নাশকতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী by আবু সালেহ আকন

নাশকতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশ ও গোয়েন্দারা। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে নাশকতার ঘটনা। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে জানমালের। অপর দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হতাহত হচ্ছে মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় খোদ রাজধানীতেই ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে নগরজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। শুক্র-শনিবার রাজধানীতে কিছু যানবাহন লক্ষ করা গেলেও গতকাল ফাঁকা ছিল রাজধানী। জানমালের ক্ষতির আশঙ্কায় একেবারেই জরুরি কাজ ছাড়া গতকাল অনেকেই রাস্তায় বের হননি। যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের চোখেমুখেও ছিল আতঙ্কের ছাপ। পথচারীদের অনেকেই গতকাল মন্তব্য করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে ঘটনা ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না তারা। ফলে জনমনে দিন দিন আতঙ্ক আরো বেড়েই চলছে। গত ৩৬ ঘণ্টায় খোদ রাজধানীতেই ২৪টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলেরও একটি গাড়ি রয়েছে। যার মাত্র ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। রোববার রাতে বনশ্রীতে বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় আহত হয়েছে অপর একটি টিভি চ্যানেলের একজন সাংবাদিক। গতকাল ট্রাফিক পোস্ট লক্ষ্য করে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চারটি গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সকাল ৯টার দিকে পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের সামনে একটি পার্কিং করা প্রাইভেট কারে আগুন দিয়েছে কে বা কারা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে জনতা ব্যাংকের একটি স্টাফ বাস লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালানো হয়। এতে সাতজন আহত হন। এর মধ্যে পাঁচজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে নর্দ্দায় ট্রাফিক পুলিশ পোস্টকে লক্ষ্য করে পরপর আটটি ককটেল নিক্ষেপ করে কে বা কারা। এতে পুলিশ পোস্ট ও একটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সকাল ১০টার দিকে মহাখালীর টিভি গেট এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন ও কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে তেজগাঁও লিংক রোড থেকে একটি তাজা ককটেল ও আধা লিটার অকটেন উদ্ধার করেছে পুলিশ। বেলা ৩টার দিকে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে পরপর চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন যুবক বনানী-কাকলীর দিকে যেতে ফুলের দোকানগুলোর সামনে এ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে রাস্তায় চলমান দু’টি প্রাইভেট কারে পেট্রলবোমা হামলা চালানো হয়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গুলিস্তান জিপিওর মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণে তিন পথচারী আহত হয়েছেন।
গত শনিবার সন্ধ্যার পরপর রাজধানীর মৌচাক, বনানী, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুরে ১০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে মৌচাকে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের গাড়িতেও আগুন লাগানো হয়। চ্যানেলটির কার্যালয়ের প্রায় সামনেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে মৌচাক মোড়ে তখন বিপুলসংখ্যক পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশের সামনেই এ ঘটনা ঘটে। সেখানে একে একে মোট চারটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারেনি। যাত্রাবাড়ীতেও পুলিশের সামনেই ঘটে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। কিন্তু পুলিশ দুর্বৃত্তদের আটক করতে পারেনি। একাধিক গাড়িচালক গতকাল বলেন, তারা চরম আতঙ্কে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হন। তাদেরকে নেতারা আশ্বস্ত করেন নিরাপত্তা দেয়ার। কিন্তু রাস্তায় নামলে ঘটনা ঘটে উল্টো। রাস্তায় তাদের অনিরাপদ অবস্থায় গাড়ি চালাতে হয়। পুরোপুরি ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে তাদের রাস্তায় চলতে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর এক বাস মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুলিশ বাধ্য করছে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে। পুলিশ একাধিকবার থানায় ডেকে নিয়ে বলেছে গাড়ি চালাতে। কিন্তু নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে তারা কোনো দায়দায়িত্ব নিচ্ছে না।
আগের রাতে ১০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর রোববার সকাল থেকে রাজধানীতে ফের শুরু হয় অগ্নিসংযোগের ঘটনা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সকাল ৯টার দিকে ফুলবাড়িয়া ও রায়েরবাগে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রত্যদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ৯টার দিকে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে পার্ক করে রাখা ঢাকা-দোহার ও ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী নগর পরিবহনের দু’টি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে হরতাল-অবরোধ সমর্থকেরা। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগের পুনম সিনেমা হলের সামনের সড়কে বিআরটিসির একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় রাস্তার অপর পাশে আরো একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে পার্কিং করা অবস্থায় একটি মাইক্রো বাসে আগুন দিয়েছে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।
এ দিকে অগ্নিসংযোগসংক্রান্ত খবর এড়িয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস। কোনো এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে তা স্বীকার না করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। গত শনিবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীতে পরপর কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে সাংবাদিকেরা পুলিশের কাছে জানতে চাইলে পুলিশ ক্ষেপে যায়। রোববার সন্ধ্যার পর মতিঝিলে একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কিন্তু থানা পুলিশের কাছে জানতে চাইলে পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করে। সূত্র জানায়, এভাবে আরো ঘটনা ঘটছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই পুলিশ এ কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর ফায়ার সার্ভিস বলছে, যেসব অগ্নিকাণ্ড তাদের নেভাতে হয় কেবল সেগুলোরই হিসাব তারা রাখেন। ছোটখাটো ঘটনা যেগুলো স্থানীয়ভাবে লোকজন নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনোই তথ্য তাদের কাছে থাকে না।

No comments

Powered by Blogger.