চেয়ে ৩৪ কোটি টাকা বেশি।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসকে দেওয়া ঋণ সমন্বয়ের সময় বাড়িয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী একটি ব্যাংক কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে পারে না। কিন্তু অনেক ব্যাংক এ নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজস্ব মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসকে এ সীমার চেয়ে বেশি ঋণ-সুবিধা দেয়।
সম্প্রতি যেসব ব্যাংক সীমা অতিক্রম করেছে, তাদের তা সমন্বয়ের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে শেয়ারবাজারের লেনদেনের ওপর বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে বিভিন্ন মহল থেকে ঋণ সমন্বয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি উঠতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ সমন্বয়ের সময় কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়া সরকার গতকাল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) আরও দুজন নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়েছে। এতে এসইসি পুনর্গঠনের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেল। এটিও বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকে মনে করেন।

No comments

Powered by Blogger.