বার্সেলোনায় শুরু প্রযুক্তির মেসিদের সবচেয়ে বড় আসর by কাজী সোহাগ

১০ নম্বর জার্সি পরে পায়ের জাদু দেখিয়ে কোটি কোটি দর্শককে মুগ্ধ করা মেসির শহর বার্সেলোনা। আজ এখানে ফুটবলের উন্মাদনা নেই। আছে প্রযুক্তির বিস্ময়কর সব আয়োজন। বিশ্ব মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন জিএসএমএ’র আয়োজনে বসেছে এ আসর। ভূ-মধ্য সাগর পাড়ের শহর বার্সেলোনার গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ফিরা গ্রান ভিয়ায় উদ্বোধন করা হয় আসরের। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কনগ্রেস উপলক্ষে মেসির এই শহরে এসেছেন প্রায় এক লাখ প্রযুক্তিবিষয়ক ব্যক্তিবর্গ। ২২০টি দেশের প্রতিনিধিদের কলরবে মুখরিত বার্সেলোনা। বিশ্বের ৮শ’টি মোবাইল অপারেটর এতে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও আছে ২৫০টিরও বেশি প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানি। বার্সেলোনার অধিবাসীদের কাছে ফুটবল হচ্ছে ভালবাসা। আর মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস করে নিয়েছে গর্বের জায়গা। ইতিমধ্যে কাতালান সিটিকে জিএসএমএ অ্যাসোসিয়েশন মোবাইল বিশ্বের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সম্মেলনের আয়োজকও ওই জিএসএমএ অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল উদ্বোধনী দিনে দ্য ইডজ অব ইনোভেশন শিরোনামে বক্তব্য দেন জিএসএমএ’র চেয়ারম্যান ও টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও জন ফ্রেডরিক বাকশাস। একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড লাইভ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন জনপ্রিয় ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ। টেলিনর গ্রুপের প্রধান তার বক্তব্যে বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন। নতুন প্রযুক্তি বিশ্ববাসীকে এগিয়ে নিচ্ছে সামনের দিকে । মোবাইল আজ শুধু প্রযুক্তি নই। এটা মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি বলেন, আজ বার্সেলোনায় হাজির হয়েছেন ৯০ হাজার প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ। এখানে আসার একটাই কারণ- নিজেদের তৈরি নতুন প্রযুক্তি দেখানো, বাজারজাত করা ও নতুন নতুন ধারণা পাওয়া। আশা করি এ কংগ্রেস অর্থবহ হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি এখন সেবামূলক নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সেবা ও মোবাইলে আর্থিক সুবিধা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে তাদের এ প্রয়াস। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। জন ফ্রেডরিক বাকশাস ২০০২ সাল থেকে টেলিনর গ্রুপের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৯ সালে তিনি এ গ্রুপে যোগ দিয়ে ডেপুটি সিইও, সিএফও এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ায় মোবাইলের বাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিত্যদিনের চাহিদা মিটিয়ে এ অঞ্চলে মোবাইল হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। মোবাইল ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাদের চাহিদাও। অনুষ্ঠানে কথা হয় ইন্টারনেট সিকিউরিটি নিয়েও। বক্তারা এর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ইন্টারনেট সিকিউরিটি এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট নিয়ে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় অনেক স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়ছে। এদিকে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ফাইভ জি প্রযুক্তি। এ নিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা নানা ধরনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। ভোদাফোন গ্রুপের সিইও ভিট্ররিও কোলাও তথ্য তুলে ধরে বলেন, ফাইভ জির মাধ্যমে গ্রাহকরা পাবেন সবচেয়ে দু্রতগামী সেবা। মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যে ৩০টি চলচ্চিত্র ডাউনলোড করা সম্ভব হবে। বার্সেলোনায় প্রযুক্তিবিদরা ফাইভ জি নিয়ে আলোচনা করলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ঘিরে রয়েছে থ্রিজি প্রযুক্তি। আপাতত ফাইভ জি নিয়ে চিন্তা করার কোন ধরনের অবকাশ নেই বলে জানান তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তিনি বার্সেলোনার এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। গতকাল মানবজমিনকে তিনি বলেন, আমাদের এখন প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ থ্রিজিকে দেশের সব জায়গায় পৌঁছে দেয়া। আর ফোর জি মেট্রো সিটিগুলোতে দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মোবাইল প্রযুক্তির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে এখান থেকে বাংলাদেশের জন্য অনেক নির্দেশনা পেয়েছি। বিশেষ করে মোবাইল অপারেটরদের ফোকাস এখন সাউথ ইস্ট এশিয়ায়। মোবাইল ব্যাংকিং ও মোবাইল কমার্সের জন্য বাংলাদেশকে কি ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে, সে বিষয়ে অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। ২০০৬ সাল থেকে বার্সেলোনাতেই টানা বসছে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের আয়োজন। বর্তমান ফুটবল বিশ্বের কাছে বার্সেলোনা যেমন তীর্থ স্থান তেমনি মোবাইল বিশ্বের কাছেও এখন তাই। এই আয়োজনের মধ্যে গ্ল্যামার নেই। তবে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের লাভালাভ আর নতুন সেবা প্রযুক্তি হাতের নাগালে পাওয়ার সুযোগ আছে। চার দিনের সম্মেলনে মূলত ডিভাইস, সফটওয়ার, মোবাইল সার্ভিস, প্রযুক্তি এবং ব্র্যান্ডের নানা দিক নিয়ে কথা হবে। প্রদর্শনী হবে নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্যের। একজন আরেকজনের নতুন সেবা কার্যক্রম থেকেও অভিজ্ঞতা নেবে। আর সব শেষে গত এক বছরের পারফম্যান্স মূল্যায়ণে বিভিন্ন দেশের অপারেটর এবং প্রযুক্তি পণ্যের প্রস্তুতকারীদের দেয়া হবে সম্মানের স্বীকৃতি। ৫ই মার্চ দুপুরে সমাপ্তি টানা হবে প্রযুক্তিবিদদের সবচেয়ে বড় এ আসরের।

No comments

Powered by Blogger.