বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণে কী হবে?

সব সমালোচনাকে তুড়ি মেরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আজ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস অধিবেশনে ইরান নিয়ে ভাষণ দেবেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান নেতা জন বোয়েনারের আমন্ত্রণে ৪৮ ঘণ্টার বিতর্কিত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন নেতানিয়াহু। তাঁর এই ভাষণকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তপ্ত আলোচনা চলছে। এই ভাষণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ওবামা সরকার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে যে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইসরায়েলের পছন্দ নয়। নেতানিয়াহু কংগ্রেসে ভাষণ দিলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার বাড়তি সুযোগ পাবেন বলে মনে করছে কংগ্রেস। নেতানিয়াহু কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের যৌথ অধিবেশনে যে ভাষণ দেবেন, তা হবে তাঁর এ ধরনের তৃতীয় ভাষণ। এ ভাষণে তিনি ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পাশ্চাত্যের সঙ্গে চলমান সংলাপ ও ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উত্থানের মতো বিষয় নিয়ে কথা বলবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ ও সমালোচনায় নিজের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েননি নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে তাঁর ভাষণের উদ্দেশ্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে অসম্মান প্রদর্শন করা নয়। টুইটারে এক টুইটে তিনি বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে, কোনো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে নয়। আমি যাচ্ছি আমার দেশকে বাঁচাতে।’
নেতানিয়াহুর ভাষণ সামনে রেখে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, সমঝোতা চুক্তি সফল হলে ইরানকে অন্তত এক দশকের জন্য তাঁদের পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হবে। নেতানিয়াহুর সফরকে ইঙ্গিত করে ওবামা বলেন, ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি যাতে সফল না হয়, সে জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। নেতানিয়াহুর সফর নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই নিন্দা চলছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস গত বুধবার এ বিষয়ে বলেন, নেতানিয়াহুর সফর হবে দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ধ্বংসাত্মক। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এর আগে সতর্কতা জারি করে বলেন, নেতানিয়াহুর এ ধরনের কার্যকলাপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
১৭ মার্চ ইসরায়েলে নির্বাচন হওয়ার কথা। নেতানিয়াহুর ভাষণকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছে যে নির্বাচনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দেবেন কি না, তা নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে হোয়াইট হাউস। আরব-ইসরায়েল বিষয়ক মধ্যস্থতাকারী অ্যারন ডেভিড মিলার মনে করেন, ওবামা ও নেতানিয়াহুর নাজুক সম্পর্কে এই আলোচনা আরও খারাপ প্রভাব ফেলবে। ওয়াশিংটনের উড্রো উইলসন সেন্টারের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মিলার বলেন, এই ভাষণের মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক অকার্যকর হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কাকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান, তাহলে তাঁরা নিঃসন্দেহে লেবার পার্টির কথা বলবে। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
জনমত জরিপ বলছে, কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর আজকের ভাষণ নিয়ে ইসরায়েলের রাজনৈতিক দলও দুই ভাগে বিভক্ত। অনেকেই মনে করছে ১৭ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সামনে রেখে সুবিধা লুটতে নেতানিয়াহু ভোল বদলাচ্ছেন। লেবার পার্টির নেতা আইজাক হারজগ কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্যকে কৌশলগত ভুল বলে চিহ্নিত করেন। নিজের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য নেতানিয়াহু এমনটা করছেন বলে হার্জগ উল্লেখ করেন। ইসরায়েলের বামপন্থী মেরেতজ পার্টির নেতা জাহাভা গেল অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী ওই ভাষণ দিয়ে ইসরায়েলের ক্ষতি করতে যাচ্ছেন।
ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্যদের অনেকেই মার্কিন কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর ভাষণ বর্জনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। ডেমোক্র্যাট নেতাদের অভিযোগ, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কথা বলে ওবামাকে রিপাবলিকানদের চাপে ফেলার চেষ্টা করছেন। হোয়াইট হাউস ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রন ড্রামারের ওপর ক্ষুব্ধ। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের রিপাবলিকান স্পিকার জন বোয়েচনার প্রশাসনের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করে নেতানিয়াহুর সঙ্গে রিপাবলিকানদের ওই আলোচনায় বসার ষড়যন্ত্র করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা বোয়েনারকে অভিযুক্ত করে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ওপর রিপাবলিকানরা চাপ দিচ্ছেন। ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের সমর্থকেরা ইরানের ওপর অবরোধ আরোপের চেষ্টা করছে। গার্ডিয়ান, বিবিসি, এএফপি অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.