আদালতে না গেলে গ্রেফতার বা তল্লাশি by জাকির হোসেন লিটন

খালেদা জিয়ার গ্রেফতার নিয়ে সরকার রাজনৈতিকভাবে দায় নিতে চাচ্ছে না। এ কাজে আদালতকেই ব্যবহার করতে চান নীতিনির্ধারকেরা। সেজন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সরকার মূলত ৪ মার্চ সামনে রেখে এগোচ্ছে। ওই দিন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান ‘দুর্নীতি’ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। খালেদা জিয়া যদি ৪ তারিখের মধ্যে আগাম জামিনের জন্য সশরীরে উচ্চ আদালতে উপস্থিত না হন তবে ওই দিন তাকে গুলশান অফিস থেকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। আর আদালত জামিন দিলে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। অন্য দিকে জামিন না হলে তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হতে পারে। ওই কারাগারে ইতোমধ্যেই মহিলা ভিআইপির সেল ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। তবে কাশিমপুর কারাগারে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে নিজ বাসায় গৃহবন্দী করে রাখা হতে পারে বলেও জানা গেছে। কোনো কারণে সেটি করা না হলে ৪ তারিখ রাতে অথবা পরদিন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশি চালানো হবে। এর মাধ্যমে গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সাথে অবস্থানরত নেতাকর্মী ও ব্যক্তিগত স্টাফদের বের করে দিয়ে খালেদা জিয়াকে আরো নিঃসঙ্গ করে দিয়ে সেখানেই একরকম গৃহবন্দী করে রাখা হবে। ইতোমধ্যেই সেখানে প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার বিষয় নিয়ে এখনো কৌশলী অবস্থানে সরকার। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে মামলা দায়ের, আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা, রাজনৈতিক কার্যালয় তল্লাশির নির্দেশ এবং ‘দুর্নীতি’ মামলার গতি বাড়ানোর মাধ্যমে মূলত খালেদা জিয়াসহ বিএনপি জোটকে চাপে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দিয়ে বিএনপি জোটকে চলমান লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি থেকে বের করে নিয়ে আসতে চায় ক্ষমতাসীনরা। সে জন্য একাধিকবার গ্রেফতারের উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছু হটে সরকার। তবে এরপরও বিএনপি জোট কর্মসূচি থেকে সরে না এলে খালেদা জিয়াকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আগামী ৪ তারিখ অথবা এরপর যেকোনো সময় এ ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে পারে সরকার। ওই দিন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান একটি মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত রয়েছে। মতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ দিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার বিষয়টি প্রায় ঠিক করে রেখেছে সরকার। দলের বিভিন্ন ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার এমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রীর সাথে একান্তে বৈঠক করেন। সেখানে গ্রেফতারের আইনি দিক ও গ্রেফতার পরবর্তী সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বহির্বিশ্বে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশদ আলোচনা শেষে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিভিন্ন চাপের মুখে বিএনপির অবস্থান বদল করার ওপর জোর দিয়ে বৈঠক শেষ হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের মনোভাব জেনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি নানা কৌশল অবলম্বন করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে সরকার। পরোয়ানা জারি করেও গ্রেফতার না করে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে বিএনপি বর্তমান অবস্থান থেকে পিছু হটে। বিশেষ করে লাগাতার অবরোধ ও হরতালে দেশের অর্থনীতি চরম ঝুঁকির মুখে পড়ায় বিএনপিকে সভা-সমাবেশের কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিয়ে অবরোধ-হরতাল থেকে বের করে নিয়ে আসতে চায় সরকার। এ ক্ষেত্রে সরকার সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত।
তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, খালেদা জিয়াকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনা এবং গুলশান কার্যালয় থেকে বের করতে সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবার মনে হয় সেই চেষ্টা সফল হবে। গ্রেফতার থেকে বাঁচতে চাইলে তিনি নিজেই বের হতে বাধ্য হবেন। না হলে আদালতের ওই আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ৪ তারিখ অথবা এরপর যেকোনো সময় তাকে ওই অফিস থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।
অন্য এক সিনিয়র নেতা জানান, আসলে খালেদা জিয়ার বিষয়টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের উদ্বেগসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাব সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে এখনো বাধা হয়ে আছে।

No comments

Powered by Blogger.