খবর- বন্ধ তাবানীতে লোক নিয়োগ by আপেল মাহমুদ

ড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন তাবানী বেভারেজ কম্পানি লিমিটেডের কারখানা। অদূর ভবিষ্যতে কারখানাটি চালু হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। অথচ চলছে লোক নিয়োগ। কারখানা বন্ধ থাকায় এমনিতেই ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে আরো ২৯ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তাদেরকে মাসে আরো তিন লাখ টাকা বেতন দিতে হবে। কারখানা আদৌ সচল হবে কি না সে বিষয়টিই যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে নতুন করে স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় ট্রাস্টে রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তাবানী চালু করার বিষয়টি অনিশ্চিত। অথচ এ কারখানাটি চালু করার উদ্যোগ না নিয়ে বর্তমানে চলছে নতুন করে লোকবল নিয়োগ। এতে ট্রাস্টের দেনা আরো বৃদ্ধি পাবে।'
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও তাবানী বেভারেজের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৩১ জুলাই কারখানায় উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মানুযায়ী দৈনিক মজুরিভিত্তিক (মাস্টাররোল) নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের চাকরি চলে যায়। কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানায় সম্প্রতি ২৯ জন মাস্টাররোল কর্মচারীকে দুই কিস্তিতে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরো ২০-২৫ জন মাস্টাররোল কর্মচারীর তালিকা স্থায়ী নিয়োগের অপেক্ষায় আছে বলে ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে। ট্রাস্টের সচিব মানিক লাল বণিকও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ট্রাস্ট সচিবের এক দাপ্তরিক চিঠি (নম্বর-২/১০০/৩/ট্রাস্ট/৮১৪) থেকে জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর সাপ্তাহিক পরিচালক সভায় দৈনিক মজুরিভিত্তিক ২৩ জন কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিনই তা কার্যকর করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সন্তান হিসেবে তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর ১৫ দিন আগে একইভাবে আরো ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের স্থায়ী চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি ১৯৮৫ সাল থেকে জ্যেষ্ঠতাসহ সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তও কার্যকর হয়েছে।
তাবানীর কারখানা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও নতুন লোকবল নিয়োগ দেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাস্টের সচিব মানিক লাল বণিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'উচ্চ আদালতের রায় এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বিষয়টিকে আমলে নিয়ে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।' বর্তমানে তাবানীর কর্মচারীদের যেভাবে ট্রাস্ট থেকে বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে, নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের সেভাবেই বেতন-ভাতা দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
ট্রাস্ট সিবিএর সেক্রেটারি এম এইচ আলম বলেন, 'ট্রাস্টে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা চাকরি পান এটা সবারই কাম্য। কিন্তু তাঁদের চাকরি টেকানোর জন্য তো সবার আগে তাবানী বাঁচানো দরকার।' সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান 'দি কোকা-কোলা কম্পানি' তাবানী বেভারেজকে একপর্যায়ে কোমল পানীয় উৎপাদনের বিশেষ উপাদান 'কনসেনট্রেড' সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরে বাতিল করে দেয় চুক্তি। এতে কারখানাটি সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বছরে ২০ কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ট্রাস্ট ১৪০০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক লোকসানের সম্মুখীন হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পত্তি হওয়ায় একে বাঁচাতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ৩০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অদূরদর্শিতা আর অব্যবস্থাপনার কারণে অনুদানের সে টাকা ফেরত যায় সরকারি কোষাগারে।
তাবানী বাঁচানোর কার্যকর উদ্যোগ নেই : তাবানী বাঁচানোর লক্ষ্যে ছয় মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হলেও বর্তমানে এর কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ট্রাস্ট থেকে বলা হচ্ছে, ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া তাবানীর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া যাবে না। অথচ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ড অকার্যকর রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ট্রাস্টের একজন কর্মকর্তা জানান, ৯ বছরে বোর্ডের কোনো সভা হয়নি। কখন সভা হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আলী শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ায় তাঁর সময় দেওয়ার ওপর নির্ভর করছে কবে সভা হবে।' তিনি আশা প্রকাশ করেন, একটা সভা করতে পারলে ট্রাস্টের অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে।
তাবানীর ব্যবসা অন্যের দখলে : অভিযোগ রয়েছে, ট্রাস্ট ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কোকা-কোলা নতুন একটি কম্পানির নাম ব্যবহার করে তাবানীর ব্যবসা দখল করে নিয়েছে। তাবানীর উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে তারা ইন্টারন্যাশনাল বেভারেজ লিমিটেড নামে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে কোমল পানীয় সরবরাহ করছে। এ জন্য ৩০ জন পরিবেশকও নিয়োগ দিয়েছে তারা। তাবানী সূত্রে বলা হয়েছে, কোকা-কোলা নিজেরা কোমল পানীয় উৎপাদন না করে মোনেম লিমিটেড থেকে উৎপাদন করছে। অথচ তাবানীর সঙ্গে কোকা-কোলার আঞ্চলিক এজেন্ট ফারইস্টের চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে কোমল পানীয় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে শুধু তাবানীই। ফারইস্ট একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করলেও এর বিরুদ্ধে সালিশি মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
জানা গেছে, ঢাকা ও রাজশাহী এলাকায় এজেন্টদের কাছে তাবানীর বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। তাবানীর ব্যবসায়িক এলাকায় নতুন কম্পানি কোমল পানীয় সরবরাহ করলেও ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ এখনো তা জানে না। ট্রাস্টের পরিচালক (শিল্প-বাণিজ্য) এস এম রফিকুল ইসলাম জানান, ফারইস্ট কিভাবে ব্যবসা করছে তা তাঁর জানা নেই।
তাবানীর কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল বেভারেজ লিমিটেড নামের নতুন কম্পানিটি প্রকাশ্যেই ব্যবসা করছে। এর নিয়ন্ত্রক কোকা-কোলার বাংলাদেশের এজেন্ট ফারইস্ট লিমিটেড। বিষয়টি ট্রাস্টের না জানার কথা নয়। ট্রাস্ট সিবিএর সভাপতি আবদুল কালাম বাবুল বলেন, 'কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ট্রাস্টের মূল আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাবানীকে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের পরিবেশক হিসেবে রাখা হলে লোকবল খাটানো ছাড়াও মাসে অন্তত ২৫-৩০ লাখ টাকা আয় করা যেত। এ আয় দিয়ে তাবানীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হতো। প্রয়োজনে আরো লোকবলও নিয়োগ দেওয়া যেত।
ফারইস্ট থেকে এর আগে বাংলাদেশ সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তাবানী বন্ধ করে তাদের কোকা-কোলার ব্যবসা করতে দিলে তারা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিষয়টির ফয়সালা হয়নি। অপরদিকে ফারইস্ট ও তাবানীর মধ্যে মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি। এসব বিষয় নিষ্পত্তি না করেই ফারইস্ট নতুন কম্পানি গঠন করে ব্যবসা শুরু করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। ট্রাস্ট কোনো প্রদক্ষেপ না নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায় অনেকে একে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছে। তাদের অভিযোগ, ট্রাস্ট এখন নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত।
============================
ইতিহাস- আমাদের ভাববিশ্ব ও বৌদ্ধবিহার  স্মৃতি ও ইতিহাস- ঢাকায় আমার প্রথম তিন দিনের স্মৃতিরোমন্থন  আলোচনা- একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি কি হারিয়ে যাবে  আলোচনা- বাংলাদেশের সমাজ : মধ্যবিত্ত সমাচার  গল্প- দূর গাঁয়ের গল্প  সাহিত্যালোচনা- কবিতার হয়ে ওঠা  সাহিত্যালোচনা- কবিতার হয়ে ওঠাই কবির তপস্যা  পাঁচ গাড়িসহ দুই ছেলের মালপত্র বুঝে নেওয়া হলো আজ বাকিগুলো  গল্প- 'কোনো এক গাঁয়ের বিয়ে'  গল্প- মৌরস ভৌরস  শিল্পি- ড্রয়িং, স্কেচ না পূর্ণাঙ্গ চিত্রকর্ম  গল্পসল্প- নারী শিক্ষা মন্দির  স্মৃতি ও গল্প- ছিন্নস্মৃতি  স্মৃতি ও গল্প- স্কুল জীবনে বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ি ও যশোর  ফিচার- তাঁহাদের দান  ফিচার- ডায়ানার আংটি  গল্প- 'অভিমান'  গল্প- 'মাটির ব্যাংক'  গল্পসল্প- 'সাগরকে যাঁরা পোষ মানালেন'  স্মরণ- 'আমাদের সেলিনা আপা'  আলোচনা- 'বেতন-ভাতা না নেওয়ার ‘নীতিগত’ সিদ্ধান্ত নয় কেন?  ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরীক্ষা করছে নরওয়ে  খালেদার মালপত্র আজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে  আলোচনা- 'পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও অশান্তির মনস্তত্ত্ব'  সাক্ষাৎকার- পাহাড়ে পাহাড়িদের সংখ্যালঘু করা হচ্ছে  আলোচনা- 'শান্তিচুক্তির ১৩ বছর'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'উন্মত্ত নৈরাজ্যের শক্তি বনাম সোনালি সম্ভাবনা'  আলোচনা- ''ট্রানজিট' না 'করিডোর' না 'কানেকটিভিটি'  আলোচনা- 'ওরাও মানুষ আছে ওদের অধিকার'

দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ আপেল মাহমুদ


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.