গাছে চড়ে বৃদ্ধের গণতন্ত্র উদ্ধারের কর্মসূচি by আবু সালেহ আকন

‘পুলিশ আমাকে ক্রসফায়ারে দিতে পারবে না, কারণ জনগণ দেখবে। আমাকে মারতে হলে প্রকাশ্যে জনগণের সামনে মারতে হবে। মাটিতে গণতন্ত্র নেই, তাই আমি গাছে উঠেছি। গণতন্ত্র উদ্ধারে আমি ২৪ ঘণ্টা এখানে বসে কর্মসূচি পালন করব।’ কথাগুলো জালাল উদ্দিন মজুমদার নামে এক ব্যক্তির। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন গতকাল সকাল ৯টা থেকে জাতীয় প্রেস কাবের প্রধান ফটকসংলগ্ন একটি কড়ই গাছে অবস্থান নিয়েছেন। আজ সকাল ৯টায় ২৪ ঘণ্টা কর্মসূচি পালন শেষে তিনি গাছ থেকে নিচে নেমে আসবেন। তিনি সাথে করে খাবার, পানীয়, দু’টি ফেস্টুন, একটি হ্যান্ডমাইক এবং তিনি যে স্থানে অবস্থান করছেন তার সামনে একটি ডালে বেঁধে রেখেছেন হারিকেন। গাছের সাথে তিনি লোহার শেকল দিয়ে নিজেকে বেঁধে রেখেছেন। চাবি অন্যের কাছে দিয়ে দিয়েছেন, যাতে চাইলেও নিজে সেখান থেকে নামতে না পারেন।
রাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একটি দেশে এই পরিস্থিতি চলতে পারে না। বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেন। তিনি হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর বিরুদ্ধেও তিনি স্লোগান দেন। নিজেকে তিনি দার্শনিক হিসেবে পরিচয় দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ষাটোর্ধ্ব এই জালাল উদ্দিন গতকাল সকালে যখন গাছে উঠছিলেন তখন পুলিশ তাকে বাধা দেয়। কিন্তু পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তিনি গাছে চড়ে বসেন। সেখানে তিনি একটি মাইকের সংযোগ পেলেও পরে সেটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এর পর থেকে তিনি হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে থেমে থেমে স্লোগান দিতে থাকেন এবং তার কথাগুলো প্রচার করতে থাকেন।
জালাল উদ্দিনের এই কাণ্ড দেখে অনেকেই সেখানে ভিড় জমান। এমনকি, মাঝে মধ্যে চলন্ত যানবাহন থামিয়ে অনেকে তার বক্তব্য শুনতে থাকে। দিনভর তাকে নিয়ে ছিল ব্যাপক আলোচনা। জালাল উদ্দিন বলেন, গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্যই তিনি এই কর্মসূচি পালন করছেন। দেশে সঠিক গণতন্ত্র বিরাজ করলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল সন্ধ্যায় জালাল উদ্দিনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাগীকাল সকাল ৯টার পরই তিনি গাছ থেকে নামবেন। রাতভর গাছে অবস্থান করবেন। কর্মসূচি পালনে কেউ বাধা দিলে জনগণের সামনেই দিতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশের গুলিকে তিনি ভয় করেন না। পুলিশ চাইলেই তাকে গ্রেফতার করবে পারবে। কিন্তু তাকে গুলি করে মারতে গেলে জনগণ দেখবে। তার হাত-পা সব শেকল দিয়ে বাঁধা। গুলি করে হত্যা করলেও তার লাশটি ওখানে ঝুলে থাকবে, যা জনগণ দেখবে।
জাতীয় প্রেস কাবের সামনে দায়িত্বরত পুলিশের একজন কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, তারা জালাল উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। জালাল উদ্দিনের পক্ষে কয়েকজন লোক প্রেস কাবের সামনের রাস্তায় একটি লিফলেট বিতরণ করেন। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের শিরোনামে জনতার উদ্দেশে খোলা চিঠি নামের ওই লিফলেটে উল্লেখ রয়েছে, ‘বর্তমানে দেশে এক রাজনৈতিক ক্ষমতার যুদ্ধ চলছে। প্রতিদিন নিরীহ লোক মারা যাচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.