দুই বাংলার পুনঃএকত্রীকরণ কিভাবে চাচ্ছেন? by ইকতেদার আহমেদ

ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকেরা নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাভূত করে বাংলার মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে তাদের শাসনের সূচনা করে। সিরাজউদ্দৌলার শাসনকার্য বাংলার বাইরে বিহার ও উড়িষ্যা অবধি বিস্তৃত ছিল। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে লর্ড ক্লাইভের ইংরেজ বাহিনীর নিকট সিরাজউদ্দৌলার পতন হওয়ার পর দিল্লি ইংরেজদের দখলে আসতে ১০০ বছর লেগে যায়। এরপর ভারতবর্ষে ইংরেজদের শাসনের স্থায়িত্ব ছিল ৯০ বছর।
ভারতবর্ষের বাংলা, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মহিশুর প্রভৃতি অঞ্চল ইংরেজদের দখলে আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত মুসলমানদের শাসনাধীন ছিল। ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের আগমনের আগ থেকে প্রায় এক হাজার বছর ধরে এ উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমানেরা পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ভিত্তিতে বসবাস করে আসছিল। ভারতবর্ষ মুসলমানদের শাসনাধীন থাকাবস্থায় এখানে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা সংঘটনের কোনো নজির নেই। তাছাড়া মুসলিম শাসকেরা তাদের এক হাজার বছরের শাসনামলে এ দেশের হিন্দুদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেছেন, এমন একটি উদাহরণও নেই।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকেরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম শাসকদের পরাভূত করে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের কারণে তারা প্রথম থেকেই মুসলমানদের বৈরী দৃষ্টিতে দেখতে থাকেন। এ সুযোগে হিন্দুরা ইংরেজদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পায়। এভাবে প্রথম থেকেই হিন্দুরা ইংরেজদের নৈকট্য লাভ করায় তারা চাকরি, ব্যবসায় ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যায়। সে সময় মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের অপপ্রচারের কারণে মুসলমানেরা ইংরেজি শিক্ষায় অনীহা ছিল। এ অনীহার কারণেই হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানেরা যে পিছিয়ে পড়েছিল তা অনুধাবন করতে মুসলমান নেতাদের অনেক সময় লেগে যায়।
ব্রিটিশ ভারতে বাংলা একটি পৃথক প্রদেশ ছিল। সে সময় বাংলা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হলেও এর পশ্চিমাংশের কয়েকটি জেলায় হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা চাকরি, ব্যবসায় ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকার কারণে এদেরকে এ তিনটি ক্ষেত্রে হিন্দুদের সমপর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য ব্রিটিশরা ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাকে বিভাজনপূর্বক পূর্ব বাংলা ও আসাম সমন্বয়ে একটি পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করেন। পশ্চিম ও পূর্ব বাংলার হিন্দুরা বাংলার বিভাজনকে এ অঞ্চলে তাদের স্বার্থের প্রতিপন্ন মনে করে শুরু থেকেই এ বিভাজন রদে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। বিভাজন রদের এ আন্দোলনে হিন্দুরা নেতৃস্থানীয়ের ভূমিকায় পায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। বাংলার বিভাজনে রবীন্দ্রনাথের পৈতৃক জমিদারির প্রায় শতভাগ পূর্ব বাংলায় থাকায় তার বিবেচনায় তা তার পরিবারের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য খুবই হানিকর ছিল। তাই বিভাজনের বছর ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে ও অভিমানে বাংলার অখণ্ডতাকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য রবীন্দ্রনাথ তার ঐতিহাসিক গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালো বাসি’ রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বাধীন বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলন ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে সফলতা পায়। এর ফলে বাংলা পুনঃঅবিভক্ত আকার লাভ করে।
বঙ্গভঙ্গ রদ পূর্ব বাংলার মুসলমান নেতৃবৃন্দকে মর্মাহত ও ব্যথিত করে। সুচতুর ইংরেজরা রদ-পরবর্তী মুসলমানদের ক্ষোভ প্রশমনে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে তা প্রথমেই সমগ্র বাংলার হিন্দু নেতৃস্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে। ইংরেজরা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে গেলে যথারীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়ে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে এটি যাত্রা শুরু করে। রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে হিন্দু সম্প্রদায় ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা-পরবর্তীতে দেখা গেল শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত বেশির ভাগই হিন্দুধর্মাবলম্বী এবং ছাত্রদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশও একই ধর্মাবলম্বী। সুদূর অতীত থেকে হিন্দু ও মুসলিম- এ দু’টি ধর্মে বিভক্ত বাঙালিরা একটি একক জাতি হিসেবে বাংলায় বসবাস করে আসছিল। বাংলায় বসবাসরত বাঙালিরা পৃথক দু’টি ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাদের ধর্মীয় অনুশাসনে ভিন্নতা থাকলেও তা তাদের ভাষা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ম্লান করেনি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজদের বিজয় হলে যুদ্ধ-পরবর্তী ভারতবর্ষের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে স্বাধীনতার দাবি ওঠে। এ স্বাধীনতার দাবিটি দিন গড়িয়ে জোরালো হতে থাকলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে অক্ষশক্তির (জার্মান, ইতালি ও জাপান) কাছে মিত্রশক্তি (য্ক্তুরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স) মার খেতে থাকলে ব্রিটিশরা যুদ্ধে এদেশীয়দের সহায়তার বিনিময়ে স্বাধীনতার আশ্বাস দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজদের বিজয় ঘটলে এ দেশের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ স্বাধীনতার দাবিতে আবারো সোচ্চার হয়। সে সময় এ দেশে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের একটি হলো হিন্দু প্রাধান্য-বিশিষ্ট কংগ্রেস এবং অপরটি মুসলিম প্রাধান্য-বিশিষ্ট মুসলিম লীগ। কংগ্রেস প্রথম থেকেই হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় সমন্বয়ে অবিভক্ত স্বাধীন ভারতের দাবি করে আসছিল। অপর দিকে মুসলিম লীগের দাবি ছিল, যেসব প্রদেশে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব প্রদেশ সমন্বয়ে এক বা একাধিক পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হবে। উভয় দলের দাবি-পাল্টা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে প্রথম যে প্রস্তাব দেয়া হয় তাতে বলা হয়, ভারতবর্ষ একটি ডমিনিয়ন হবে, যা সম্পূর্ণরূপে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। ব্রিটিশদের এ প্রস্তাবটি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে তারা দ্বিতীয় প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসে। এ প্রস্তাবটিতে বলা হয় ভারতবর্ষের পূর্ব, মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশগুলোর সমন্বয়ে এ, বি ও সি- এ তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ফেডারেল কাঠামোর অধীন একটি কনফেডারেশন হবে। এ প্রস্তাবটিও যখন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয় তখন শেষ অবধি ইংরেজরা হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল সমন্বয়ে দু’টি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নেয়। তা ছাড়া কিছু কিছু মহারাজা ও রাজা-শাসিত অঞ্চলকে তারা মহারাজা বা রাজার ইচ্ছানুযায়ী ভারত বা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার স্বাধীনতা দেয়।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভারতবর্ষের ছয়টি প্রদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এ ছয়টি প্রদেশ হলো বাংলা, পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ; যার বর্তমান নাম খাইবার পোখতুন খোয়া ও কাশ্মির।
স্বাধীনতার আগের বছর বাংলা ও পাঞ্জাবে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এ দাঙ্গা পরবর্তীকালে বিহার ও দিল্লিতেও ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা ও পাঞ্জাবে দাঙ্গায় বহু নিরীহ হিন্দু ও মুসলমান নরনারীর মৃত্যু ঘটে। এ সংখ্যাটি ছিল প্রায় ছয় লাখ। বাংলা ও পাঞ্জাবের দাঙ্গায় ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে কংগ্রেসের হিন্দু নেতৃবৃন্দ দাবি উত্থাপন করেন, হিন্দু ও মুসলমান- এ দু’টি ধর্মাবলম্বীদের ভিত্তিতে দু’টি পৃথক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা তারা মেনে নেবেন, যদি একই ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে বাংলা ও পাঞ্জাবকে বিভাজন করা হয়। উভয় সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহতা ইংরেজদেরও বিচলিত করে তুলেছিল এবং শেষ অবধি তারা কংগ্রেসের দাবি মেনে নিয়ে বাংলা ও পাঞ্জাবের বিভাজনে সম্মত হন।
ভারতবর্ষ বিভাগের অব্যবহিত আগে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এদের তিনজনের কলকাতা পৌর করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালনেরও সুযোগ ঘটেছিল। ইতিহাসের নির্মম পরিহাস ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে যখন বাংলাকে বিভাজন করা হয় তখন এর বিরোধিতা আসে হিন্দুদের মধ্য থেকে। অতঃপর ভারতবর্ষ বিভাজনের সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হিসেবে যখন অবিভক্ত বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে চলে তখন হিন্দু নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাকে বিভাজিত করে পূর্ব বাংলা পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পশ্চিম বাংলা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া পূর্ব পাকিস্তান তার রজতজয়ন্তীতে পৌঁছানোর আগেই জাতিগত জাতিসত্তার ভিত্তিতে পৃথক হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ‘বাংলাদেশ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আলাপ আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে হলেও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের পৃথক হওয়া শান্তিপূর্ণ ছিল না।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষ বিভাজনের সময় পেছনের মূল দর্শন ছিল ধর্মীয় জাতিসত্তা। কিন্তু পাকিস্তান ভেঙে যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হয় তখন তাতে জাতিগত জাতিসত্তার প্রভাব ছিল মুখ্য। ভারতের পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সম্প্রতি কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, জাতি হিসেবে উভয় বাংলার বাঙালিরা এক, ধর্ম তাদের শুধু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে পৃথক করেছে কিন্তু তাতে বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে কোনো ধরনের বিভেদের সৃষ্টি হয়নি। তার এ বক্তব্যের পর এক মাস না পেরোতেই তিনি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক নেতারা। তার বাংলাদেশে অবস্থানকালীন পশ্চিম বাংলার চিত্রনায়ক দেব এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গৌতম আবেগাপ্লুত হয়ে দুই বাংলা একীভূত হওয়ার দাবি তোলেন। তাদের এ দাবির ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলেও বাংলাদেশের জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, ভারতের পশ্চিম বাংলার শতকরা ৯০ ভাগের অধিক অধিবাসী বাঙালি বিধায় তাদের সাথে তাদের রাজ্যের লাগোয়া ভারতের অন্যান্য রাজ্য যেমন বিহার, উড়িষ্যা, আসাম প্রভৃতির অধিবাসীদের জাতিগত জাতিসত্তা ভিন্ন হওয়ার কারণে ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সভ্যতা সম্পূর্ণ আলাদা। এ কথাটি সত্য, ভারতবর্ষ বিভাজনের পর তিন যুগ পার হওয়ার আগেই প্রমাণিত হলো যে, ধর্মীয় জাতিসত্তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’টি পৃথক জাতিকে এক রাখতে পারে না। আর এ কারণে দেখা যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও পৃথক জাতিসত্তার কারণে তারা ধর্মীয় নয় জাতিগত জাতিসত্তার ভিত্তিতে স্বাধীন দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অধিবাসীদের ধর্ম ও ভাষা এক হওয়া সত্ত্বেও জাতিগত জাতিসত্তার ভিন্নতায় তারা পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র।
ভারতের পশ্চিম বাংলার চিত্রনায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তথাকার মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উভয় বাংলা একীভূত হওয়ার যে দাবি উত্থাপন করেন তাতে জনমতের প্রতিফলনে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থন রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পশ্চিম বাংলার বাঙালি এবং বাংলাদেশের বাঙালিরা যে বাংলা ভাষাভাষী একই জাতি এ প্রশ্নে কোনো বিতর্ক নেই। ধর্মীয় জাতিসত্তা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করতে না পারায় এ কথাটি সত্য যে, শুধু ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে দু’টি জাতিকে এক রাষ্ট্রভুক্ত করে রাখা যায় না। পশ্চিম বাংলার বাঙালিরা জাতিগত জাতিসত্তা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আজ উভয় বাংলা একীভূত করে এপার বাংলা ওপার বাংলার যে অবসান ঘটাতে চাচ্ছেন তাকে বাস্তবরূপ দিতে গেলে পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের স্বভূমি থেকেই দিল্লিকে তাদের চাওয়ার কথা জানিয়ে দিতে হবে। আর নিজ ভূমিতে এ বিষয়ে চুপচাপ থেকে পরভূমিতে এসে এ ধরনের কথা বলা নিছক ধূম্র্রজাল সৃষ্টির মাধ্যমে সাময়িক নিজেদের অসাম্প্রদায়িক দেখানোর প্রচেষ্টা বৈ অন্য কিছু নয়।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান ও
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.