তরুণ উদ্ভাবকদের মেলায়... by শিহাব জিশান

ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রকল্প নজর
রিকশাভাড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হয় না এমন চালক-যাত্রী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রিকশাচালকদের ‘যেমন খুশি তেমন’ ভাড়া হাঁকানো নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই যাত্রীদের। কিন্তু যদি এমন হতো, ইচ্ছে হলেই দরদাম ছাড়া চেপে বসলেন রিকশায়। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া পরিশোধ করলেন মিটার দেখে! ভাবছেন এ কীভাবে সম্ভব?
সেই উপায় বাতলে দিচ্ছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী জিয়াদুল আমীন। বিজ্ঞানের সহায়তায় তিনি তৈরি করেছেন এমন একটি যন্ত্র, যেটি দূরত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া হিসাব করে প্রদর্শন করবে। এ সময় যন্ত্রটি রিকশাচালকের বয়স, রাস্তার দূরত্ব, যাত্রীর ওজন, রাস্তা ঢালু নাকি সমান্তরাল এসবও পরীক্ষা করবে।
গত ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের অনুশীলন মাঠে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় এই ‘রিকশা মিটার’ যন্ত্রটি প্রদর্শন করা হয়। মেলায় নিজেদের উদ্ভাবিত নানা প্রকল্প বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ উদ্ভাবকেরা হাজির হয়েছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ষষ্ঠবারের মতো এ মেলার আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প।
মেলায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিয়াদুল আমীনের ‘রিকশা মিটার’ প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রদর্শিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১৯টি প্রকল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোলারটেকার, ইভিএম উইথ পাসওয়ার্ড, ওয়াটার টেক্স মেইনটেন্যান্স, এসিবোট, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস কন্ট্রোলড স্মার্ট হোম প্রভৃতি। সোলারটেকার প্রকল্পের উদ্ভাবক জয়দীপ ধর বলেন, ‘সাধারণ সোলার সিস্টেমগুলো গতিপথ পরিবর্তন করে না। এর ফলে শক্তি সঞ্চয় খুব কম হয়। তাই নতুনভাবে সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, যেটি গতিপথ পরিবর্তন করবে এবং এর মাধ্যমে বেশি শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব হবে।’
গত বৃহস্পতিবার মেলায় কথা হয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল মোমেনিনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, মেলায় ছয়টি প্রকল্প প্রদর্শন করছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের প্রদর্শিত প্রযুক্তিগুলো হলো এয়ারক্রাফট ড্রোন, ব্লাইন্ড স্টিক, অটোমেটিক হুইলচেয়ার, ব্লাডপ্রেসার ডিটেক্টর, বাই প্যাডেল রোবট ও জিপিএস পজিশন সিস্টেম।
আমিরুল মোমেনিন বলেন, ‘মানুষ যেখানে যেতে পারে না, সেখানে ড্রোন পাঠিয়ে সেই এলাকার সচিত্র বিবরণ পাওয়া যাবে। অন্যদিকে যেখানে মানুষ উদ্ধারকাজ চালাতে ব্যর্থ হবে, সেখানে বাই প্যাডেল রোবট পাঠিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো যাবে।’ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পথচলার জন্য ব্লাইন্ড স্টিক প্রকল্পটি বেশ কাজ দেবে বলে জানালেন আমিরুল। সেন্সর ব্যবহার করে এ স্টিক শব্দ উৎপন্ন করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন বাধা–বিপত্তি সম্পর্কে ধারণা দেবে।
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএসটিসি) শিক্ষার্থীরা মেলায় হাজির হয়েছিলেন তাঁদের পাঁচটি প্রকল্প নিয়ে। ইউএসটিসির তড়িৎ কৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী দেবাশীষ তালুকদার বলেন, ‘মেলায় আমাদের প্রদর্শিত প্রকল্পগুলো দর্শনার্থীরা যেভাবে গ্রহণ করছে, তাতে কাজ করার উৎসাহ বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের মেলা প্রতিবছর আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহ দেওয়া সম্ভব।’
মেলায় সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রদর্শন করেছেন এয়ারক্রাফট ড্রোন, কয়েক ধরনের রোবটসহ বেশকিছু সফটওয়্যার। যেগুলোর মাধ্যমে অনায়াসে দৈনন্দিন কাজ করা সম্ভব। এ ছাড়া মেলায় চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সাউথ এশিয়ান কলেজ ও বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.