৬২ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, ২২ সন্ত্রাসী নিয়ে সতর্কতা

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিতকরণসহ সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তালিকায় ৩৯২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৬২টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ২২ জন সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে এতে, যাতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কর্মীরাও আছে। এ-সংক্রান্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে নির্বাচনের দিন কী ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে, সেই বিষয়েরও উল্লেখ আছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ২৪টি খুন, পাঁচটি অপহরণ, দ্রুত বিচার আইনে ১১টি ও অস্ত্র আইনে আটটি মামলা হয়েছে। গার্মেন্ট শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে শ্রমিক স্বার্থ-সংক্রান্ত অসন্তোষের কারণে প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। রানা প্লাজা ধসের পর এ অসন্তোষ আরো বেড়েছে। বাম দলের সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র গাজীপুর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়াউল কবির খোকন এবং গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, গাজীপুর শাখার সভাপতি দুলাল হোসেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে শ্রমিক অসন্তোষে ইন্ধন জোগাচ্ছেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হান্নান মিয়া হান্নুর কর্মী-সমর্থকরা অন্যান্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনের দিন বাধা দিতে পারে। একই ভাবে কাশিমপুর বাগানবাড়ি এলাকায় বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের কাজে বাধা দিতে পারেন।
টঙ্গীতে শফি উদ্দিন একাডেমী ও চেরাগ আলী মার্কেট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনের দিন গণ্ডগোলের আশঙ্কা রয়েছে। টঙ্গী, গাছা ও পুবাইল এলাকায়ও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র : প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কাশিমপুর এলাকার মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক শওকত হোসেন সরকারের প্রভাব রয়েছে। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী কবির উদ্দিন বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কর্মের মধ্যে আছে কাশিমপুরের হাতিমারা, কাশিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, গিয়াস উদ্দিন সরকার একাডেমী, আমবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোনাবাড়ী, আমবাগান আইন উদ্দিন দারুল আরকাম দাখিল মাদ্রাসা, বাগাবাড়ী হাক্কানীয়া সালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসা, কাশিমপুর, কোনাবাড়ী পারিজাত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমানুল্লাহ সরকার একাডেমী, এমএ কুদ্দুস উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দপাড়া দারুল আলিম জামিলিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বারবৈকা মাদ্রাসা, ভোগড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাড়িয়ালী নলজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সালনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, সালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সালনা নাসির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, কাথোরা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রোভার পল্লী উচ্চ বিদ্যালয়, ভানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুরা পূর্বপাড়া হোসেনিয়া মাদ্রাসা, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ, হাঁড়িনাল উচ্চ বিদ্যালয়, লাগালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট দেওড়া অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়, ছোট দেওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলমেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খন্দকার রজব আলী বিদ্যানিকেতন, কলমেশ্বর রোকেয়া সরণি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, হাজী আহমদ আলী পাবলিক স্কুল, সাহারা খাতুন আইডিয়াল স্কুল, বাদে কলমেশ্বর মধ্যপাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, মেঘডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুবাইল আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, নন্দীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হারবাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হারবাইদ দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা, তালুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাগাঢ় সূর্যোদয় ক্যাথলিক জুনিয়র হাই স্কুল, পাগাঢ় মো.আলী পাঠান উচ্চ বিদ্যালয়, টঙ্গী আশরাফুল উলুম ইসলামিয়া দখিল মাদ্রাসা, আরিচপুর পূর্বপাড়া হাজী মহিউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া, ন্যাশনাল প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাই স্কুল, মিরাশপাড়া হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শিলমুন আ. হাকিম মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয়, বনমালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টঙ্গী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, দত্তপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রওশন এরশাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মজিদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাজীপুরা আইডিয়াল স্কুল, হাজী কাসিম উদ্দিন কমার্স কলেজ, টঙ্গী সরকারি কলেজ, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী, টঙ্গী বাজার দারুস সুন্নাত কেরামতিয়া মাদ্রাসা, হাজী সৈয়দ শাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সন্ত্রাসী তালিকায় যাদের নাম : গোয়েন্দা প্রতিবেদনে গাজীপুর জেলা যুবদলের কর্মী এবং গাজীপুর সদরের কাথোরা গ্রামের মো. মনির হোসেন খানের নাম রয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর সদরের ট্যাংকির পাড়া গ্রামের পৌর যুবদলের সাবেক সেক্রেটারি মো. মোকলেছুর রহমান, ভুরুলিয়া গ্রামের যুবলীগকর্মী অনিল, ট্যাংকির পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছাত্রদলের আন্নু, সদরের পিলখানা, বারুদার বাসিন্দা যুবদলের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি দুখু মিয়া, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হান্নান মিয়া হান্নু, সদরের উত্তর ছায়াবীথি গ্রামের বাসিন্দা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের পারভেজ জাকারিয়া প্রিন্স, যুবদলের ছোট ইব্রাহিম, সদরের বারুদা গ্রামের বসিন্দা ছাত্রলীগের সাগর, যুবদলের মনির, বিএনপির বাহার উদ্দিন, মো. বিল্লাল হোসেন, টঙ্গীর এরশাদনগরের বাসিন্দা অওয়ামী লীগকর্মী কামরুজ্জামান ওরফে কামু, টঙ্গীর বাসিন্দা বিএনপির শফিউল সরকার (সজীব সরকার), সদরের মধ্যপাড়ার লক্ষণ চন্দ্র দে, টঙ্গীর বিএনপিকর্মী আবদুল খালেক, টঙ্গীর জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম, টঙ্গীর মুনসুর আলী রোডের বিএনপিকর্মী মিজান, টঙ্গীর লেদু মোল্লা রোডের বাসিন্দা টঙ্গী যুবলীগের সভাপতি সাত্তার মোল্লা, টঙ্গীর আরিচপুরের বাসিন্দা বিএনপি কর্মী শামীম, আরিচপুরের আওয়ামী লীগকর্মী রেজাউল ইসলাম অপু এবং কাশিমপুরের বাসিন্দা বিএনপিকর্মী কবির উদ্দিন সরকারের নাম আছে তালিকায়।
জোড়াতালির প্রস্তুতি

No comments

Powered by Blogger.