নিভৃতে তৈরি হচ্ছেন লিউ শিয়াং

সবার সঙ্গে তিনি গেমস-পল্লিতে থাকেন না। গুয়াংজুতেই ইরশা নামের এক দ্বীপে একাকী নিজেকে তৈরি করে চলেছেন। চীনের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া তারকার কাছে এবারের এশিয়ান গেমস যে নিজেকে আবার বড় মঞ্চে তুলে ধরার উপলক্ষ।
২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে সোনাজয়ী হার্ডলার লিউ শিয়াং গত বেইজিং অলিম্পিকে শেষ মুহূর্তে চোট পেয়ে ছিটকে পড়েন। কান্নার রোল উঠেছিল গোটা চীনে। দুই বছর পর ঘরের মাঠে আর কান্না নয়, চীনা জনতা এবার হাসতে চায়। লিউয়ের কাছে এটা তাই ‘সুযোগ’ও বটে।
চীনের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সাংবাদিক—কার মুখে নেই তারকা হার্ডলারের নাম! ১৬তম এশিয়াড যেন লিউয়ের অপেক্ষায় দিন গুনছে। কাল অ্যাথলেটিকস শুরু হয়েছে বটে, কিন্তু চোখ রয়েছে লিউয়ের দিকে। এ কারণেই চলমান গেমসে চীন দেড় শ সোনা জিতে ফেললেও তেমন উচ্ছ্বাস নেই। লিউয়ের একটি সোনাই যেন এক শ সোনার সমান হবে!
স্থানীয় সাংবাদিক ঝাই লিংয়ের ভাষায়, ‘অ্যা...লিউ...লিউ...। উই ওয়েত ফর হিম। হিজ ওয়ান গোল্ড মেডেল ইজ ভেরি ইমপর্তেন্ত।’
বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া স্বেচ্ছাসেবী জু জাইয়ে মুখেও লিউ-বন্দনা, ‘লিউর খেলার দিন দেখবেন স্টেডিয়াম ভরে যাবে। লিউ ভীষণ জনপ্রিয় এখানে। চীনের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়াবিদদের একজন। বাস্কেটবল তারকা ইয়াও মিং খেলতে পারছেন না চোটের কারণে, লিউয়ের দিকে তাই চোখ আরও বেশি।’
২৪ নভেম্বর ১১০ মিটার হার্ডলসে সোনা ধরে রাখার লড়াইয়ে নামছেন সাংহাইয়ের বাসিন্দা। ২০০২ বুসান এবং ২০০৬ দোহা এশিয়াডে সোনা জিতেছেন। এশিয়াডে এবার জিতলে তৃতীয় সোনা হবে। একটি অলিম্পিক সোনা, তিনটি এশিয়াড সোনার পাশে সবচেয়ে বড় তথ্য, ১১০ মিটার হার্ডলসে লিউ সাবেক বিশ্ব রেকর্ডধারী। টাইমিং—১২.৮৮ সেকেন্ড।
অলিম্পিকে চীনের পক্ষে পুরুষ অ্যাথলেটদের মধ্যে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে প্রথম সোনা তাঁরই। দেশের প্রথম ‘ত্রিমুকুট’জয়ীর নামের পাশে আছে বিশ্ব রেকর্ড, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের খেতাব। শিয়াং নামের অর্থ ‘উড়ন্ত’। খ্যাতির চূড়াতেই তিনি উড়ছেন।
জন্ম সাংহাইয়ের পুতোয়। বয়স ২৭। ইনজুরির কারণে ১৩ মাস বাইরে থাকা লিউ গত বছর এশিয়ান অ্যাথলেটিকস, পূর্ব এশিয়ান গেমস, বিশ্ব ইনডোরে খেলেছেন। খেলার বাইরে মানবিক আবেদনেও সাড়া দেন। ২০০৮ সিচুয়েনে ভূমিকম্পে হতাহতদের জন্য ২৫ লাখ ইউয়েন ত্রাণ তহবিলে দিয়েছেন। শুধু খেলা, খেলা ও খেলা—এর বাইরে তাঁর কোনো কাজ নেই। তাই বলতে পারেন, ‘নো গার্লফ্রেন্ড, নো টাইম’।
লিউয়ের জন্য আউতি স্টেডিয়াম সেজেগুজে আছে। আধুনিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন এই স্টেডিয়ামে কাল সন্ধ্যায় কয়েকটি ইভেন্টে বাছাই হলো। ১০০ মিটারের বাছাই শেষে বাংলাদেশের দুজন অ্যাথলেটই মোটামুটি হাসিমুখে কথা বলতে পেরেছেন, যা সচরাচর দেখাই যায় না!
১০০ মিটারের হিটে আজহারুল ইসলাম উত্তীর্ণ হয়ে পরের রাউন্ডে (সেমিফাইনাল) গেছেন। টাইমিং ১১.১৯ সেকেন্ড। ছয়জনের মধ্যে চতুর্থ বাংলাদেশের দ্রুততম মানব। বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা হিটেই বাদ—বরাবরের এই অপবাদ থেকে এবার অন্তত মুক্তি মিলল।
এমন প্রতিযোগিতার মঞ্চে দৌড়ানোর মতো অ্যাথলেট নেই বাংলাদেশে। অ্যাথলেট-খরায় ৪০০ মিটারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন আজহার এবার জাতীয় প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চ্যাম্পিয়নও হয়ে গেছেন।
নাজমুন নাহার (বিউটি) অবশ্য প্রথম হিটের বৈতরণী পার হতে পারেননি। ১২.৭২ সেকেন্ড সময় নিয়ে ছয়ে পঞ্চম। নাজমুনের মূল ইভেন্ট ২০০ মিটার, সেটিতেই যদ্দূর সম্ভব ভালো টাইমিং করার ব্যাপারে তাঁকে আশাবাদী দেখাল, ‘১০০ মিটারে যা হয়েছে, মনে হয় ঠিকই আছে। আমার তো এটা মূল ইভেন্ট নয়।’
আজহার যে সেমিফাইনালে উঠেছেন, সেটা তিনি তাৎক্ষণিক বুঝতে পারেননি। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের কাছে জেনে তাই একটু বিস্মিতই হলেন, ‘তাই নাকি, এটা তো খুবই খুশির খবর আমার জন্য!’
আজহার নিজের পারফরম্যান্সে খুশি, তবে আর সবার মতো লিউ শিয়াংয়ের জন্য তাঁরও অপেক্ষা, ‘লিউর খেলা দেখতে হবে এবার। না হলে অপূর্ণই থেকে যাবে সফরটা।’

No comments

Powered by Blogger.