কতদিন এমপি থাকবেন লতিফ? by কাজী সোহাগ

মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও সংসদ সদস্য হিসেবে এখনও বহাল আছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। হজ ও মহানবী (সা.)কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ধর্মপ্রাণ মানুষের ক্ষোভের কারণ হওয়া সাবেক এই মন্ত্রী কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিআইপি কেবিনে চিকিৎসাধীন। দল ও সরকারের তরফে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও তার এমপি পদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত দৃশ্যত উদ্যোগ দেখা যায়নি। সূত্র জানায়, এ বিষয়ে সুরাহা পেতে লতিফ সিদ্দিকী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন কিনা এজন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। দলের কয়েক সদস্য বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকীকে পদত্যাগ করতে বার্তা দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তার স্পষ্ট মনোভাব জানা যায়নি। হয়তো তিনি কিছু দিন সময় নিয়েছেন। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। আগামী মাসে দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে। একই সঙ্গে সরকারও পা রাখবে দুই বছরে। তাই পরবর্তী সংসদ অধিবেশনের আগেই তার এমপি পদে থাকা না থাকার বিষয়ে ফয়সালা করার চেষ্টা চলছে। এদিকে মন্ত্রিসভা ও দলীয় পদ থেকে তাকে সরানোর তথ্য স্পিকারকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্পিকার সংসদের গত অধিবেশনে নিয়ম অনুযায়ী তা এমপিদের অবহিত করেন। এ প্রসঙ্গে সরকার দলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও হুইপ আতিকুর রহমান আতিক মানবজমিনকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা সংসদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। তাই হয়তো বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ সচিবালয় বা স্পিকারকে জানানো হয়নি। এটা বাধ্যতামূলকও নয়। এদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানিয়েছে, লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগে রাজি না হলে এমপি পদ থেকে তাকে সরাতে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। তখন মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারকে জানানো হবে। পরে স্পিকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি ইচ্ছা করলে নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি পাঠাতে পারেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, সংসদ সদস্য পদ থেকে কাউকে অপসারণের ক্ষমতা স্পিকারের হাতে নেই। এ কারণে বিষয়টির সুরাহা করতে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। সংবিধানে উল্লিখিত যে সব কারণে সদস্যপদ শূন্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে তা সরাসরি প্রযোজ্য নয়। তিনি পদত্যাগ করেননি বা দলের বিপক্ষে ভোট দেননি। দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে সংবিধানে কিছু বলা নেই। এর আগে লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আইনে যা আছে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত রয়েছে ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে কোন বিতর্ক দেখা দিলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। সংসদ সচিবালয়ের সচিব বনাম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মামলার রায়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই সিদ্ধান্ত দেয়। ১৯৯৯ সালের ২৯শে জুলাই এ দেয়া হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল মূল রায় লেখেন। এ মামলায় রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন তৎকালীন এটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের নির্বাচনে বিএনপি থেকে জয়ী হয়েছিলেন হাসিবুর রহমান স্বপন এবং ড. আলাউদ্দিন। বিরোধী দলের সংসদ সদস্য হওয়ার পরও তারা সরকারে যোগ দেন। মন্ত্রিসভায়ও তারা স্থান লাভ করেন। তাদের সংসদ সদস্য পদ খারিজের জন্য তৎকালীন বিরোধী দলের উপনেতা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন স্পিকারকে চিঠি লেখেন। কিন্তু স্পিকার ওই চিঠিতে সাড়া না দিয়ে তাদের সংসদ সদস্য পদ বহাল রাখেন। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। তাদের সদস্য পদও খারিজ হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাদের সিদ্ধান্তে বলেছিল, ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়টি একান্তভাবেই নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত এবং স্পিকারের কোন সাংবিধানিক কর্তৃত্ব নেই তা ফয়সালা করার। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, সপ্তম সংসদে আদালতের নির্দেশে স্পিকার দু’জন সংসদ সদস্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ইসির কাছে পাঠান। ইসি ওই দু’জনের সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। এদিকে উল্টো নজিরও রয়েছে। দল থেকে বহিষ্কারের পর সংসদ সদস্য পদ ছিল বেশ কয়েক নেতার। অষ্টম সংসদে রাজশাহী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সদস্য আবু হেনার সদস্যপদ বহাল ছিল। একই ভাবে নবম সংসদে সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সদস্য গোলাম রেজাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও সদস্যপদ বহাল থাকে।

No comments

Powered by Blogger.