সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না -নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান

শেলা নদীতে ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কার থেকে ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। গতকাল দুপুরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, এতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না।’ মন্ত্রী বলেন, তেলের কারণে সুন্দরবনে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। ডলফিনেরও ক্ষতি হবে না। তেল বনের ভেতর বিস্তৃত হয়নি। খালের মুখে জাল দিয়ে বাধা দেয়ায় তেল বনে ঢুকতে পারেনি। ভাসমান তেল চলে যাচ্ছে, তাছাড়া স্থানীয়রা তেল উঠিয়ে নেয়ায় আস্তে আস্তে তেলের প্রভাব কমছে। শাজাহান খান বলেন, ‘রেঞ্জটির নৌরুট সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় মংলা বন্দরে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পণ্য ওঠানামা করতে সমস্যা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দুর্ঘটনার দিন বিকালে জানতে পারি। এ কারণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারিনি।’
শাজাহান খান বলেন, নৌ দুর্ঘটনার পরে আমাদের কোন উদাসীনতা ছিল না। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট আমাদের নেই। একটি মাত্র জাহাজ আছে তা চট্টগ্রাম থেকে আনা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৬০০০ লিটার তেল সংগ্রহ করা হয়েছে। যা ৩০ টাকা লিটার হিসেবে পদ্মা অয়েল কোম্পানি কিনে নিয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ফার্নেস অয়েলে মৎস্য সম্পদ ও সুন্দরবনের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। পেট্রল বা ডিজেল হলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতো। তিনি জানান, দুর্ঘটনার দায়ী এমভি টোটাল নামের ট্যাঙ্কারটিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘশিয়াখালি চ্যানেল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন কাজ চলছে। এটি শেষ হলে পণ্যবাহী সকল জাহাজ এখান থেকে চলাচল করবে। তখন সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী নদী দিয়ে আর কোন জাহাজ চলাচল করবে না। বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জে নৌ রুট বন্ধ করা হবে কিনা সে বিষয়ে সরকার রোববার সিদ্ধান্ত নেবে বলে মন্ত্রী জানান।
স্থানীয় মৎস্যজীবীদের আয় বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দুর্ঘটনাকবলিত তেলবাহী ট্যাঙ্কার সাউদার্ন স্টার ৭-এর মালিক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের শ্যালক কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তিনি তো ব্যবসা করতে পারেন। তার আত্মীয় হওয়া অপরাধের কিছু না। পরিদর্শনকালে মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিমের প্রধান মো. নুরুল করিম, মংলা বন্দরের চেয়ারম্যার কমডোর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, নৌমন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিমের প্রধান যুগ্ম সচিব নূরুন রহমান, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী, পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা, কোস্টগার্ড মংলাস্থ ঘাঁটির সিও ক্যাপ্টেন কাজী মেহেদী মাসুদ প্রমুখ।
এদিকে শুক্রবার দৈনিক মানবজমিনের প্রথম পাতায় ‘বিপর্যয়’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করেছেন ‘এমভি সাউদার্ন স্টার ৭’-এর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারুন অ্যান্ড কোম্পানির অপারেশন ডিরেক্টর মুহাম্মাদ জামিল। গতকাল এক প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেন, ‘নৌযানটি বালির জাহাজ ছিল’ বলে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা অসত্য। এটি ২০০৩ সাল থেকে ওটি আল-মামুন নামে চলছিল। পরে ২০১৩ সালে এর নাম সাউদার্ন স্টার-৭ হয়। এছাড়া জাহাজটি ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত তেল পরিবহন করেনি। বিপর্যয়ের পর মালিক ঘটনাস্থলে যাননি মর্মে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা-ও অসত্য বলে প্রতিবাদলিপিতে দাবি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.