উৎসব আর অবিশ্বাস

রাশিয়া আর কাতারের মধ্যে অনেক দূরত্ব। দুই দেশের আবহাওয়াও পরশু ছিল একেবারেই বিপরীত। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় কাঁপছিল, আর ২৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঘামছিল কাতারের রাজধানী দোহা।
তবে একটা জায়গায় এই দুটি দেশ এদিন মিলে গেল। পাওয়ার আনন্দে। রাশিয়া ও কাতারের এই আনন্দ, বিশ্বকাপের আয়োজক হতে পারার গৌরবের। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ আয়োজনের সনদ পেয়েছে রাশিয়া। আর ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার নির্বাচনে কাতার হারিয়েছে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রকে।
২০১৮ বিশ্বকাপ আয়োজনের যে চারটি প্রার্থিতা ছিল, ভোট শুরুর আগ পর্যন্ত এর মধ্যে সম্ভাবনায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। পর্যবেক্ষকেরা তো সপ্তাহ খানেক আগেও দেখছিল ইংল্যান্ডের নিরঙ্কুশ জয়। তবে হয়েছে ঠিক এর উল্টো। নিরঙ্কুশ পরাজয় মেনে নিয়ে ভোটাভুটির প্রাথমিক পর্ব থেকেই বিদায় হয়েছে ইংল্যান্ডের।
হিসাব-নিকাশে অনেক পিছিয়ে থাকা রাশিয়া সর্বোচ্চ ৯ ভোট পেয়ে ওঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল হল্যান্ড-বেলজিয়াম আর স্পেন-পর্তুগালের যৌথ প্রার্থিতা। তবে ১৩ ভোট পেয়ে শেষ হাসি হাসে রুশরা। স্পেন-পর্তুগাল পায় ৭ ভোট, হল্যান্ড-বেলজিয়াম ২।
২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার লড়াইটা হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। চার পর্ব পর্যন্ত হয়েছে ভোটাভুটি। প্রথম পর্বে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় পর্বে জাপান ও তৃতীয় পর্বে কোরিয়া বাদ পড়ে এখানে। কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে শুরু হয় চতুর্থ পর্বের ভোট। ১৪-৮ ভোটে কাতারের জয়ে বিশ্বকাপ প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
ভোট শেষে ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার ফল ঘোষণা করেন। উৎসবে মেতে ওঠে মস্কো আর দোহা। ব্ল্যাটারের ঘোষণা আসার পরপরই সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘এই দেশে (রাশিয়ায়) যারা ফুটবলকে ভালোবাসে, তাদের সবাইকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। শুভেচ্ছা জানাই এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে। আমাদের জন্য দারুণ এক উৎসবের উপলক্ষ এটা।’
‘হুররে! জিতে গেছি’—‘টুইটারে’ লিখেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। কিন্তু তিনি ঘোষণা দিলেই কি আর বাইরে নেমে সবার উৎসবে মেতে ওঠা সম্ভব ছিল! মস্কোতে যে তখন মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা। উৎসব চলল তাই ঘরে ঘরে। তবে তীব্র শীত উপেক্ষা করেও কিছু মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
এই আবহাওয়াই ছিল কাতারের প্রার্থিতার দুর্বলতম দিক। জুন-জুলাইয়ে কাতারের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যায়। কেউ কেউ আবার সেখানে মেয়েদের বঞ্চনার কথাও তুলেছিল।
বিশ্বকাপের আয়োজনভার পাওয়ার পর কাতারের বিড প্রধান হামাদ আল থানি বলেছেন এসবের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের কথা, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার ছিল। এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত আমাদের জয় হয়েছে। আমাদের ইতিহাসে অন্যরকম একটা বছরের জন্ম হলো, সেটা ২০২২। আমাদের জন্য বড় এক উৎসবের উপলক্ষ এটা।’
কাতার ও রাশিয়ার জন্য যা উৎসবের, যুক্তরাষ্ট্র আর ইংল্যান্ডের জন্য সেটাই শোকের! এমন পরাজয়ের পর বেকহাম শুধু বলেছেন, ‘আমাদের এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব ছিল না।’ আর ‘জয়’ রব ওঠার পরও হেরে যাওয়াটাকে ইংল্যান্ডের সাবেক কোচ গ্রাহাম টেলর দেখছেন এভাবে, ‘আমরা কী আশা করেছিলাম? আমার মনে হয় ফিফাতে এমন অনেকে আছে যারা মুখে হ্যাঁ বলেছে আর পেছনে না!’
কাতারের কাছে হেরে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া সংক্ষেপেই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ‘কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে দেওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত।’ ফ্রান্সের ফুটবল মহাতারকা জিনেদিন জিদান অবশ্য পড়ে গেছেন দোটানায়, ‘স্পেন বিশ্বকাপ পায়নি, এটা আমাকে একটু হতাশ করেছে। তবে কাতারে বিশ্বকাপ যাচ্ছে দেখে আমি খুশিও। আরব বিশ্ব বিকশিত হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.