আদালতে যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া by মঈন উদ্দিন খান

গ্রেফতারি পরোয়ানা সত্ত্বেও আদালতে যাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া নয়া দিগন্তকে স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে যাবেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। গুলশান কার্যালয়ে পুলিশি কড়াকড়ির কারণে তারা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে পারেননি বলে জানান তিনি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আগামীকাল বুধবার বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজির হওয়ার তারিখ রয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ দু’টি মামলায় বকশিবাজারের বিশেষ আদালতে হাজির না হওয়ায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর পর থেকে খালেদা জিয়াকে কখন গ্রেফতার করা হবে, বা আদৌ গ্রেফতার করা হবে কি না তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। সরকার বলছে, রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার কোনো সিদ্ধান্ত তাদের নেই। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় এ বিষয়টি এখন আদালতের নির্দেশেই সামনের দিকে এগোবে।
সরকারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গুলশান কার্যালয়ে প্রায় দুই মাস ধরে অবস্থান করে ক্রমাগত হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের ভেতরে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। তারা চাইছে খালেদা জিয়াকে যেকোনোভাবেই কার্যালয় থেকে বের করতে। সরকার মনে করছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় এখন খালেদা জিয়া আর ওই কার্যালয়ে বেশিদিন অবস্থান করতে পারবেন না। আগামীকাল আদালতে হাজির না হলে আইনি কায়দায়ই ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রেফতারি পরোয়ানার পাশাপাশি গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সে হিসেবে যেকোনো সময় ওই কার্যালয়ে তল্লাশিও চালাতে পারে পুলিশ।
গুলশান কার্যালয় সূত্রেও জানা গেছে, অবরোধ-হরতাল অব্যাহত থাকায় খালেদা জিয়া আদালতে যাচ্ছেন না। আদালতে হাজির না হলে পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা নিয়েও চিন্তিত নন বেগম জিয়া।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেছেন, ‘নি¤œ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা দিয়েছি। এ মামলার বিচারক পরিবর্তনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আমরা আবেদন করেছি। আগামী ৫ মার্চ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে যে পর্যন্ত না এ আবেদনের নিষ্পত্তি হবে তত দিন নি¤œ আদালতে মামলা শুরু করা ঠিক হবে না। সুপ্রিম কোর্টে যে বিষয়টি মুলতবি রয়েছে, সে বিষয়ে নি¤œ আদালত মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীকাল ৪ মার্চ নি¤œ আদালতকে এ বিষয়টি অবহিত করব। আমরা বলব, বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সংগঠন তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা এখানে বেআইনি। আশা করি, এ সময়ের মধ্যে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করবে না।’
জানা গেছে, আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে সরকারের অবস্থান বুঝে সতর্ক পদক্ষেপে এগোচ্ছে বিএনপি। সঙ্কট নিরসনে সরকারের ‘বাহ্যিক’ নির্বিকার অবস্থা আমলে এনে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছে কৌশলী ভূমিকা। তৃণমূলে ‘যত দিন প্রয়োজন’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন অসহযোগে রূপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার আগে খালেদা জিয়া নিজেই এ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকার আন্দোলন থামাতে বেশ কিছু কৌশল নিয়েছে। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা তাদের কৌশলের চূড়ান্ত অংশ। পাশাপাশি সরকার মনে করছে, দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় বিএনপি নিজে থেকেই কর্মসূচির ইতি টানবে। অথবা আন্দোলনের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে নেতাকর্মীদের কান্ত করে তুলে কর্মসূচি-বিমুখ করা হবে।
নেতারা বলেছেন, সরকারের এই অবস্থান বিবেচনায় এনেই ২০ দল আন্দোলন কর্মসূচি স্থিরভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আপাতত হরতাল-অবরোধেই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। আর খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে পাল্টে যাবে আন্দোলনের ধরন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গ্রেফতার নিয়ে ন্যূনতম চিন্তিত নন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তার নির্দেশনা দলের সব পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আন্দোলন জোরদার করতে গত কয়েক দিনে ৫০টি জেলার নেতাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার নির্দেশনা পাওয়ার পর সারা দেশে আন্দোলনের গতি বেড়ে গেছে। এর মাত্রা দিনকে দিন আরো বাড়বে বলে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকে ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চলছে। শুক্র-শনি বাদ দিয়ে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল চলছে পাঁচ সপ্তাহ ধরে।
গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো পথ বিএনপির সামনে খোলা নেই। সংলাপ হোক, আর যাই হোক সরকারকে শিগগিরই নতি স্বীকার করতেই হবে।
এ দিকে আন্দোলন কর্মসূচির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিএনপি নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির কাছে খবর রয়েছে, শিগগিরই জাতিসঙ্ঘ থেকে ‘কার্যকর’ একটি বার্তা আসবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করও গুরুত্বপূর্ণ ‘বার্তা’ সরকারকে দিয়ে যাবেন, এমন কথাও বলা হচ্ছে বিএনপির তরফ থেকে।

No comments

Powered by Blogger.