নিজের ফাঁসি চাইলেন সাকা চৌধুরী-অভিযোগ প্রমাণ না হলে সম্ভব নয় : ট্রাইব্যুনাল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও বিভিন্ন সময় আক্রমণাত্মক ও বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। এবার নিজেই নিজের ফাঁসি চাইলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ রাষ্ট্রপক্ষের জেরার জবাব দিতে গিয়ে একপর্যায়ে তিনি বলেন, 'আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেন।' জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, 'একজন অপরাধী যদি অনুতপ্ত হয়, তাহলে সে বলে, আমি দোষ করেছি, আমাকে শাস্তি দিন। তবে আপনাকে পরিষ্কারভাবে বলি, একাত্তরে আপনি কী করেছেন, তা জানি না। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আপনার মনোবাসনা পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।'
নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ায় সাকা চৌধুরীকে জেরা করে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল এ জেরা শেষ হওয়ায় সাকা চৌধুরীর পক্ষে দ্বিতীয় সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৮ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে।
বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে গতকাল সাকা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপক্ষের জেরার জন্য দিন ধার্য ছিল। তাঁকে জেরা করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। গতকাল জেরা ও সাকা চৌধুরীর জবাব দেওয়া নিয়ে বারবার বিতর্ক হয়েছে ট্রাইব্যুনালে, বিশেষ করে প্রতিটি প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেওয়ার পর 'তবে' শব্দ যোগ করে অনেক বাড়তি কথা বলেছেন সাকা চৌধুরী। আর এই 'তবে' শব্দ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি করায় বিতর্ক হয়।
প্রসিকিউটর বলেন, 'একাত্তর থেকে চুয়াত্তর সাল পর্যন্ত আপনার দেশে না থাকার কথা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বানোয়াট। অভিযোগ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য বারবার অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন।' জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, প্রসিকিউশন যে দাবি করছে, তা সত্য নয়।
প্রসিকিউটর বলেন, 'একাত্তরের ২০ সেপ্টেম্বরে আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে শবেবরাতের রাতে দেশ থেকে পালিয়েছেন। এরপর ১৯৭৪ সালে দেশে ফিরে মামলার ভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন।' রাষ্ট্রপক্ষের এ বক্তব্য সত্য নয় দাবি করে সাকা চৌধুরী বলেন, 'তবে আত্মগোপন অবস্থায় জনরোষ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম থেকে ছয়বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি।' তিনি বলেন, '১৯৭৪ সালে দেশে ফিরে আমার পাসপোর্টসহ যাবতীয় কাগজপত্র-সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট দাখিল করি নাই।'
দোষই করিনি, নির্দোষ দাবি করব কেন : প্রসিকিউটর বলেন, 'আপনি তো আপনার সাক্ষ্যে একবারও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেননি।' জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, 'যেহেতু আমি দেশেই ছিলাম না, সেহেতু নির্দোষ দাবি করার কিছু নেই। আমি যেখানে দোষই করিনি, সেখানে নির্দোষ দাবি করব কেন?'
জেরার একপর্যায়ে সাকা চৌধুরী বলেন, 'আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেন।' এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর বলেন, 'কোনো আসামি বলেছেন আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেন- এ কথা আমার ৩১ বছরের বিচারিক জীবনের কোনো দিন শুনিনি। ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে। এসব মামলায় কোনো আসামিই বলেননি যে, আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেন, আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেন।' ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, 'অন্তত ১০ বছর আগে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম। আসামিদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছিল, একজন অপরাধী যদি অনুতপ্ত হয়, তাহলে সে বলে, আমি দোষ করেছি, আমাকে শাস্তি দিন। তবে আপনাকে পরিষ্কারভাবে বলি, আমি জানি না একাত্তরে আপনি কী করেছেন, সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আপনার মনোবাসনা পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।' এ সময় কাঠগড়ায় থাকা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ৬ জুলাই একটি রায় হবে। ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনে একটি রায় হবে।
ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে : এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাবন্দি জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি পিছিয়েছে। আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ২ নম্বর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৪ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.